এই লজ্জাজনক হারের দায় কার কতটুকু?

c54ca63323076388509d326956b31e05-5bde80f06cd24ম্যাচ শেষে অধিকাংশ মানুষই মতামত দিবেন যে, আমাদের ভঙ্গুর ব্যাটিংই এই লজ্জাজনক হারের জন্য দায়ী। কথাটা মোটেও মিথ্যা নয়। ব্যাটসম্যানদেরই এর দায় স্বীকার করে নিতে হবে এবং ভবিষ্যতেও এমন ধরনের পিচে ভালো বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে অনেকটা একই পারফরম্যান্স হবে। সুইং বলের বিপক্ষে আমাদের ব্যাটিং স্কিলের ঘাটতি আছে যেমন সত্য, তেমনই পৃথিবীর বড় ব্যাটসম্যানরা যাদের স্কিলে ঘাটতি কম তারাও ভালো লাইন ও লেন্থের সুইং বলে বিব্রত বোধ করে। তবে তারা সেই সময়টিতে পিচে টিকে থাকার জন্য মরণপণ সংগ্রাম করে যায় এবং প্রতিকূল অবস্থা থেকে দলকে অনুকূল অবস্থায় নিয়ে যায়, যা এই টেস্ট ম্যাচে নমুনা হিসেবে ভারতের দলনায়ক করে দেখালেন। তবে আসল কনটেস্টটা হতে পারতো যদি আমাদের দলে ভারতের মতো ভালো মানের পেস বোলার থাকতো। তাহলে ভারতের ব্যাটসম্যানরা এই গোলাপি বলে কীভাবে পরিস্থিতিটা সামাল দিতো, তা হতো ইন্টারেস্টিং।

আমাদের দুর্বল পেস বোলিংয়ের বিপক্ষেও ভারত ৯০ ওভারেই ধরাশায়ী হয়েছে। এই ম্যাচে যদি কোনও কিছু উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে থাকে, তবে তা ছিল আমাদের পেস বোলিং ইউনিট। টস জিতে আগে বল করলে এবং পিচ থেকে সুবিধা আদায় করলে, ভারতকে ৩০০ রানের নীচে আমাদের বোলাররাই আটকাতে পারতো বলে আমার বিশ্বাস। ইন্দোরের প্রথম টেস্টে লাল বলেও আমাদের ব্যাটসম্যানদের দৈন্যতা ফুটে উঠেছিল এবং তার ধারাবাহিকতার সমাপ্তি ঘটলো ইডেন গার্ডেনসে, এর জন্য আমি শতভাগ দায়ী করতে চাই না ব্যাটসম্যানদের।

ঘরের মাঠে টেস্টে একজন সিমার খেলানো হয়, দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ ওভার বলও করানো হয় না। নীচু মানের পিচে স্পিনাররা রাজত্ব করে। একটা টেস্ট উইকেট পাওয়ার পেছনে কী পরিমাণ মেহনত করতে হয়, তা বোঝার আগেই অভিষেক ম্যাচে এক ইনিংসে ৫ উইকেট তুলে নিচ্ছে বা মিরাজ নিজেই ১৭ উইকেট তুলে নিলো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

টেস্ট ম্যাচে ভালোভাবে কনটেস্ট রপ্ত করার আগেই ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিলাম। জয়ের মাধ্যমে আমাদের এই উত্থান কোনও প্রকৃত ফাউন্ডেশনের ওপর হলো না, শুধু কাগজে কলমেই আমরা জয়ী হলাম। কোচ হাথুরুসিংহে এই জায়গায় আমাদের অনেক ক্ষতি করে গেছেন এবং আমাদের বোর্ডও খুশিতে ডগমগ ছিলো এই আর্টিফিশিয়াল সাফল্যে।

২০০৮ সালে ভারতের বাংলাদেশ সফরের সময় ওই দেশের সাধারণ সম্পাদক নীরাঞ্জন সাহা এসেছিলেন। তিনি রাতে নৈশভোজের সময় জানিয়েছিলেন, তাদের ঘরোয়া প্রথম সারির ক্রিকেটকে তারা নতুনভাবে কতখানি গুরুত্ব দিয়ে সাজাচ্ছেন এবং আমাদেরকেও একই পরামর্শ দিয়েছিলেন। ভারত সফলভাবে পিচের উন্নয়ন করে দেশব্যাপী, কিন্তু আমরা পারিনি এবং এটা নিয়ে সেভাবে ভাবিনি। বর্তমানে ভারতের পেস বোলিং ও এমন প্রাণবন্ত টেস্ট পিচ দেখে মনে হয়, ভারতের ধারাবাহিক সফলতার পেছনে তাদের বোর্ডেরও অনেক অবদান আছে।

ঠিক এই জায়গায় আমাদের বোর্ডের একটা বড় দায় আছে আমাদের খেলোয়াড়দের উন্নতিতে প্রকৃত অবকাঠামো দিতে না পারার জন্য। ক্রিকেট কূটনীতিতে গোলাপি বলে খেলার ব্যাপারে আমরা সায় দিলাম অথচ গোলাপি বলে খেলার জন্য আমরা কোনও অনুশীলন ম্যাচ আদায় করতে পারলাম না।

গোলাপি বলে প্রকৃত অনুশীলন করা ও অনুশীলন ম্যাচ না পাওয়ার বিষয়গুলো বিবেচনায় না এনে ভারতের লিজেন্ডার ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার সুনীল গাভাস্কার যেভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলছিলেন, তা শুনতে খারাপ লাগছিল। তিনি ভুলে গেছেন ইংল্যান্ডের মাটিতে তারাও ৪২ রানে অলআউট হয়েছিল। তার সতীর্থ অনেক ব্যাটসম্যানের হেলমেটেও বল লেগেছিল এবং কেউ কেউ আঘাতও পেয়েছিলেন। আমাদের দল খারাপ খেলেছে, দর্শকদের হতাশ করেছে কোনও সন্দেহ নেই। তবে গাভাস্কারের মুখ থেকে আরও গঠনমূলক বক্তব্য সবসময় আশা করি।

এটাই আমাদের শেষ টেস্ট নয়, তাই থেমে থাকলে চলবে না। উদ্যমী হতে হবে ক্রিকেটারদের এবং তাদেরই খেলার মানের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটিয়ে ভবিষ্যতে এক এক করে জবাব দিতে হবে এবং দেরি হয়ে গেলেও বোর্ডকে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের ক্রিকেটকে ঢেলে সাজাতে হবে।