ব্যাট হাতে বদলে যাওয়া হ্যাপি

জাতীয় লিগে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের পুরস্কার হাতে হ্যাপিদক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল মুর্শেদা আক্তার হ্যাপির। প্রোটিয়াদের মাটিতে তিনটি ম্যাচ খেললেও রান করতে পারেননি। ব্যর্থতার কারণে ছিটকে যান জাতীয় দল থেকে। এরপরই তার বদলে যাওয়া শুরু। ধীরে ধীরে ব্যাট হাতে সাফল্য পাচ্ছেন তিনি। সদ্যসমাপ্ত মেয়েদের জাতীয় ক্রিকেট লিগে হ্যাপিই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। একটি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফসেঞ্চুরি সহ তার রান ৪১৪।

জাতীয় লিগে সিলেটকে প্রতিনিধিত্ব করা হ্যাপি একটুর জন্য দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পাননি। ময়মনসিংহের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার দুই দিন পর বরিশালের বিপক্ষেও তিন অঙ্কের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু ‘ম্যাজিক ফিগার’ স্পর্শ করতে পারেননি, আউট হয়ে যান ৯৪ রানে।

তবে সেজন্য হতাশ নন হ্যাপি। দলকে শিরোপা এনে দিয়ে তিনি দারুণ খুশি। বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘আরেকটা সেঞ্চুরি হলে ভালো হতো। তবে দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, আর তাতেই আমি খুশি। জাতীয় লিগে যেভাবে রান করেছি, ভবিষ্যতে সেভাবেই রান করতে চাই।’

গত বছরের মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তিনটি ওয়ানডেতে রান ছিল ১, ৫ ও ১। অথচ এবারের জাতীয় লিগে তার দুর্দান্ত সাফল্য। এর রহস্য কী? হ্যাপি জানালেন, ‘আসলে আমার মানসিকতায় বদল এসেছে। নিজেকে বুঝিয়েছি, আমি পারবো। আমার বেসিকে কোনও সমস্যা ছিল না। শুধু পাওয়ার হিটিংয়ে জোর দেওয়ার পাশাপাশি শটের সংখ্যা বাড়িয়েছি।’ গত বছর ব্যর্থ হলেও ভবিষ্যতে প্রোটিয়াদের মাটিতে সাফল্যের স্বপ্ন দেখেন তিনি, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যর্থ হলেও এখন আমার স্বপ্ন প্রোটিয়াদের মাটিতে সেঞ্চুরি করা। যেন সবাইকে দেখিয়ে দিতে পারি আমি সব জায়গায় ব্যাট করতে পারি।’

কুষ্টিয়া থেকে বিকেএসপিতে ট্রায়ালে এসে টিকে যান ক্রিকেটে। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসা, ‘ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলায় আমার ভীষণ আগ্রহ, বিশেষ করে ক্রিকেটের প্রতি আলাদা টান অনুভব করতাম। বড় ভাইদের সঙ্গে খেলতাম, বল কুড়িয়ে এনে দিতাম। পুকুরে বল পড়লে ঝাঁপিয়ে সেখান থেকে বল নিয়ে আসতাম। ২০১২ সালে বিকেএসপিতে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ক্রিকেটে প্রকৃত দীক্ষা শুরু।’

বিকেএসপির তিন শিক্ষকের প্রতি তিনি বিশেষ কৃতজ্ঞ, ‘বিকেএসপিতে ভর্তির পর দোয়ালি ম্যাডামের কাছে ক্রিকেট শেখা শুরু করি। এখন ফাতেমা ম্যাডাম ও মেহেদী স্যার আমাকে নিয়ে অনেক পরিশ্রম করছেন।’

উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হ্যাপির ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না। প্রতিবেশী আর আত্মীয়-স্বজনরা বাঁকা চোখে দেখেছে তার ক্রিকেটপ্রেমকে। তিনি বললেন, “মেয়ে হওয়ার কারণে আমার ওপরে অনেক চাপ ছিল। প্রতিবেশী আর আত্মীয়রা আমাকে কিছু না বললেও মাকে অনেক কিছু বলতো। আমি অবশ্য মাকে বলতাম, ‘আমাকে ঠিক জায়গায় পৌঁছাতে দাও, এক সময় তারাই আমাকে নিয়ে গর্ব করবে।’ আর এখন তো পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।”