জনগণের বিরুদ্ধে যায় এমন কাজ না করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তাদের আমরাই বসিয়েছি। কিন্তু তারা এমন কিছু কাজ করছেন, যা সম্পর্কে দেশের মানুষ অবগত নয়। আরাকান সীমান্তে করিডরের বিষয়েও জনগণ বা রাজনৈতিক দলগুলোর কোনও মতামত নেওয়া হয়নি।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে সাবেক এটর্নি জেনারেল ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজে মোহাম্মদ আলীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে ৯০ শতাংশ ফ্যাসীবাদের দোসররা বসে রয়েছে। অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘ দিন থাকলে তারা বিভিন্নভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠতে পারে।
বাংলাদেশ একটি অনিশ্চিত অবস্থায় চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভঙ্গুর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একদিকে শেখ হাসিনা পালিয়েছেন। অন্যদিকে আমরা যাদের বসিয়েছি, আশা করেছিলাম, তারা দেশের সংস্কার ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেবেন। কিন্তু তারা এখনও কোনও সুস্পষ্ট রোডম্যাপ নির্ধারণ করতে পারেননি। সরকারের কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তি নতুন নতুন শর্ত আরোপ করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে দেশ কতটা বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে, তা বলে শেষ করা যাবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৬ সালে প্রশাসন, বিচার ও নির্বাচনসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের বিষয়ে আমরাই প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তখন রেইনবো প্রস্তাব দিয়ে জাতিসত্ত্বাকে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার কথা বলেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ২০২২ সালে প্রথমে বিএনপির পক্ষ থেকে দলগতভাবে ২৭ দফা এবং পরে যুগপৎ আন্দোলনের শরীক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ৩১ দফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। অথচ এখন বলা হচ্ছে, আমরা নাকি সংস্কার চাই না। আমরা নাকি ক্ষমতা চাই। হ্যাঁ আমাদের গঠনতন্ত্রের মধ্যেও ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়টি বলা আছে। তবে আমরা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা চাই। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
বিএনপি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল আখ্যায়িত করে ফখরুল বলেন, বিএনপির কাছেই দেশ ও গণতন্ত্র নিরাপদ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের অর্থনীতির কী পরিবর্তন হয়েছে? অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। ব্যাংকিং খাতে কোনও উন্নতি নেই। শক্তিশালী ও দুর্বল সবাইকে একইভাবে মাপা হচ্ছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেক্টরে ভয়াবহ অবস্থা।
আইনজীবীদের তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে কথা বলতে হবে। গণতন্ত্র যেন ব্যাহত না হয়, দেশ যেন ভুল পথে পরিচালিত না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব জানান, আওয়ামী লীগ ৬০ লাখ মিথ্যা মামলা দিয়েছে, ১৭শ’ গুম, ২০ হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে বিনা বিচারে হত্যা করেছে।
প্রয়াত সাবেক এটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি নীতির প্রশ্নে আপোসহীন ছিলেন। যা বলতেন তা করতেন। পেশাদারত্বে ছিলেন দৃঢ়।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, আইনের জগতে কীভাবে যুদ্ধ করতে হয়, তা জানতেন এজে মোহাম্মদ আলী।
তিনি বলেন, অবৈধদের বিরুদ্ধে আমরা লড়েছি, এখনও লড়ছি। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি। সারা দেশে আইনজীবীরা গণতন্ত্রের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, তা জাতি ভুলবে না।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিসস্টরা এখনও বসে আছে; যারা তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার করতে দেয়নি। ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে হবে। ভবিষ্যতে আইনজীবী ফোরামকে মূল্যায়নের দাবি জানান তিনি।