২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল একই গ্রুপে। মিরপুরে দিবারাত্রির ম্যাচে মুখোমুখি দুই দল। খেলা শুরু হয় বেলা আড়াইটায়, আর শেষ বিকেল ৫টার দিকে। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৫৮ রানে বাংলাদেশ অলআউট, ইনিংসের ব্যাপ্তি মাত্র ১৮.৫ ওভার।
সেদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাত্র তিন জন বোলার বল করেছিলেন, আর তারাই শেষ করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি ও কেমার রোচের শিকার ছিল তিনটি করে, সুলেমান বেনের চারটি। জুনায়েদ সিদ্দিকী (২৫) আর মোহাম্মদ আশরাফুল (১১) ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি। ৫৯ রানের লক্ষ্যে পৌঁছাতে ক্যারিবিয়ানরা শুধু ডেভন স্মিথকে হারিয়েছিল। ক্রিস গেইলের ৩৬ বলে ৩৭ রানের ঝড়ো ইনিংসে ১২.২ ওভারেই খেলা শেষ।
বিশ্বকাপে অন্য দুই লড়াইয়েও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে পাত্তা পায়নি বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালে হেরেছিল ৭ উইকেটে, ২০০৭ সালে ৯৯ রানে। ২০০৩ বিশ্বকাপের ম্যাচটি অবশ্য পরিত্যক্ত হয়েছিল বৃষ্টিতে। কিন্তু দগদগে ক্ষতের মতো মিরপুরের সেই ম্যাচ যন্ত্রণায় বিদ্ধ করেছে বাংলাদেশকে।
সেদিনের যন্ত্রণার ক্ষতে আজ অনেকখানি সান্ত্বনার প্রলেপ। শুধু সান্ত্বনাই নয়, মিরপুরে লজ্জাজনক হারের প্রতিশোধ নিলো বাংলাদেশ। সেদিনের দুঃখজনক অধ্যায় আজ টন্টনে বিজয়গাথার কাছে ম্লান।
লক্ষ্য ছিল কঠিন, ৩২২। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান (৩২৭) তাড়া করে জয়ের রেকর্ডের কাছাকাছি। কিন্তু সাকিবের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে জয় পেতে সমস্যা হয়নি। তামিম-সৌম্যর ৫২ রানের উদ্বোধনী জুটির ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আরেকটি স্মরণীয় ইনিংস খেললেন ওয়ানডের সেরা অলরাউন্ডার। সঙ্গে পেলেন এই বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে নামা লিটন দাসকে। লিটনের অবদানও বিশাল। একটুর জন্য সেঞ্চুরি না পেলেও অপরাজিত ৯৪ রানে সাকিবকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন তিনি। দুজনের ১৮৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে মাত্র ৪১.৩ ওভারে লক্ষ্য অর্জিত।
এবারের বিশ্বকাপের শুরু থেকেই সাকিবের ব্যাটে রানের বন্যা। প্রথম দুই ম্যাচে ৭৫ আর ৬৪ রানের পথ ধরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছেন ১২১ রান, পেয়েছেন বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বৃষ্টিতে খেলা হয়নি। ৯ দিন পর মাঠে নেমে আবার সাকিবের ব্যাটে ‘ম্যাজিক ফিগার’। ৯৯ বলে অপরাজিত ১২৪ রানের অসাধারণ ইনিংসে রচিত আরেকটি স্মরণীয় জয়। ‘সাকিবের ভালো পারফরম্যান্স মানেই বাংলাদেশের জয়’—বহুবার উচ্চারিত কথাটি আরও একবার প্রমাণিত সমারসেট কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে।