দুবাই যেন একখণ্ড বাংলাদেশ

গ্যালারিতে সবুজের ছড়াছড়িহুট করেই দুবাই শহর চলে গেছে বাংলাদেশিদের দখলে! পাঠকরা কি চমকে উঠলেন? না, বাংলাদেশ দুবাই দখল করেনি। তবে এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশকে সমর্থন জানাতে স্টেডিয়াম পাড়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঢল নেমেছে। এ যেন দুবাইয়ে একখণ্ড বাংলাদেশ!

স্টেডিয়ামের আসনগুলোর বেশির ভাগই বাংলাদেশি সমর্থকদের দখলে। তাদের গগন বিদারী চিৎকার দুবাইয়ের আকাশে-বাতাসে ভিন্ন সুর তৈরি হচ্ছে। ম্যাচ শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগেই স্টেডিয়ামের আশেপাশের রাস্তাগুলো প্রবাসী বাংলাদেশি সমর্থকদের দখলেই ছিল। এই মুহূর্তে গ্যালারিও বাংলাদেশ থেকে আসা সমর্থকদের দখলে।

২৫ হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের খেলা দেখতে এসেছেন দুবাই ও আবুধাবি থেকে। কেউ এসেছেন আজমান থেকে, কেউ বা আলাইন থেকে। সবার উদ্দেশ্য প্রিয় দলকে মাঠে বসে সমর্থন জানানো। প্রিয় দলের খেলা দেখতে কিছু সমর্থক বাংলাদেশ থেকেও এসেছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন ও রয়েল বেঙ্গল টাইগার্স সাপোর্টার্সের ব্যানারে ২০-৩০ জনের একটি দল মাঠে বসে টাইগারদের সমর্থন জানাচ্ছেন।

গ্যালারিতে ঢুকছেন বাংলাদেশের দর্শকরাকেউ আবার বাংলাদেশের ম্যাচ স্টেডিয়ামে বসে দেখতে না পেরে মন খারাপ করে আছেন। তাদেরই একজন খালেদ লতিফ, তিনি পেশায় ট্যাক্সিচালক। প্রায় ১০ বছর ধরে দুবাইয়ে আছেন। বর্তমানে সরকার নিয়ন্ত্রিত টান্সপোর্ট কর্পোরেশনের আন্ডারে ট্যাক্সি চালাচ্ছেন। ছুটি পাননি বলে খেলা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না প্রবাসী এই বাংলাদেশি।

খালেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘আমাদের তো সাপ্তাহিক ছুটিই নেই। বছরে দুই মাসের ছুটি ছাড়া আমরা কোনও ছুটি ভোগ করতে পারি না। এ কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের খেলা মাঠে বসে দেখতে পারছি না।’

খালেদ লতিফের মতো দুর্ভাগ্যের শিকার হননি দুবাইয়ের পাশের শহর শারজা থেকে আসা প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি গ্রুপ। নিজেদের প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি নিয়ে দুবাইতে এসেছেন তারা। প্রত্যেকের হাতেই জাতীয় পতাকা, টাইগারদের রেপ্লিকা, নানা ঢঙয়ের প্ল্যাকার্ড। এ যেন মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের সামনের চত্বর। স্টেডিয়ামের গেট দিয়ে ঢোকার সময় সবার মুখেই শ্লোগান ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’। প্রচণ্ড গরমে যেন বিন্দুমাত্র ক্লান্তি নেই তাদের।

বাংলাদেশকে সমর্থন জানাতে হাজির তারাএই গ্রুপের একজন শফিক, তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ম্যাচ দেখার জন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে অনেক আগে থেকেই ছুটির আবেদন করেছি। ছুটি পেয়েছি বলে সবাই একসঙ্গে খেলা দেখতে এসেছি। আমরা তো দেশে খেলা দেখার সুযোগ পাই না। তাই এই সুযোগটা হারাতে চাইনি। আশা করি বাংলাদেশ এশিয়া কাপে ভালো করবে।’

পুরানো দুবাইয়ে হোটেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আহম্মেদ রুবেল। তিনি পরিবার নিয়েই এখানে থাকেন। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ম্যাচ দেখতে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে মাঠে এসেছেন তিনি। তার বিশ্বাস এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ফাইনাল খেলবে।

শ্রীলঙ্কা শুরুতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিলেও গ্যালারিতে বাংলাদেশি সমর্থকরা দলকে উজ্জীবিত করার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাদের বিশ্বাস ম্যাচটি জিতবে বাংলাদেশ।