রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
মঙ্গলবার (১৩ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মরণে সাইফুল হক বলেন, আমাদের জনগণ যে ধরনের অসাধারণ মানুষের জন্ম দিয়েছে, তাদের মধ্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন। আমরা তার জন্য ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি। তার জীবন, তার কর্মকে আমাদের শ্রদ্ধা জানানো উচিত। আমি মনে করি, জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জীবনী পাঠ্যপুস্তকে তুলে ধরা উচিত। আমরা আজকের এই সভা থেকে এই দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, সরকার কোন দিকে হাটছে তা বোঝা যাচ্ছে না। ৯ মাস পর এখনও কেন বিচার, সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হবে? কেন জনগণকে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকতে হবে? এর কারণ উপদেষ্টারা একেক সময় একেক কথা বলছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের প্রতিপক্ষ না, কিন্তু তাদের দূরে সরিয়ে সরকার তাদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলছেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী এই প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারতেন। অনৈক্য থেকে ঐক্য কীভাবে তৈরি করতে হয়, তা তিনি জানতেন।
তিনি আরও বলেন, ৯ মাস পর কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। আমরা একটা সংস্কার চাই। আমরা পুরনো ফ্যাসিবাদী আমলে ফিরে যেতে চাই না। আমি দুইট ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। সরকার প্রতিদিন নতুন নতুন বাক্স খুলছে। এমন বাক্স খুলতে যাচ্ছে— যেগুলোর চাবি তাদের হাতে নেই। মানুষ বলছে, সরকার নাকি খেলতে শুরু করেছে। আমি বলতে চাই, খেলতে খেলতে কিন্তু ফাউল করে। আমরা আশা করবো, সরকার এমন কিছু করবে না।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ভোট শেষ করে দিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। আমরা সুষ্ঠু ভোট চেয়েছিলাম। আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করে, ভোট কবে হবে? ভোট কি হবে? ড. ইউনূস বিদেশ থেকে যারা জ্ঞানী লোক, তাদের নিয়ে এসে দেশ গঠন করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু তারা দেশে ভালো মানুষ পান না। এই ৯ মাসে কি সংস্কার হয়েছে? পুলিশ আগের মতোই আছে। টাকা না ঢাললে জিডি নেয় না, নড়ে না। আগের মতোই কোটি টাকার ডিল হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি প্রথমদিন থেকেই মনে করি, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা উচিত। যতটা অত্যাচার করেছে, তাদের রাজনীতি করার কোনও অধিকার নাই। অনেকে বলছে, আমরা একটা ভালো মানুষ পেয়েছি। এখন রাস্তায় একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, উনি ভালো মানুষ, না দেখে চলে যাচ্ছেন। এটা ভাল মানুষি? বাঁচাতে না গেলে কীসের ভাল মানুষ?
ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, যারা জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করতে চান, তারা সাবধান হয়ে যান। আপনারা চব্বিশে আমাদের সঙ্গে ছিলেন, সেজন্য আপনাদের সাধুবাদ জানাই। কিন্তু ৭১ এর জন্য আপনাদের ক্ষমা চাইতে হবে।
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের দৃষ্টি বিভ্রান্ত করতে ইস্যু তৈরি করতে পারঙ্গম। আবদুল হামিদ রাতের আধারে দেশ ছেড়ে চলে গেলেন, এটা সরকার জানে না, এটা মানি না।
ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে এসময় আরও আরও বক্তব্য রাখেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার প্রমুখ।