কাল দিনের শুরুতে পাকিস্তান মূল্যবান টস জিতলেও দিনের শুরুতেই আম্পায়ার্স কলে নটআউট সিদ্ধান্ত আসায় প্রথম ওভারে একটি নিশ্চিত এলবিডব্লিউ নাকচ হয়ে যায় এবং তারপরই জনি বেয়ারস্টোর দুটো ক্যাচ ফসকে গেলে মনে হচ্ছিল দিনটা বোধহয় ইংল্যান্ডের জন্য শুভ হতে যাচ্ছে। এরপরও নতুন করে ভাগ্য গড়ার লড়াইয়ে পাকিস্তানের সকল খেলোয়াড়দের দল বেধে ম্যাচে ফেরত আসার দৃঢ় প্রত্যয় দেখে ভালো লেগেছে। এই ম্যাচে মোহাম্মদ আমিরের জায়গায় রুম্মান রইস দারুণ বল করেছেন। তরুণ লেগ স্পিনার শাদাব খানকে পুনরায় দলে অন্তর্ভু্ক্ত করে দারুণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে পাকিস্তান দল। ভয়ঙ্কর জো রুটকে আউট করে শাদাব ইংল্যান্ডের ব্যাটিং স্তম্ভকে নাড়িয়ে দেন। এই ম্যাচে লক্ষণীয় ছিল যে দুদিক থেকেই বল পুরানো হওয়ার পাশাপাশি ২৬/২৭ ওভারের পর থেকে বল ব্যাটে আরও মন্থরগতিতে আসছিল।
ভালো টাইমিং করা দুস্কর হওয়ায় এই ম্যাচের শেষ ৩৫ ওভারে মাত্র ৯টি বাউন্ডারি হয়েছে। এমন ছোট মাঠে যদি কোনও ইনিংসে কোনও ৬ এর মার না থাকে সেটা নিশ্চিত করে বল কী গতিতে ব্যাটে আসবে সেটা নিয়ে ব্যাটসম্যানরা দ্বিধায় আছে।
তবে এর সঙ্গে তারিফ করতে হয় অনন্য হাসান আলীসহ বাকি দুই পেস বোলারদেরও। তাদের চমৎকার গতি, ইয়র্কার, রিভার্স সুইং ও স্লোয়ার ডেলিভারিতে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল বিদেশের কোনও অচেনা পিচে তারা ব্যাট করছেন। ওয়ান চেঞ্জ বোলার হিসেবে হাসান ছিলেন এই টুর্নামেন্টের সেরা বোলার। মরগান ও বেন স্টোকস তাদের অভিজ্ঞতা ও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। যে দিন দল সবচেয়ে বেশি তাদের সফলতা কামনা করেছে সেই সেই প্রয়োজনীয় মুহূর্তের মাঝপথে তাদের প্রস্থান পাকিস্তানের এই ম্যাচে দাপট দেখানো নিশ্চিত করেছে। আদিল রশীদকে রান আউট করার ক্ষেত্রে দ্বাদশ খেলোয়াড় শেহজাদের তৎপরতা ছিল তাক লাগানো।
আগেই বলেছি পাকিস্তান দারুণ একটা টস জিতেছে কাল। এই মাঠেই নিউজিল্যান্ড প্রথম ১০ ওভার সুইং ও বাউন্সসহ দারুণ লাইনে বল করে ৪ উইকেট তুলে নিলেও কাল তার ছিটেফোটাও ছিল না ইংল্যান্ডের বোলিংয়ে এবং বরাবরের মতো ফখর জামান দারুণ সুচনা দিলেন আরেকবারের মতো। তার সঙ্গে আজহারও ছিলেন ছন্দে। পাকিস্তানের বড় পাওনা ছিল দ্বিতীয়ার্ধে পিচটি পরিণত হয়েছে আদর্শ ব্যাটিং উইকেটে।
টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট ইংল্যান্ডকে লজ্জাজনকভাবে সেমিফাইনাল থেকে বিশাল ব্যবধানে হেরে বিদায় নিতে হলো। দল যতই শক্তিশালী হোক বা ফর্মে থাকুক, দিন শেষে যে দলটি সেই দিনে সেরা নৈপুণ্য প্রদর্শণ করতে পারবে তারাই অনন্য। যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পাকিস্তানে হচ্ছে না ও ঘরোয়া ক্রিকেট স্থিমিত সেই সময় সবার আগে ফাইনালে প্রথমবার পৌঁছে তাদের সমর্থক ও দেশের ক্রিকেটকে চাঙ্গা করতে বিশাল ভূমিকা রাখল।
আজ আমাদের বহু কাঙ্ক্ষিত সেমিফাইনাল খেলা। এজবাস্টনের এই পিচ দুই অর্ধেই ব্যাটিং সহায়ক হবে বলে ধারণা করছি। দ্বিতীয়ার্ধে ব্যাটসম্যানদের পক্ষে হয় একটু বেশি সহায়ক হবে। আমরা রান চেজ করার সুযোগ পেলে ভালো এবং আগে বল করলে বোলারদের সামর্থ্যের প্রমাণ দেওয়ার একটা বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে এটাও সত্য।
আমি ব্যক্তিগতভাবে সাব্বিরকে শেষ সুযোগটি ৩ নম্বরে দিতে আগ্রহী। যেন ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে এই জায়গায় অন্য কাউকে নিয়ে নতুন করে ভাবা যায়। ইমরুল এলে আমরা একটা ভালো ফিল্ডার হারাব এবং প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ৪ জনই বাঁহাতি বলে ইন্ডিয়ান বোলারদের একই লাইনে বল করতে সহায়ক হবে।
বাস্তবতার আলোকে পিছিয়ে থেকেই এই ম্যাচ শুরু করব আমরা। তবে প্রত্যেকেই যদি সচেতন থেকে উদ্ভুত পরিস্থিতির আলোকে নিজের সেরাটা এই ম্যাচে ঢেলে দিতে পারি, শুধুমাত্র তখনই দারুণ এক চ্যালেঞ্জের সামনে ভারতকে দাঁড় করাতে পারব। দলের সবার প্রতি রইল শুভকামনা।