এনসিপির মূল এজেন্ডা ন্যায়বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) কেবল একটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে না দেখে বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল এজেন্ডা ন্যায়বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন।’

সোমবার (২৪ মার্চ) বিকালে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের সঙ্গে এনসিপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক রোডম্যাপ তিনটি মূল এজেন্ডাকে কেন্দ্র করে— ন্যায়বিচার, সংস্কার এবং একটি গণপরিষদের নির্বাচন, যা পরবর্তী সংসদ হিসেবেও কাজ করবে। এই গণপরিষদ নির্বাচনের অপরিহার্য কারণ বিদ্যমান সংবিধান মৌলিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ। শুধু একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমে আমরা একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করতে পারি।’

গণতন্ত্র দৃঢ়ভাবে নির্মিত হওয়ার বেশ কয়েকটি মাধ্যম উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— ১. গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন, ২. জবাবদিহি এবং বিতরণ ক্ষমতা, ৩. অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি, যেখানে নারী, যুবক, সংখ্যালঘু এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলো সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়, সাইডলাইনে নয়। ৪. একটি মধ্যপন্থি অবস্থান—যা প্রতিটি নাগরিকের জন্য স্থান তৈরি করে।

তিনি তরুণদের শক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এ দেশের তরুণদের বিশেষ করে জেন-জিদের নজিরবিহীন ত্যাগের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থান সফল হয়েছে। গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত দেখেছিল। ছাত্রজনতা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ দেশের জন্য লড়াই করেছেন। এটি ছিল আমাদের সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থানের মধ্যে একটি, যা একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করেছে।’

গাজায় চলমান নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘আমাদের চোখের সামনে মানবিক সংকট উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি—প্রতিটি জাতি, প্রতিটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক শক্তিকে অবশ্যই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে।’

নাহিদ আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বোঝা এখনও এ দেশের মানুষদের বহন করতে হচ্ছে।’ রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘এনসিপি দৃঢ়ভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমরা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক দায়িত্ব এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর নির্মিত একটি সমাজের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে বহুদলীয় গণতন্ত্রে কোনও ফ্যাসিস্ট শক্তি যেন অংশ নিতে না পারে, অন্তর্বর্তী সরকারকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’

আখতার হোসেন আরও বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচন একটি গণপরিষদ নির্বাচন হওয়া উচিত। যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রথমে জাতিকে গণতান্ত্রিক সংবিধান দিয়ে উপস্থাপন করবেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যায়।’

উল্লেখ্য, এনসিপির ইফতারে আর্জেন্টিনা, চীন, ইরান, ডেনমার্ক, স্পেন নরওয়েসহ বেশ কয়েকটি দেশের মিশন প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া তুরস্ক, ফিলিস্তিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, সুইডেন, সিংগাপুর, সাউথ কোরিয়া, জার্মানি, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ড, কসোভো, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, জাপান, শ্রীলঙ্কা, রাশিয়ার মিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।