আগামী নির্বাচন দেশকে ধ্বংস করার লাইসেন্স: জোনায়েদ সাকি

আগামী নির্বাচন শুধু শেখ হাসিনার ক্ষমতার নবায়ন নয়, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার লাইসেন্স বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। 

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে হরতালের সমর্থনে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলের পর সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এই নির্বাচন কেবল বয়কট নয়, গণপ্রতিরোধের মাধ্যমে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে আমাদেরই একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। বাংলাদেশের লাখ লাখ শ্রমিক  রফতানি খাত গড়ে তুলেছেন। উদ্যোক্তারা নানান পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে শিল্প গড়ে তুলেছেন। আর এই সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য বাংলাদেশের সব কলকারখানা, মানুষের পেটে লাথি মারার চিন্তা করছে। বাংলাদেশের বাজারকে হুমকির মধ্যে ফেলছে। সুতরাং, আগামী নির্বাচন শুধু শেখ হাসিনার ক্ষমতার নবায়ন নয়, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার লাইসেন্স।’

সাকি বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, একতরফা নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে, বিপর্যস্ত করবে। দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। কারণ, আমরা একতরফা নির্বাচন করলে একটা কূটনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়বো।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল বা পরশু বাংলাদেশের যে দূতাবাস আছে ওয়াশিংটনে, সেখানকার বাণিজ্য মিনিস্টার  সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, আমেরিকার যে নতুন শ্রমিক অধিকারবিষয়ক নীতিমালা, সেটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। এই নীতিমালার আওতায় বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প থেকে শুরু করে আমাদের রফতানি খাত নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়তে পারে।’

দেশের মানুষকে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়ে জোনায়েত সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে তারা (সরকার) বোকা ভাবেন, বিদেশিদেরও তারা বোকা ভাবতে শুরু করেছেন। তারা ভেবেছেন, এভাবে সবার চোখে ধুলো দেওয়া যাবে। বাংলাদেশের সব মানুষ জানে— এমনকি যারা আওয়ামী লীগ করে তারাও জানে যে, এই সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে সর্বোচ্চ প্রতারণা করছে। বাংলাদেশের মানুষকে রাজপথে নামতে হবে। ওই যে গুন্ডাপান্ডা কয়েকটা আছে, তাদের ধাওয়া দিতে হবে।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন,  ‘সরকার যে নির্বাচন করতে যাচ্ছে, আজকে তার মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। আজকে তারা যখন শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা নিচ্ছেন, তখন রাজপথের সব বিরোধী দল এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে, বর্জন করেছে। জনগণ এই সাজানো নির্বাচনকে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে। সরকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দিয়ে অনেক চেষ্টা করেছে বিভিন্ন চাপ-হুমকি-প্রলোভনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন লোককে যুক্ত করাবার জন্য। কিন্তু আপনারা লক্ষ্য করেছেন, রাজনৈতিক দল ও জনগণের সব অংশ কেউ আজকে সরকারের সাজানো ফাঁদে পা দেয়নি। এটা সরকারের বড় রাজনৈতিক পরাজয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বুঝতে পেরেছে এই নির্বাচন টিকবে না। এই নির্বাচন দেশের মানুষ যেমন গ্রহণ করবে না, তেমনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও গ্রহণ করবে না। তারা বুঝতে পেরেছে, এটা ১৪ বা ১৮ সালের মতো না। আরেকটা সাজানো নির্বাচন করে এই সরকার কোনোভাবেই শেষ রক্ষা করতে পারবে না। নৌকা নাকি ডুবতে শুরু করেছে, তলা নাকি ফুটো হয়ে গিয়েছে। নৌকায় যখন পানি ওঠা শুরু করে, তখন কোনওি সচেতন মানুষ ডুবন্ত নৌকায় উঠতে চায় না। এই কারণে এত চাপ-হুমকি-প্রলোভন কত কৌশল, সরকার এবং গোয়েন্দা সংস্থার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। শুধুমাত্র কয়েকজন বর্ণচোরা ছাড়া আর কাউকে নির্বাচনে নেওয়া যায়নি।’  

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন—  জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলর (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুমসহ প্রমুখ।