সব ফরম্যাটেই উইন্ডিজকে পেছনে ফেলা মোটেই সহজ কাজ নয়

গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।

গত দুমাস ধরে অনেক ক্রিকেট খেলেছে দুটি দলই। আমরা দেশের মাটিতে খেললাম জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সঙ্গে। আর ভারতের পর বাংলাদেশ সফর শেষ করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ঘুরে ফিরে তিনটি ফরম্যাট একের পর এক খেলতে হয়েছে দুদলকে। পেশাদার ক্রিকেটার হলেও একেক হোটেলে থাকা, একেক ভেন্যুতে খেলায় অংশগ্রহণের একটা শারীরিক ক্লান্তি দুই দলকেই প্রায় সমানভাবে স্পর্শ করেছে। তবে দুটি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপক্ষের সঙ্গে সিরিজ শেষে সফলতার আলোকে বাংলাদেশ মানসিকভাবে অনেক উজ্জীবিত ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের তুলনায়। স্বল্প পরিসরের দুই ফরম্যাটে শেষ ম্যাচটি ভাগ্য নির্ধারণী হওয়ায় ক্রিকেট হয়ে উঠেছিলো দারুণ উপভোগ্য।

টি-টোয়েন্টির শেষ ম্যাচটি জিততে পারলে পুরো দল ও ক্রিকেট অনুরাগীরা আনন্দে ভাসতো। টি-টোয়েন্টির বিখ্যাত অনেক তারকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলে উপস্থিত না থাকলেও অবশিষ্ট খেলোয়াড় নিয়ে এই ফরম্যাটে বিশ্বে তারা ভয়ঙ্কর একটি দল। তবে টস জিতে কাল ব্যাট না করে বল করার সিদ্ধান্ত সম্ভবত ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ককেও অবাক করেছে। এত ভালো ব্যাটিং সহায়ক পিচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বড় সংগ্রহের সুযোগ দিয়ে আমরা আমাদের কোন শক্তির প্রদর্শনী দেখাতে চেয়েছি আমি সে ব্যাপারটিতে সন্দিহান। বিশেষ করে ভালো ব্যাটিং সহায়ক পিচে আমাদের বোলাররা কতটা নিখুঁত ভাবে শুকনো বলে শুরুর পাওয়ার প্লে ও ডেথ ওভারে বল করে তা পরখ করে নেওয়া অথবা দ্বিতীয় সেশনে রান যদি দুইশোও হয় তবে আমরা কতটা পরিকল্পিতভাবে সংগ্রহ করতে পারি, যেহেতু দ্বিতীয় ম্যাচে আমরা দারুণ ব্যাটিং শক্তির প্রদর্শনী দেখিয়েছি।

কিন্তু আমরা এক ম্যাচের ব্যাটিং সফলতার উজ্জলতায় ভুলে গেছি যে তামিম ও মুশফিক তাদের সেরা ছন্দে এই ফরম্যাটে ব্যাট করেনি। দ্বিতীয় ম্যাচে আমাদের লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা পিচে এসে একটি বল খেলার সুযোগই পাননি। তাই শেষ ম্যাচে রান তাড়া করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সার্বিকভাবে তাদের উপর নির্ভরশীলতার প্রতিদান চাহিদা মোতাবেক তারা মেটাতে পারবে কিনা তাও ভেবে দেখার ব্যাপার ছিলো। টস হেরেও আজ আমাদের বল করতে হতে পারতো তবে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে টস জিতে বল করার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে একটা বাড়তি চাপের মুখে ফেলে দিয়েছিলাম।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের এমন অসাধারণ শুরুতে অধিকাংশ রান এসেছে সোজা বা লং অফ বা লং অনের উপর ছয় এর মার দিয়ে। অন দ্য রাইজ শটস প্রথমার্ধে খেলা সম্ভব হলেও দ্বিতীয়ার্ধে শিশিরমাখা পিচ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের উচ্চতা ও বোলিং লেন্থ আমাদের ব্যাটসম্যানদের খেলতে দেয়নি। বলের গতি কাজে লাগিয়ে স্কয়ার জোন অথবা তার পেছনের অংশে শট খেলে রান আসলেও যখনই তারা গতির বিপরীতে লং অফ অথবা লং অন এর উপর দিয়ে মারার চেষ্টা করেছেন তা সহজ ক্যাচ হয়ে দৃশ্যমান হয়েছে। স্পিনার অ্যালেনের সঙ্গে আজ পেস বোলার কিমো পল দারুণ বল করেছেন। যথেষ্ট গতি না থাকলেও এই বিচক্ষণ ক্রিকেটার অচিরেই দলের জন্য ক্রমান্বয়ে অনেক সফলতা আনবেন কোনও সন্দেহ নেই।

প্রতিদিন সাকিব ভালো করবেন এর কোন নিশ্চয়তা নেই তবে পরিস্থিতির আলোকে দলনায়ক পিচে এসেই এমন ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলবেন তাও কেউ আশা করে না।

টি-টোয়েন্টি সিরিজে পেস বোলাররা চাহিদা মোতাবেক স্পিনারদের পাশে এসে সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারেনি। বিশেষ করে আমাদের পেস বোলিং ইউনিট অনেক অনভিজ্ঞ। তারা পারদর্শিতা বাড়াতে না পারলে পুরো বোলিং ইউনিট ব্যাটিং ইউনিটের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে না। তেমনটি হতে থাকলে প্রতিপক্ষ কোন একটা পর্যায়ে ম্যাচ বের করে নিয়ে যাবে।

আম্পায়ার তানভীরের একাধিক নো বলের বাজে সিদ্ধান্ত ছিলো দৃষ্টিকটু ও দুঃখজনক। এমনভাবে কেউ ম্যাচ জিততে চায় না। প্রযুক্তির উপর আস্থার ব্যপ্তি আরও বাড়িয়ে ক্রিকেটের বিধিবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্করণ অতি দ্রুত হওয়া উচিত। এই বাজে সিদ্ধান্তটি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বেশি উত্তেজিত করেছিল বলে আমার ধারণা- এর সঠিক ফায়দাটা বরঞ্চ আমরা তুলে নিতে পারিনি। খেলা শেষে এই ফরম্যাটের সেরা দলই জিতেছে- তাদের অভিনন্দন। তবে টেস্ট সিরিজ ও ওয়ানডে সিরিজ জেতার জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন।

শেষ ম্যাচটিতে জয় না পেলেও পুরো সিরিজে আমাদের খেলোয়াড়রা ছিলো ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে উজ্জ্বল। যা দলকে এনে দিয়েছে দুটি সিরিজ জয়ের আনন্দ ও অটুট রেখেছে দলগত আত্মবিশ্বাস।