সিরিজটা এতটাই সহজে পরাজিত হবো ভাবিনি

গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।

একটি ম্যাচ জয়ের আশা আমার মতো অনেকেরই মনের এক কোনায় আনাগোনা করেছে এই ওয়ানডে সিরিজকে ঘিরে। যাত্রার পূর্বক্ষণে সাকিবের ইনজুরি সেই ছোট আশার বুকে সংশয়ের সৃষ্টি করে এবং সিরিজ শুরুর পর আমাদের অভিজ্ঞ ও টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা দেখে অনেকেই বুঝতে পেরেছিলেন-এই সিরিজ জয়ের দেখা নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সম্ভবত হচ্ছে না।

তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ড দল তাদের একাদশ নিয়ে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষাও করলেন এবং দুটি ম্যাচের অভিজ্ঞতাকে সঙ্গে নিয়েও কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমরা করতে পারলাম না। আজ মূলত আমাদের বোলিং ইউনিটকে প্রথমবারের মতো পরীক্ষা দিতে হলো যে তারা কত রানের মধ্যে নিউজিল্যান্ড দলকে বেঁধে রাখতে পারেন। রুবেলের সংযোজনের পরও তা ৩৩০ রানে গিয়ে ঠেকলো। এখানেও নিউজিল্যান্ডের বোলিং ইউনিটের সঙ্গে আমাদের বোলিং শক্তির ফারাকটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠলো। তবে আমাদের টপ অর্ডার এত চরমভাবে ব্যর্থ না হলে আমাদের দলগত সংগ্রহ প্রতিটি ম্যাচেই ২৮০ রানের কাছাকাছি অন্তত থাকতো বলে আমার ধারণা।

আমাদের ব্যাটিংয়ের ব্যর্থতার জবাব খুঁজতে গেলে আজ নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা প্রথম ১৫ ওভার কীভাবে ব্যাট করছে সেই ভিডিওটি পাশাপাশি চালালেই উত্তর পাওয়া যাবে। তাদের সোজা ব্যাটে খেলার প্রবণতা, ব্যাটের ফেস ওপেন করে ডেড ডিফেন্স এবং লুজ বলের সঠিক সাজা প্রদান বলে দেয় যে প্রাপ্ত সুযোগকে কখনো অবহেলা করতে নেই এবং পিচের আচরণ বা অবস্থার আলোকে দলের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনে নিজের স্বাভাবিক খেলার সঙ্গেও আপোষ করে পার্টনারশিপ গড়ার দিকে যত্নশীল হতে হয়।

এত চমৎকার পিচে তামিম ও লিটন দাস যদি একটু সময় নিয়ে থিতু হতে পারতেন তবে আজকের ম্যাচটা জিতে যেতাম বলবো না তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটা আমেজ থাকতো। সাব্বির রহমানের চমৎকার শতরানের ইনিংস বলে দেয়, এই পিচে তামিম বা রিয়াদ থিতু হতে পারলে তারা কতটুকু কাউন্টার অ্যাটাক করার সক্ষমতা দেখাতে পারতেন। তামিমের খুব বেশি উত্তেজনা তাকে এমন অতি আগ্রাসী করে তুলে বলে আমার বিশ্বাস এবং তাতে দল সুফল না পেয়ে বরঞ্চ প্রথমেই ব্যাকফুটে চলে যায়। রিয়াদ আরেকটু সময় নিতে পারতেন। প্রথম ২টি ম্যাচে যখন কোন টার্গেটের চাপ ছাড়াই ২৩২ (প্রথম ম্যাচে ২৩২, দ্বিতীয় ম্যাচে ২২৬) রানের গণ্ডি পেরোতে পারেনি ব্যাটসম্যানরা তখন ইনফর্ম মিঠুন ছাড়া ৩৩১ রানের টার্গেট ব্যাটসম্যানদের মনের ওপর কেমন চাপ প্রয়োগ করেছে তা অনুমেয়। তবে এই সিরিজে প্রায় ২০০ ম্যাচ খেলা ব্যাটসম্যানদের চেয়ে অনভিজ্ঞদের দাপটের সঙ্গে ব্যাটিং উপভোগ্য ছিলো। কাম্য ছিলো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের মাঝের কারো একই সঙ্গে জ্বলে ওঠা। সাব্বির, মিঠুন, সাইফউদ্দিন ও মিরাজ দলের চাহিদা মেটাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। সাব্বির এই পুরো সিরিজে যতটুকু সময় ব্যাট করেছেন তা ছিলো দৃষ্টি নন্দন, ব্যাটের সুইট পার্ট দিয়ে অসাধারণ আক্রমণাত্মক বেশ কিছু শটস তিনি খেলেছেন। নিউজিল্যান্ডের সব বোলারদের উপর তিনি কর্তৃত্ব নিয়ে ব্যাট করেছেন।

নিউজিল্যান্ডে গিয়ে রাতারাতি ভালো ফল করা মুশকিল তবে নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে ব্যাট করতে না পারার যন্ত্রণাটা খেলোয়াড়দের মতো আমরাও অনুভব করছি। একটা ন্যুনতম বিশ্রাম ও অনুশীলন যে কতটা প্রয়োজন ছিলো তা বিসিবির কর্মকর্তারা নিশ্চয়ই অনুভব করছেন। এই হোয়াইটওয়াশের একটা বড় দায় তাদের ওপরেও বর্তায়!