পথচলতি মুহূর্তে বেজে উঠলো ফোন, খবর শুনেই কেঁদে ফেলেন ফিরোজা

ময়মনসিংহের বুড়াপাড়ার নিজের বাসা থেকে পাশেই খালার বাসায় যাচ্ছিলেন তারকা অ্যাথলেট ফিরোজা খাতুন। সকাল ১০টার দিকে হাতের মুঠোফোনটা বেজে উঠলো। অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন রিসিভ করতেই অন্য প্রান্ত থেকে জানালো হলো, ক্রীড়াক্ষেত্রে এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য এবার তিনি মনোনীত হয়েছেন!

চলার পথে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এমন খবর শুনে ফিরোজা কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না; থমকে গেলেন, আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। ৫৫ বছর বয়সী এই অ্যাথলেটের জীবনে দেশসেরা এই পুরস্কার অর্জনের মুহূর্তটা আর দশ জনের যেমন হয়, ফিরোজারও ব্যতিক্রম নয়, কেঁদে ফেলেন তিনি।

১৯৮৭ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দেশের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে রাজত্ব করেছেন ফিরোজা খাতুন। হয়েছিলেন ১০ বার দ্রুততম মানবী। ১০০ মিটার স্প্রিন্ট ছাড়াও ২০০ মিটার ও হাইজাম্পেও ছিল তার সমান পদচারণা। দেশের মাটিতে এক দশকের বেশি দাপটের সঙ্গে খেলার পাশাপাশি দেশের বাইরে ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে রয়েছে একটি পদক। যে কারণে ২০১২ সালের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের পদক হাতে উঠেছিল। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নেন সেই পুরস্কার।

অনুভূতি জানতে চাইলে ফিরোজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুপুরের একটু আগে সচিব পর্যায়ের এক আপা ফোন করে বললেন আমি স্বাধীনতা পদক পুরস্কার পাচ্ছি। শোনামাত্রই কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। আনন্দে চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার পাচ্ছি আমি, এমন খবর শুনে কী যে ভালো লাগছে, তা বলে প্রকাশ করতে পারবো না।’

দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের সর্বোচ্চ স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতা পুরস্কারের প্রচলন শুরু হয় ১৯৭৭ সাল থেকে। প্রথম বছরেই অ্যাথলেট হাবিলদার মোস্তাক এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। গত বছর সাবেক ক্রিকেটার রকিবুল হাসান স্বাধীনতা পদক পুরস্কার পেয়েছিলেন। এ বছর পাচ্ছেন অ্যাথলেট ফিরোজা খাতুন।

খেলোয়াড়ী জীবনের ট্র্যাকে তারকা অ্যাথলেট ফিরোজা খাতুন

এর আগে ক্রীড়াবিদদের মধ্যে প্রথম নারী হিসেবে স্বাধীনতা পদক পেয়েছিলেন প্রয়াত সুলতানা কামাল। দ্বিতীয় নারী হিসেবে এই পুরস্কার পাচ্ছেন ফিরোজা।

১৯৯৬ সালে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড থেকে অবসর নেওয়ার পর অ্যাথলেটিকসের সঙ্গে তিনি আর সেভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন না। অনেক দিন ধরেই ময়মনসিংহে এক মেয়ে নিয়ে অনেকটা নিভৃতেই বাস করছেন। তবে একদম দূরে সরে যাননি। নিজ জেলা ময়মনসিংহ বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন।

দেড় মাস আগে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য অনলাইনে আবেদন করেন। এর জন্য মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফিরোজা ক্রীড়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদক পাওয়ার বিষয়ে ফিরোজা করিম নেলী বেশ সহায়তা করেছেন বলে জানালেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরেই নেলী আপা (মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক) ও আরও অনেকেই এই পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে বলেছিলেন। এরপর আমি আবেদন করেছি। আজ জানলাম পুরস্কার পাচ্ছি।’

তবে ফিরোজা ছাড়াও অনেকেরই আছে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। ফিরোজা মনে করছেন, সবাই এমন পদক পেলে দেশের ক্রীড়াঙ্গন আরও এগিয়ে যাবে, ‘যেকোনও পুরস্কারই সামনে পথ চলতে সুবিধা করে দেয়। আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে যাদের অবদান রয়েছে, তারা সবাই আস্তে আস্তে পুরস্কার পেলে কাজের স্বীকৃতি মিলবে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি যারা যোগ্য, তাদের পুরস্কার পাওয়া উচিত। আমি আবেদন করে পেয়েছি। অনেকে হয়তো আবেদন করেনি।’