ইতিহাসের দায় শোধ করতে পারবেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ?

ফাইনালে অনেক কিছুই নির্ভর করছে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর ওপরলঙ্কানদের বিপক্ষে প্রেমাদাসায় বেঙ্গালুরু কিংবা মিরপুর ভর করেনি মাহমুদউল্লাহর ওপর। মিরপুরে ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে ক্রিজে থেকেও দলকে জেতাতে পারেননি। এরপর ২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ১ রানে হারতে হয়েছিল মাহমুদউল্লাহর ভুলে। ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হলে দারুণ একটি সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে মুশফিকেরও দায় ছিল। একই শট খেলে আউট হওয়ার পর, তারই দেখানো পথে পা বাড়িয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ।

লঙ্কানদের বিপক্ষে লিগ পর্বের প্রথম ম্যাচটিতে ৩৫ বলে ৭২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ইতিহাসের দায় অনেকখানি শোধ করেছেন মুশফিক। এরপর স্বাগতিকদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটিতে বেঙ্গালুরু কিংবা মিরপুরের ইতিহাসকে কিছুটা হলেও ভুলিয়ে দিয়েছেন ১৮ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলা মাহমুদউল্লাহ।

রবিবার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আরও একটি ফাইনালে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।  এর আগে খেলা চারটি ফাইনালে মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠে নেমেছিলেন। প্রতিবারই তাদের সামনে সুযোগ ছিল দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাওয়ার।  কিন্তু একবারও পারেননি। নিদাহাস ট্রফিতে অতিমানবীয় দুটি ইনিংস খেলার পর ফাইনালে ভরসা রাখতে হচ্ছে মাহমদুউল্লাহ ও মুশফিকের ওপরই।

চারটি ফাইনালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি ২০ ওভারের ফাইনাল খেলেছে। সেটা ২০১৬ এশিয়া কাপে, ভারতের বিপক্ষে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর সর্বোচ্চ ৩৩ রানে নির্ধারিত ১৫ ওভারে ১২০ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।  ওই ম্যাচটিতে সাতজন ক্রিকেটার বর্তমান দলে আছেন। ওই ম্যাচে তামিম-মুশফিক-সাকিব ব্যাটিংটা আরও একটু ভালো করতে পারলে স্কোরবোর্ডটা সমৃদ্ধ হতো। রবিবার ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের পরেও সাকিব-তামিমকে ব্যাটিংয়ের গুরুদায়িত্বটা নিতে হবে। এর পাশাপাশি সৌম্য, সাব্বির, লিটনরা মিলে যতটা সম্ভব ভূমিকা রাখলেই ম্যাচটা বাংলাদেশের পক্ষে চলে আসবে। তবে আগের দুই জয়ের মতো ফাইনালেও মুখ্য ভূমিকা মুশফিক-মাহমুদউল্লাহকেই রাখতে হবে!

বাংলাদেশকে ফাইনালে তোলার নায়ক মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ ২০০৯ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালেও ব্যর্থ ছিলেন। মাহমুদউল্লাহ ২৩ রান করলেও মুশফিক খেলেন ৪ রানের ইনিংস। ২০১২ সালেও একই অবস্থা, মুশফিক ১০ রানে আউট হওয়ার পর মাহমুদউল্লাহ ১৭ রানে অপরাজিত থেকেও মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়েন। পাকিস্তানের কাছে দুই রানে হেরে মুশফিক-সাকিব নিজেরা কেঁদেছিলেন, পুরো বাংলাদেশকেও কাঁদিয়েছিলেন। ওই ম্যাচটিতে অবশ্য তামিম ও সাকিব দুর্দান্ত ব্যাটিং করেও জেতাতে পারেননি দলকে।

এর বাইরে এক মাস আগে ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। ম্যাচটিতে মুশফিক ব্যর্থ হলেও মাহমুদউল্লাহ খেলেছিলেন ৭৬ রানের ইনিংস। বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরে যায়।

রবিবারের ফাইনালের আগে ফর্মে থাকা মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর তাই ইতিহাসের দায় মোচন করার সুযোগ। সেই সঙ্গে দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের শেষ দুটি ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা থাকায়, দলের সবাই এই ফাইনালাকে উপলব্ধি করার সুযোগ পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ক্রিকেটাররা চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিয়ে ২২ গজে লড়াতে পারলে নতুন একটা স্বপ্নের বাস্তবায়ন হবে। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহকে। ২০১৬ বিশ্বকাপের পর দুইজনকে নিয়ে হওয়া ট্রলগুলোর জবাবটা খুব ভালো মতো দেওয়ার সুযোগ তাদের সামনে!