বিংশ শতাব্দীর শেষ ক্রিকেটারের বিদায়

বিদায়ী ম্যাচ শেষে সতীর্থদের কাঁধে রঙ্গনা হেরাথশুরু যেখানে, শেষটাও ঠিক সেখানে। গল টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা রঙ্গনা হেরাথ সেখানেই বিদায় চিহ্ন এঁকে দিলেন শুক্রবার। বিংশ শতাব্দীর শেষ সদস্য হিসেবে অবসরে গেলেন এই স্পিনার।

শুরুটা ১৯৯৯ সালে হলেও ক্রিকেট বিশ্বে হেরাথের ‘জন্ম’ আসলে ২০০৯ সালে। ইংল্যান্ডে লিগ খেলার সময় হঠাৎই দলে ডাক পেয়ে নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন যে, এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। শুক্রবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি সিরিজের প্রথম টেস্টে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলার সময় জানিয়েছেন, ‘কোনও আক্ষেপ নেই তার’। তবে মুত্তিয়া মুরালিধরনের যুগে জন্ম নেওয়ার আক্ষেপ ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় ধরেই তাড়িয়ে বেড়িয়েছে তাকে। কিংবদন্তি এই স্পিনার দলে থাকায় হেরাথকে বিবেচনায় বাইরে রাখা হয়েছে বেশিরভাগ সময়। যে কারণেই ৩১ বছর বয়সে এসে স্থায়ী হন দলে, মুরালিধনের অবসরের পর।   

অবশ্য বিদায়বেলায় তার আক্ষেপ না থাকারই কথা। নিজের সেরাটা দিয়ে শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়লেন তিনি। সামনে তাকালে দেখতে পাবেন, টেস্ট ক্রিকেটে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হিসেবে জ্বলজ্বল করছে তার নাম।

নিজের আলাদা একটা পরিচয়ও বানিয়ে ফেলেছিলেন তিনি- ‘চতুর্থ ইনিংসের বোলার’। অন্য ইনিংসে তার পারফরম্যান্স যেমনই হোক, চতুর্থ ইনিংসে বল হাতে নিলে প্রতিপক্ষ শিবিরে ছড়িয়েছেন ভয়। শ্রীলঙ্কার অনেক ম্যাচ আছে, যেখানে তার বোলিং জাদুতে হয় হার ঠেকেছে, নয়তো অবিশ্বাস্য জয়ে আনন্দে মেতেছে।

মুরালিধরনের বিদায়ে লঙ্কানদের স্পিন আক্রমণে তৈরি হওয়া অভাব তিনি মিটিয়েছিলেন দারুণভাবে। ৯৩ টেস্টে ৪০ বছর বয়সী স্পিনারের ৪৩৩ উইকেট সেটারই প্রমাণ দেয়। ২০১৫ সালে ওয়ানডে ও পরের বছর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর টেস্ট থেকে তার অবসরে চলে যাওয়াটা শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে আবার তৈরি করলো ‘শূন্যতা’।

যদিও হেরাথ মনে করেন, ‘চলে যাওয়ার এটাই সঠিক সময়।’ তাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গল টেস্ট ২১১ রানে হারের পরও বিদায়টা ঠিকমতো রাঙিয়ে নিতে না পারার হতাশা নেই তার। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘হার কখনোই ভালো অনুভূতির নয়, তারপরও এটা খেলারই অংশ। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করেছি, যেটা সবসময়ই করি। আশা করছি ছেলেরা দ্বিতীয় ও তৃতীয় টেস্টে শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াবে।’

বিদায়বেলায় তৃপ্ত হেরাথের কণ্ঠে প্রকাশ পেল কৃতজ্ঞতাও, ‘এটা আবেগপ্রবণ পরিস্থিতি, যদিও প্রত্যেকে নিজের সিদ্ধান্ত সঠিক সময়েই নিয়ে থাকে। এই বছরগুলোতে যারা আমার সঙ্গে খেলেছে, আমার পেছনে ছিল, তাদের সবাইকে- বিশেষ করে আমার সতীর্থ, শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের প্রত্যেককে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়লেও ঘরোয়া ক্রিকেট দিয়ে ২২ গজে আরও কিছুদিন থাকার ইচ্ছা তার। যদিও এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেননি এই স্পিনার। আপাতত ব্যাংকের পুরনো চাকরিতে মনোযোগ দিতে চান হেরাথ। উইকেট বাদ দিয়ে এখন অন্য হিসাব কষার পালা!