তামিমের ডাবল, মুমিনুলের সেঞ্চুরি ও ‘প্রহৃত’ মোস্তাফিজ

তামিম-মুমিনুল ব্যাট হাতে উজ্জ্বল (ফাইল ছবি)৬ বছর পর ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমেই ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তামিম ইকবাল। তৃতীয় দিন ট্রিপল সেঞ্চুরির হাতছানি তার সামনে। এমন ইনিংস নিশ্চিতভাবেই দারুণ তৃপ্তি দিচ্ছে বাংলাদেশের সেরা ওপেনারকে।

দীর্ঘদিন বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের মার্চে সর্বশেষ টেস্ট খেলা তামিম স্বস্তি নিয়েই পাকিস্তানে যেতে পারছেন।  রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নামার আগে নিশ্চিতভাবেই এই ইনিংসটি তামিমকে জোগাবে আত্মবিশ্বাস।

এদিকে ভারত সিরিজে অধিনায়কত্ব পাওয়া মুমিনুলও ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন। মুমিনুলও পেলেন সেঞ্চুরি। শনিবার এই দুই ব্যাটসম্যানের ২৯৬ রানের জুটিতে পূর্বাঞ্চল ১৮২ রানের লিড পেয়েছে। দ্বিতীয় দিনের পুরোটা সময় মধ্যাঞ্চলের বোলারদের কোনও সুযোগই দেননি তামিম-মুমিনুল।

আগের দিন ২ বল খেলার পরই আলোকস্বল্পতায় দিনের খেলা শেষ হয়। শনিবার দ্বিতীয় দিনে পিনাক ঘোষ ও তামিম  মিলে ১৫ ওভার পর্যন্ত খেলে দলীয় স্কোর নিয়ে যান ৬২ রানে। পিনাক ২৬ রানে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে মুমিনুলকে সঙ্গে নিয়ে বড় জুটি গড়েন তামিম। ইনিংসের শুরু থেকেই একদিকে আগ্রাসী ব্যাটিং করে গেছেন বাঁহাতি ওপেনার। অন্যদিকে মুমিনুল খেলেছেনে টেস্ট মেজাজে।

সকালে প্রথম সেশনেই তামিম তোলেন ৭২ রান। লাঞ্চ সেরে  এসেও আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন। ৪৩তম ওভারে শহীদুলের করা তৃতীয় বলটিকে কভার দিয়ে চার হাঁকিয়ে ৯৩ থেকে ৯৭ রানে পৌঁছে যান। পরের বলে ২ রান এবং পঞ্চম বলটিকে লেগ সাইডে পাঠিয়ে  প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ১৬তম সেঞ্চুরির দেখা পান।  ১২৬ বলে ১৭ চারে সেঞ্চুরি পূর্ণ করা তামিমকে অবশ্য খুব বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়নি।

সেঞ্চুরির পর আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন তামিম। পরের ১০০ রান তুলতে খেলেন ১১৬ বল! ৬৯তম ওভারে মধ্যাঞ্চলের শুভাগতর একটি বল অন ড্রাইভে চার মেরে  পৌঁছে যান ডাবল সেঞ্চুরিতে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটি তাঁর দ্বিতীয় ডাবল। তবে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে এটাই তামিমের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। এর আগে জাতীয় লিগে চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে সর্বোচ্চ ১৯২ রানের ইনিংস ছিল তামিমের। এদিন ২৪২ বলে ২৯ চারের সাহায্যে তামিম তার ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। শুধু তাই নয়, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের আগের সর্বোচ্চ ২০৬ রানের ইনিংসটিকে টপকে গেছেন। দ্বিতীয় দিনশেষে ২২২ রানে অপরাজিত আছেন বাঁহাতি ওপেনার।

এদিকে শুভাগতর করা  ৬৯তম ওভারে মুমিনুল লেট কাট করে পৌঁছে যান সেঞ্চুরিতে। যা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মুমিনুলের ২১তম সেঞ্চুরি। ১৮০ বল খেলে ১১ চারে  সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন। শেষ পর্যন্ত  ১৯৪ বলে ১২ চারে মুমিনুল ১১১ রান করে আউট হন উইকেটের পেছনে মোহাম্মদ মিঠুনকে ক্যাচ দিয়ে। তার আউটের মধ্য দিয়েই ভাঙে তামিম- মমিনুলের ২৯৬ রানের জুটি।

দুই বাঁহাতির ২৯৬ রানের জুটিতে পূর্বাঞ্চল দিনশেষে স্কোরবোর্ডে জমিয়েছে ৩৯৫/২। দিনশেষ মধ্যাঞ্চলের চেয়ে এগিয়ে ১৮২ রানে। তামিমের সঙ্গে ২২ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন ইয়াসির আলী।

জাতীয় দলের পেসার মোস্তাফিজুর রহমান খেলছেন মধ্যাঞ্চলের হয়ে। দিনের শুরুতে ছন্নছাড়া বোলিংয়ে পিনাক ও তামিমের হাতে বেদম মার খেয়েছেন তিনি। ১৯ ওভার বোলিং করে ৮৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন বাঁহাতি পেসার। মুকিদুল ইসলাম ও শুভাগত হোম নিয়েছেন একটি করে উইকেট।

এর আগে শুক্রবার তাইজুলের ঘূর্ণি জাদুতে মধ্যাঞ্চল ২১৩ রানে অলআউট হয়। মধ্যাঞ্চলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান আসে ওপেনার সাইফ হাসানের (৫৮) ব্যাট থেকে।

আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হিসেবে একটি টেস্ট খেলতে ৪ জানুয়ারি পাকিস্তান সফরে যাবে বাংলাদেশ। ৭ জানুয়ারি রাওয়ালপিন্ডিতে শুরু হবে টেস্ট ম্যাচটি। তারই প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে বিসিএলের প্রথম রাউন্ডের এই ম্যাচটি। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে তামিম ‍ও মুমিনুলকে এ ম্যাচে ভীষণ উজ্জ্বল লাগলেও মোস্তাফিজকে দেখাচ্ছে বিবর্ণ।