‘মেডেনের রাজা’র চিরবিদায়

টেস্টে টানা মেডেনের রেকর্ডটি এখনও বাপু নাদকার্নির দখলেটানা ২১ ওভার মেডেন! টেস্ট তো বটেই, প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটেও এই কীর্তি আর কারও নেই। যার বাঁহাতি স্পিনে ক্রিকেট পেয়েছে দু্র্লভ এই রেকর্ড, সেই বাপু নাদকার্নি আর নেই। শুক্রবার ৮৬ বছর বয়সে  অন্যলোকে পাড়ি জমিয়েছেন ভারতের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার। পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি।

পুরো নাম নাম রমেশচন্দ্র গঙ্গারাম নাদকার্নি, তবে ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিতি তার বাপু নাদকার্নি নামেই। আরেকটি পরিচয়ও ছিল তার, ‘কৃপণ বোলার’। প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের রান নিতে দেবেন না, এই পণ করেই যেন বল করতেন। নিখুঁত লাইন-লেন্থে টানা বোলিং করার অসম্ভব ক্ষমতা ছিল ১৯৫৫ সালে ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হওয়া নাদকার্নির।

১৯৬৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শেষ করার আগে ভারতের হয়ে খেলেছেন ৪১ টেস্ট। ব্যাট হাতে ১৫.৭০ গড়ে ১ হাজার ৪১৪ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ৮৮ উইকেট। তার বোলিং ক্যারিয়ারের ইকোনোমি রেট চোখ কপালে তোলার মতো, ১.৬৭! ৫০ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন এমন বোলারদের মধ্যে তার ইকোনমি ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা। তার ওপরে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রেভর গডার্ডের ইকোনোমি ১.৬৪।

তবে একটা জয়গায় নাদকার্নি সবার ওপরে। ১৯৬৪ সালের জানুয়ারিতে চেন্নাই টেস্টে (তখনকার মাদ্রাজ) টানা ২১ ওভার মেডেন নিয়ে গড়েছিলেন বিশ্ব রেকর্ড। ভেঙেছিলেন ১৯৪৯ সালে হোরেস হ্যাজেলের টানা ১৭ ওভার মেডেনের কীর্তি। টেস্ট কিংবা প্রথম শ্রেণি ক্রিকেট টানা মেডেনের নেওয়ার রেকর্ডটি এখনও নাদকার্নির নামের পাশে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচে তার বোলিং ফিগার ছিল এমন— ৩২-২৭-৫-০। ২১.৫ ওভার পর্যন্ত ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের কোনও রান নিতে দেননি তিনি!

৪১ টেস্টে ‍চারবার ৫ উইকেট পান নাদকার্নি। যার মধ্যে রয়েছে ওয়েলিংটনে ভারতের ঐতিহাসিক জয়ের পথে ৪৩ রানে নেওয়া ৬ উইকেট । ১৯৬৭-৬৮ সালের নিউজিল্যান্ড সফরের ওই ম্যাচ দিয়েই বিদেশির মাটিতে প্রথম জয়ের কীর্তি গড়েছিল ভারত। ব্যাটিংয়েও তার অবদান কম নয়। ৭ হাফসেঞ্চুরির সঙ্গে আছে একটি সেঞ্চুরি।

প্রথম শ্রেণির ১৯১ ম্যাচে ব্যাটসম্যান নাদকার্নি ৪০.৩৬ গড়ে করেছেন ৮ হাজার ৮৮০ রান। ১৪ সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে ৪৬ হাফসেঞ্চুরি। আর বোলিংয়ে নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৫০০ উইকেট। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অধ্যায় বহু আগে শেষ করা এই অলরাউন্ডার গতকাল চলে গেছেন না ফেরার দেশে।