এক দফার আন্দোলনে সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ‘রাজপথে নেমে আসা’র ডাক দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘‘আজকে বড় দল-ছোট দল-মাঝারি দল… এটা বড় কথা নয়। বিএনপি নাকি নাগরিক ঐক্য নাকি গণসংহতি আন্দোলন না গণতন্ত্র মঞ্চ… এটা বড় কথা নয়। আমাদের দেশ, আমাদের মানুষ আজকে বিপদগ্রস্ত, বিপন্ন। এদের অস্তিত্বকে রক্ষা করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব নিয়ে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।”
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণতন্ত্রের সংগ্রাম ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ৩১ দফা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
তিনি বলেন, ‘আসুন গণতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আমাদের রাজপথে নেমে পড়বো। যেখান থেকে আমরা উচ্চারণ করবো— আর নয়… এক দফা দাবি… তুমি যাও। এনাফ ইজ এনাফ। এখন দয়া করে ছেড়ে দিয়ে জনগণের একটা রাষ্ট্র, জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের সমাজ তৈরি করবার ব্যবস্থা করে দাও।”
‘অন্যথায় পালাবার পথটা খুঁজে পাবে না… এটা আমি বার বার বলেছি। আসলে পায় না কিন্তু। অতীতে দেখবেন ডিক্টেটররা কিন্তু পালাবার পথ খুঁজে পায় নাই’ হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি মহাসচিব।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আজকে তরুণ যুবকেরা আছেন এই সাকির (জোনায়েদ সাকি) দলে এবং অনেকে আছেন তরুণ যুবক… তারা সামনে এগিয়ে এসেছেন। আমি অন্তরের অন্তস্থল থেকে চাই যে, তারা আরও বিস্তৃত হোক, তাদের সংগঠন আরও বড় হোক, তারা গণমানুষের মধ্যে চলে যাক। মানুষকে তারা জাগিয়ে তুলক। সত্যিকার অর্থে একটা শোষণহীন একটা সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণ করুন… এটা আমি আন্তরিকভাবে চাই।”
‘‘আমি বিশ্বাস করি যে, একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। সেই গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে এখনই সময়, আর একমুহূর্ত দেরি করা যায় না। আজকে সেই সময় এসেছে। আমাদের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।”
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘এই সরকারের গুণকীর্তন করার তো দরকার নেই। আপনি যেকোনও সাধারণ মানুষকে ডেকে নিয়ে বলেন, দেখেন এই সরকারকে সমর্থন করার চিন্তা… ও বলবে যাবে কবে সেটা বলেন। মানুষ আমাদের কাছে সেই প্রশ্ন করে না যে, সরকার এই এই কাজ খারাপ করলো কেন। মানুষ আমাদের কাছে প্রশ্ন করে ভাই যাবে কবে?....।”
জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা জাতীয় গণফ্রন্ট চাই এই সরকারের পদত্যাগ এবং সংসদ বাতিল। কিন্তু আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাকে বিদায় দিতে হবে। সে হাঁটু গেড়ে বসবে এটা মনে করার কোনও কারণ নাই।”
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের মধ্য দিয়ে এই রাষ্ট্রটা নির্মাণ হয়েছে সেই রাষ্ট্র আজকে টিকে থাকবে কিনা সেই রকম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে বর্তমান শাসকরা। আওয়ামী লীগ অবৈধ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখতে গিয়ে বাংলাদেশকে তার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের দিক থেকে আজকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে, হুমকির মধ্যে ফেলেছে।”
‘‘আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে আমাদের রাষ্ট্রটাকে একটা দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে একটা নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। তারা শুধু জনগণের অধিকার হরণ করেছে তাই নয় জনগণের সম্পদ লুট করে এদেশকে দেউলিয়ত্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে পুরো রাষ্ট্রকে তার অস্তিত্বের দিক থেকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে।”
সরকারের পতন ও এদেশকে রক্ষা করার ‘এক বিষয়’ পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে সরকার হটিয়ে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারীর সভাপতিত্বে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবু‘র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, জাসদের নাজমুল হক প্রধান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলে ফয়জুল হাকিম লালা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।