যমুনা থেকে বাংলামোটর জনসমুদ্রে পরিণত করার ডাক হাসনাতের

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাত ১০টা থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেখানেই মঞ্চ তৈরি করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বাদ জুম্মা যমুনার সামনের ফুয়ারা থেকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হয়ে বাংলামোটর পর্যন্ত সড়ক জনসমুদ্রে পরিণত করার আহ্বান জানিয়েছেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

শুক্রবার (৯ মে) সকালে অবস্থা কর্মসূচি থেকে তিনি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের মানুষকে নেমে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা যেভাবে জনতার কাতারে ৫ আগস্ট নেমে এসেছিলেন, জুলাইয়ে নেমে এসেছিলেন, সেভাবে নেমে আসুন। ফুয়ারার সামনে দিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে বাংলামোটর রাস্তা জনসমুদ্রে পরিণত করবো। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করেই আমরা ঘরে ফিরবো।’

অন্তর্বর্তী সরকার শহীদ এবং আহতদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, ‘এই সরকার থেকে প্রত্যাশা করেছিলাম গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমরা সেটা পাইনি। আমরা সন্দেহ করছি, এই বিচারের কালক্ষেপণের নামে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। অতীতের ন্যায় আওয়ামী লীগ গুপ্ত হামলা চালাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল— অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও প্রধান সংস্কার হবে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা। এখানে বিভিন্ন উপদেষ্টার অনিচ্ছা রয়েছে। আপনারা যদি মনে করেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করবেন, সেটির চেষ্টা হয়েছে বলেই আমরা আবার যমুনার সামনে দাঁড়িয়েছি।’

হাসনাত বলেন, ‘আমরা ড. ইউনূসকে শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই, আর কোনও টালবাহানা চলবে না। আপনি যে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল বলছেন, আওয়ামী লীগ কোনও রাজনৈতিক দল নয়। শেখ মুজিবের সময় ৩০ হাজার জাসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। লুটতরাজের কারণে চুয়াত্তরের বন্যায় ১৪ লাখ মানুষ মারা গেছে। হাসিনা ক্ষমতার আগে লগি বৈঠার আচরণ দেখেছি। লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে বায়তুল মোকারমের সামনে মানুষ হত্যা করতে দেখেছি। দেশপ্রেমিক বিডিআর সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে। শাপলা চত্বরে রাতের অন্ধকারে ইসলাম প্রিয় ভাইদের হত্যা করা হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের হাতে ইতিহাসের স্তরে স্তরে রক্ত লেগে রয়েছে মন্তব্য করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘মোদিবিরোধী আন্দোলনে দেশপ্রেমিক যোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে। জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে আলেম-ওলামাদের হত্যা করা হয়েছে। ইতিহাসের স্তরে স্তরে এই দলটি শুধু মানুষ হত্যা করেছে। সবশেষ ২৪ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। এ শত শত মায়ের বুক খালি করা হয়েছে। ইলেকশনকে কুক্ষিগত করেছে। গণতন্ত্রকে কুক্ষিগত করেছে। এই আওয়ামী লীগকে যে রাজনৈতিক দল মনে করে, তাকে আমরা বাংলাদেশপহ্নী মনে করি না।’

তিনি বলেন, ‘আপনি যদি মনে করেন যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ করে মুলা ঝোলাবেন, তা হতে দেওয়া হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করে নিষিদ্ধ না করা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এখান থেকে সরবো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যমুনার সামনে ফুয়ারাতে মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। আজ বাদ জুম্মা সর্বদলীয়, নানা মত, নানা পথ, ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল, ফ্যাসিবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক শক্তি, এই হাসিনার রাজনৈতিক সংগঠনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিলে আমরা বাড়ি যাবো।’