সুযোগ নষ্টের খেসারত দিল বাংলাদেশ

গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকরুণ নায়ার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ট্রিপল সেঞ্চুরি করার পরও জায়গা পাননি প্রথম একাদশে। এতে করে ভারতের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের কাছে এই বার্তা পৌঁছে গেছে যে, প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগানোই দল ও খেলোয়াড়দের জন্য মঙ্গলজনক।

ভারতীয় দলের একাদশের কম্বিনেশন বলে দেয় বিরাট কোহলি বাংলাদেশের উদীয়মান বোলারদের বিপক্ষে তার ছয় ব্যাটসম্যানের ওপরই ভরসা রেখেছেন। একই সঙ্গে তিন পেসার ও দুই স্পিনার নিয়ে বোলিং বিভাগকে সাজিয়েছেন যথেষ্ট কার্যকরভাবে। প্রথম দিন শেষে ব্যাটসম্যানরা নিজেদের প্রমাণ দিয়েছেন। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে গোটা দিনটা নিজেদের করে নিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। বাস্তবতার আলোকে এমন কিছু করার ক্ষমতা যে তাদের আছে, সেটা তো গোটা ক্রিকেট বিশ্বেরই জানা।

তবে ভারতের প্রথম ইনিংসের ১০ উইকেট নেওয়ার পথে কিন্তু চাপে ফেলতে পারতো বাংলাদেশ। যদিও সেটা পারেনি। ক্যাচ মিসে ভেস্তে গেছে সব। প্রথম সেশনে স্লিপে সাকিব এবং পরে মমিনুল ক্যাচটা নিতে পারলে চাপ তৈরি করা যেত ভারতের ওপর। মুলারি বিজয়ের রান আউট মিসটাও অবিশ্বাস্য লেগেছে। ফিল্ডিংয়ে আকাঙ্খিত উন্নতিটা হলে প্রথম সেশনটা তাই হতে পারতো আমাদেরই। ব্যর্থতার বিপরীতে ওভাবে ব্যাটসম্যানদের পরাস্ত করে দুটি আউটের সম্ভাবনা তৈরিটাও ছিল কৃতিত্বের। তবে স্লিপে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়মিত কাউকে গড়ে তুলতে না পারাটা দুঃখজনক।

নতুন সিমার ও স্পিনারদের নিয়ে গড়া আমাদের বোলাররা যে ভারতীয় ব্যাট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, তা একরকম জানাই ছিল। দিনের শেষ স্পেলটি ছাড়া তাসকিন আহমেদের জায়গাটা ভালোই ছিল। তবে কামরুল ইসলাম রাব্বি ছিল ছন্দহীন, খাটো লেন্থ ও বাজে লাইনে বোলিং করেছে।

দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার পুরো ফায়দা নিয়েছেন কোহলি ও আজিঙ্কা রাহানে। নতুন বল নেওয়ার আগে পুরনো বলে স্পিনাররা কিছুটা হলেও রান ধরে রাখতে পেরেছিল। স্কোর এগোলেও রান এগোচ্ছিল ধীর গতিতে। কিন্তু নতুন বল পাওয়ার পর কোহলি-রাহানে হয়ে ওঠেন ভয়ঙ্কর। শেষ ১০ ওভারে তারা তুলেছেন ৭১ রান।

স্পিন আক্রমণে তাইজুল ইসলাম ভিন্নতা না পেলেও রানের গতি ধরে রেখেছিলেন। একই সঙ্গে দারুণ বোলিংয়ে সমীহ আদায় করে নিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে। কোহলিও বেশ ভুলেছেন বাঁহাতি এই স্পিনারের বিপক্ষে। তবে সাকিবের বিষয়টা একটু অন্যরকম। নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকেই দেখছি সাকিবের লম্বা স্পেলে বল করার আগ্রহটা একটু কম। হতে পারে বোলিংটা ঠিক উপভোগ করছেন না তিনি। দিন শেষে তার নামের পাশে কোনও উইকেট না থাকাটা নিশ্চিতভাবেই দুশ্চিন্তা বাড়াবে মুশফিকের মনে। এমন এক ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচে যেখানে সাকিব তার দুর্দান্ত বোলিং দিয়ে বোলিং বিভাগের আক্রমণকে শানিত করবেন, সেখানে দিন শেষে তার নামের পাশে ১৩ ওভার একদমই বেমানান।

আগামীকাল (শুক্রবার) ভারতকে কত রানে আটকানো যাবে, এই চিন্তা বাদ দিয়ে ভাবতে হচ্ছে এখন অন্যকিছু। পরিস্থিতি এখন এমন যে, ভারত কত দূর গিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে, সেই অপেক্ষাতেই থাকতে হচ্ছে। তবে দিনের প্রথম ১০ ওভারের মধ্যে যদি ক্রিজে থাকা দুই ব্যাটসম্যানকে (কোহলি-রাহানে) আউট করা যায়, শুধু তখনই কেবল নিজেদের উজ্জীবিত করার মত একটা উপলক্ষ পাবেন খেলোয়াড়রা। তা না হলে দিনের শেষ ভাগে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ভারতীয় বোলিংয়ের মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের।

অল্প কিছু বাইরের বল ছেড়ে না দিয়ে শটস খেলার প্রবণতা ও রান আউটের সুযোগ বাদ দিলে ভারতের চেতশ্বর পূজারা ও মুরালি বিজয়ের ব্যাটিং ছিল দেখার মতো। দীর্ঘ পরিসরের টেস্ট ক্রিকেটে ঝুঁকিহীন শটগুলো ছিল উপভোগ্য। কোহলির গ্রাউন্ড শটের টাইমিং ও প্লেসমেন্ট অতুলনীয়। রাহানের যোগ্য সমর্থণ বলে দেয় কেন অধিনায়ক তার প্রতি এতটা আস্থাশীল।

রাতের বিশ্রামের পর নতুন উদ্যোমে, নতুন লক্ষ্য নিয়ে আগামীকাল (শুক্রবার) বাংলাদেশ এই ম্যাচে ফিরে আসার জন্য মাঠে তাদের সেরাটা দিয়ে লড়ছে, সেই দৃশ্য দেখার প্রত্যাশায় থাকলাম।

/কেআর/