১৯৯২ সালের পর প্রথমবার আইসিসির ওয়ানডে টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলো পাকিস্তান। সেবার বিশ্বকাপে শিরোপা জিতেছিল ইমরান খানের পাকিস্তান। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ব্যাট হাতে ফখর জামান, এর পর বোলিংয়ে মোহাম্মদ আমির। দুইজনের পারফরম্যান্সের কাছে হার মানতে হয়েছে ভারতকে। ফখরের সেঞ্চুরিতে ৪ উইকেটে ৩৩৮ রান করা পাকিস্তান আমিরের কল্যাণে ছিল বোলিংয়েও দুর্দান্ত। ৬ রানে ২ উইকেট হারানো ভারত ৬ উইকেট হারায় ৭২ রানে। আর অলআউট হয় ১৫৮ রানে।
পাকিস্তানের শক্তিশালী বোলিংয়ের মুখোমুখি হয়ে শুরু থেকে বিপদে পড়ে ভারত। আমির তাদের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দাঁড়াতে দেননি। এ বাঁহাতি পেসার তুলে নেন ভারতের প্রথম তিন উইকেট। ৩৩ রানের মধ্যে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি ও শিখর ধাওয়ানকে সাজঘরে পাঠান আমির।
ইনিংসের তৃতীয় বলে আমিরের এলবিডব্লিউর শিকার রোহিত। রানের খাতা না খুলে বিদায় নেন ভারতীয় ওপেনার। পাকিস্তানের ছুড়ে দেওয়া ৩৩৯ রানের লক্ষ্যে এটা ছিল ভারতের বড় হোঁচট। এখানেই শুরু। আমির তার দ্বিতীয় ওভারেই কোহলিকে বানান শাদাব খানের ক্যাচ। আগের বলেই জীবন পাওয়া ভারতীয় অধিনায়ক ৫ রানে আউট হন। নিজের পঞ্চম ওভারে ভারতের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান ধাওয়ানকে ২২ রানে সরফরাজ আহমেদের ক্যাচ বানান আমির।
৭২ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ভারতকে কিছুটা এগিয়ে নেন পান্ডিয়া। কিন্তু জাদেজার সঙ্গে শতরানের জুটির ইঙ্গিত দিয়েও ব্যর্থ হন তিনি। ননস্ট্রাইকিং থেকে দৌড়াতে গিয়ে রানআউট হন পান্ডিয়া। এর পর একে একে জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও জাশপ্রীত বুমরাহ আউট হন। ৩১তম ওভারের তৃতীয় বলে হাসান আলীর শিকার হন বুমরাহ, জয়ের উল্লাসে মাতে পাকিস্তান।
৬ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন আমির। আর হাসানও সমান উইকেট নেন ৬.৩ ওভারে ১৯ রান দিয়ে। শাদাব পান ২টি। ১টি নেন জুনাইদ খান।
আগে ব্যাট করতে নেমে ফখরের সঙ্গে আজহার আলী ও মোহাম্মদ হাফিজের প্রশংসনীয় ব্যাটিং পাকিস্তানকে স্বস্তি এনে দেয়। তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছান ফখর। আর হাফসেঞ্চুরি করেন আজহার ও হাফিজ। একটুর জন্য পঞ্চাশ ছোঁয়া হয়নি বাবর আজমের।
আজহার ও ফখরের ব্যাটিং নৈপুণ্যের পর বাবর রানের গতি ধরে রেখেছিলেন। হাফসেঞ্চুরির খুব কাছাকাছি ছিলেন তিনি। কিন্তু কেদার যাদব তার দ্বিতীয় ওভারে বাবরকে ৪৬ রানে সাজঘরে পাঠান। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তান হারায় চতুর্থ উইকেট। এর পর দেখেশুনে খেলেছেন ইমাদ ওয়াসিম ও হাফিজ। ৭.৩ ওভারে তারা ৭১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। হাফিজ অপরাজিত ছিলেন ৫৭ রানে, ৩৭ বল খেলেন তিনি।
তবে সবচেয়ে বড় অবদান ফখরের। ৩ রানে ক্রিজ ছেড়েও ফিরেছিলেন তিনি। তার ব্যাট ছুঁয়ে বল চলে গিয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির গ্লাভসে। নিশ্চিত আউট জেনে প্রায় মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন এ ওপেনার। কিন্তু আম্পায়াররা থামাল তাকে, রিভিউয়ে দেখা গেল বল করার সময় বোলিং লাইনের বাইরে পা রেখেছেন বুমরাহ। আম্পায়ার নো বলের সঙ্কেত দিলেন। জীবন পেলেন ফখর, আর ওই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেললেন। টানা তৃতীয় হাফসেঞ্চুরিকে প্রথমবার তিন অঙ্কের ঘরে নিয়ে গেলেন। এর পর হলেন আউট। ততক্ষণে শক্ত অবস্থানে পাকিস্তান।
মালিককে মাঠে জায়গা দেওয়ার আগে ৯২ বলে ১২ চার ও ২ ছয়ে প্রথম ওয়ানডে শতক পান ফখর। ১০৬ বলে ১১৪ রানে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে রবীন্দ্র জাদেজার ক্যাচ হন তিনি। ১২ চারের সঙ্গে ৩টি ছয়ে সাজানো তার ইনিংস।
এর আগে উদ্বোধনী জুটিতে ১২৮ রান করেন ফখর ও আজহার। তাদের ব্যাটিং নৈপুণ্যে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বেশ স্বস্তিতে ছিল পাকিস্তান। তবে নিজের ভুলের মাশুল দিয়ে আজহার ক্রিজ ছেড়ে চলে যান।
৬১ বলে হাফসেঞ্চুরি করা আজহার থেমেছেন ৫৯ রানে। ২৩তম ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের শেষ বলে স্ট্রাইকিং প্রান্ত থেকে একটি রান নিতে যান তিনি। কিন্তু স্কয়ার লেগে বুমরাহর হাতে বল দেখে অন্য দিক থেকে দৌড় দেননি ফখর। খুব সহজে মহেন্দ্র সিং ধোনি রানআউট করেন আজহারকে। ভাঙে শতাধিক রানের উদ্বোধনী জুটি।
ফাইনালের ম্যাচসেরা হয়েছেন ফখর। আর সিরিজের সেরা হাসান আলী। সবচেয়ে বেশি উইকেটশিকারির পুরস্কার গোল্ডেন বলও জিতেছেন এ পাকিস্তানি পেসার। আর শীর্ষ ব্যাটসম্যান হয়ে গোল্ডেন ব্যাট উঠেছে শিখর ধাওয়ানের হাতে।
ম্যাচসেরা- ফখর জামান
সিরিজসেরা- হাসান আলী
সেরা ব্যাটসম্যান- শিখর ধাওয়ান (৫ ম্যাচে ৩৩৮)
সেরা বোলার- হাসান আলী (৫ ম্যাচে ১৩ উইকেট)
/এফএইচএম/