শুরুটা ১৯৯৮ সালে। আইসিসি নকআউট ট্রফি নামে শুরু করা এই প্রতিযোগিতাটিই পরবর্তী সময়ে আরও রঙ-রূপ যোগ করে এখনকার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। জুনে উঠবে অষ্টম আসরের পর্দা। আগের সাত আসর কেমন ছিল, কার ঘরে উঠেছিল ‘মিনি বিশ্বকাপ’ খ্যাত এ প্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠত্ব- ইংল্যান্ডের আসর শুরুর আগে ফিরে দেখা যাক না একবার। ‘বাংলা ট্রিবিউন’-এর এই বিশেষ আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে থাকছে ২০০০ সালের আইসিসি নকআউট ট্রফি নিয়ে-
খেলতে না পারলেও ১৯৯৮ সালের আইসিসি নকআউট ট্রফির উদ্বোধনী আসর সফলভাবে আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ। ২০০০ সালে প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় আসরে তাদের জায়গা হয়েছিল শীর্ষ সহযোগী দেশ হিসেবে। কিন্তু বাছাইপর্বের পরীক্ষায় পাস করতে পারেনি বাংলাদেশ, যাওয়া হয়নি মূল পর্বে।
২০০০ সালের আইসিসি নকআউট ট্রফি শুরু হয়েছিল ৩ অক্টোবর, আয়োজক ছিল কেনিয়া। সব ম্যাচ হয়েছে দেশটির রাজধানী নাইরোবির জিমখানা ক্লাব গ্রাউন্ডে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের বাছাই অনুযায়ী নকআউট পর্বে সরাসরি জায়গা পেয়েছিল শীর্ষ ৫ দল। আর র্যাংকিংয়ের নিচের ৬ দলকে খেলতে হয়েছিল প্রিকোয়ার্টার ফাইনাল। ফাইনাল হয়েছিল ১৫ অক্টোবর, যে ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত।
প্রিকোয়ার্টার ফাইনাল: আয়োজক হিসেবে এ আসরে কেনিয়া খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। কিন্তু তাদেরও দিতে হয়েছিল বাছাইয়ের পরীক্ষা। সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের সঙ্গে জায়গা হয়েছিল বাংলাদেশের। র্যাংকিংয়ের শেষের ৬ দলের মধ্যে থাকায় তাদের খেলতে হয়েছিল প্রিকোয়ার্টার ফাইনাল। যেখানে বাকি চার দল ছিল ভারত, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড।
১৯৯৯ সালে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপেই পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বাজিমাত করা বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ হয় ইংল্যান্ডের কাছে হেরে। জাভেদ ওমরের অপরাজিত হাফসেঞ্চুরিতে বড় স্কোরের আভাস দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয় ছাড়া আর কারও কাছ থেকে তিনি উপযুক্ত সঙ্গ পান নি। পঞ্চম উইকেটে জাভেদের সঙ্গে ৬৪ রানের জুটি গড়া দুর্জয় ৪৬ রান করে ফিরে আসেন। ৬৩ রানের দারুণ এক ইনিংস এসেছিল জাভেদের ব্যাট থেকে।
২৩৩ রানের লক্ষ্যে পৌঁছাতে তেমন সমস্যা হয় নি ইংল্যান্ডের। ৩৭ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের জয় পায় নাসের হুসেইনের দল।
প্রথম ম্যাচে যুবরাজ সিংয়ের ৮০ বলে ৮৪ রানের ইনিংসের সুবাদে ভারত ২০ রানে হারায় তখনকার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে। দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়াসিম আকরামের সুইং ও আজহার মেহমুদের পেসে বিভ্রান্ত শ্রীলঙ্কা গুটিয়ে যায় ১৯৪ রানে। সাঈদ আনোয়ারের (১০৫) সেঞ্চুরিতে ১ উইকেট হারিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় পাকিস্তানিরা।
তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে নিউজিল্যান্ড ৬৪ রানে হারিয়ে দেয় জিম্বাবুয়েকে। আর শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা।
সেমিফাইনাল: শেষ চারে উঠলেও ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি হয় নি। তাই উপমহাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা ফাইনালে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ের আশায় ছিল। কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হয় নি। সাঈদ আনোয়ারের (১০৪) টানা সেঞ্চুরির পরও পাকিস্তান ৪ উইকেটে হেরে যায় নিউজিল্যান্ডের কাছে। তাই প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনও প্রতিযোগিতার ফাইনালে ওঠে কিউইরা।
অন্য সেমিফাইনালে অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর অপরাজিত ১৪১ রানের ওপরে ভর করে ভারত ৯৫ রানে হারিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
সেরা ও সর্বোচ্চ: এ আসরে দলীয় সর্বোচ্চ রান ছিল ভারতের, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমিফাইনালে ৬ উইকেটে ২৯৫ রান।
সেরা ব্যাটসম্যান হয়েছিলেন সৌরভ। দুটি সেঞ্চুরি ও একটি হাফসেঞ্চুরি সহ ৪ ম্যাচে ৩৪৮ রান করেছিলেন ভারত অধিনায়ক। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসও ছিল ‘প্রিন্স অব কলকাতা’র, সেমিফাইনালে অপরাজিত ১৪১ রানের।
সর্বোচ্চ উইকেট ছিল ভারতের ভেঙ্কটেশ প্রসাদের। ৪ ম্যাচে তিনি নিয়েছিলেন ৮ উইকেট। আর সেরা বোলিং ছিল নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি পেসার শেন ও’কনরের, পাকিস্তানের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ৪৬ রানে ৫ উইকেট।
এএআর/