‘৩০০ করার সুযোগ দিলে হয়তো চেষ্টা করতাম’

মুশশচীন টেন্ডুলকারের মতো মুশফিকুর রহিমের একই নীতি। শুধু প্রতিভা থাকলে হবে না, নিজেকে ঘষামাজা করে ঝকঝকে করে তুলতে হবে। তাই ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান টেন্ডুলকারের মতো মুশফিকও অনুশীলনে ভীষণ মনোযোগী। ঐচ্ছিক অনুশীলনও মিস করেন না কিছুতেই। অনুশীলনে তাকে বল করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন বোলাররা। কিন্তু ক্লান্ত হন না মুশফিক, ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যাট করে যান। সোমবার ডাবল সেঞ্চুরির পর মুশফিক নিজেই জানালেন সে কথা। ২২ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে উঠে এলো আরও অনেক প্রসঙ্গ।

প্রশ্ন: ডাবল সেঞ্চুরি করলেন, দলও ভালো অবস্থানে। এখন কি খানিকটা চাপমুক্ত?

মুশফিক: চাপমুক্তির তো কিছু নেই। যদি লক্ষ্য করে থাকেন, (কলকাতায়) সর্বশেষ টেস্টেও ৭৪ রানের ইনিংস খেলেছি। আমার শুধু একটাই ভাবনা, একাদশে থাকলে জয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা। আমার ভাগ্য ভালো, ডাবল সেঞ্চুরি করতে পেরেছি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাদের দল খুব ভালো অবস্থানে আছে। এই মুহূর্তে এমন কিছুর খুব দরকার ছিল।

প্রশ্ন: ঘরের মাঠে এ ধরনের উইকেটে খেলাই কি বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিদায়ক?

মুশফিক: একদম টার্নিং উইকেটে খেলা কঠিন। বাংলাদেশই একমাত্র দল যাদের দেশে-বিদেশে সবখানে কঠিন কন্ডিশন মোকাবেলা করতে হয়। দেশে যদি টার্নিং উইকেট করি, সেখানেও কঠিন কন্ডিশন। দেখা যায় ব্যাটসম্যানদের জন্য স্কোর করা অনেক কঠিন হয়ে যায়, বিশেষ করে বড় স্কোর। এরকম উইকেট সচরাচর আমরা পাই না। এবার পেয়েছি, সবার ভেতর একটা ইচ্ছা ছিল সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের।

প্রশ্ন: তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির মধ্যে কোনটি করা সহজ ছিল?

মুশফিক: যদি তুলনার কথা বলেন, এটা সবচেয়ে সহজ উইকেট ছিল। ব্যাটিংয়ের জন্য উইকেটটা খুব ভালো। ওদের দলে খুব আহামরি কোনও বিপজ্জনক বোলারও নেই। তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির মধ্যে এটাকেই সবচেয়ে সহজ বলবো।

মুশফিকপ্রশ্ন: তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি করলেন। ট্রিপল সেঞ্চুরি কবে হচ্ছে?

মুশফিক:  ট্রিপল সেঞ্চুরি অবশ্যই সম্ভব। শুধু আমার নয়, টপ অর্ডারে যারা ব্যাট করে তাদের সবার পক্ষে সম্ভব। শান্ত (নাজমুল) যদি কাল (রবিবার) পুরোটা সময় খেলে আজ চা-বিরতি পর্যন্ত থাকতো, ওর হয়ে যেতে পারতো। আড়াই শ’র কাছে তো যেতেই পারতো। কারণ, ও ঘরোয়া ক্রিকেটে বড় স্কোর করেছে। বিশ্ব ক্রিকেটের অনেকের দুটো-তিনটা ট্রিপল সেঞ্চুরি আছে। তারা করতে পারলে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কেন পারবে না?

প্রশ্ন: ইনিংস ঘোষণার কারণে ট্রিপল সেঞ্চুরির সুযোগ পেলেন না। আক্ষেপ হচ্ছে?

মুশফিক:  সত্যি বলতে কী, আমি ভাবিনি এই সময়ে ইনিংস ঘোষণা করবে। কারণ এখনও ম্যাচের দুই দিন আছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা যত ব্যাট করবো, উইকেট তত ভাঙবে।  চা-বিরতির সময় আমাদের এমন কোনও আলোচনা হয়নি। পরে জানতে পারি আজ (সোমবার) ওদের ৬ থেকে ৮ ওভারের মতো খেলাবো। এরপর আমরা রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। আমি ভেবেছিলাম লিটন যদি ১০০ করে, তাহলে আমার রান হয়তো ৩০০র কাছে চলে যাবে। আজকে হতো না, কিন্তু কাল (মঙ্গলবার) প্রথম সেশনে হয়ে যেতো। ৩০০ করার সুযোগ দিলো না। সুযোগ দিলে হয়তো চেষ্টা করতাম (হাসি)।

প্রশ্ন:  উইকেটকিপিং ছেড়ে দেওয়ার পর কি নির্ভার হয়ে ব্যাট করতে পারছেন?

মুশফিক: এখন তো চাপ আরও বেড়ে গেছে। আগে তো দুইটা ছিল (ব্যাটিং আর কিপিং)। একটা খারাপ করলে আরেকটার সাহায্য পাওয়া যেত। আমি তো বোলিংও পারি না (হাসি)। তবে বাস্তবতা অবশ্যই মানতে হবে। আমার যে বয়স হচ্ছে এটাও মানতে হবে। আমার মনে হয়, ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দেওয়ার এটাই সঠিক সময়। ফিল্ডিংয়ের সময় আমি একটু নির্ভার থাকতে পারি। এর ফলে ব্যাটিংয়ে মনোযোগ ধরে রাখার বেশি সুযোগ পাচ্ছি।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের অনেকেই বলেন, আপনাকে বোলিং করা নাকি কঠিন।

মুশফিক: আমাদের বোলাররা অনেক ভালো মানের। নেটে তাদের বেশি খেলতে পারলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। আমি নেটে ঢুকলে আর বের হতে চাই না। দেখা যায়, অন্যদের ৫-১০ ওভার করলেও আমাকে হয়তো ২০ ওভার বল করতে হচ্ছে। সেজন্য হয়তো ওরা এমন কথা বলে। আমি খুব ভাগ্যবান, যখনই চাই, ওরা আমাকে বোলিং করে। অনেক ভালো সার্ভিস দেয়। আমার যেমন হেল্প হয়, তেমনি ওদেরও হয়।

মুশফিক-২প্রশ্ন: নেটে বেশি সময় থাকা টেস্টে বড় ইনিংস খেলতে কতটা সাহায্য করে?

মুশফিক: একেক জনের থিওরি একেক রকম। একেক জন অনুশীলন করে একেক ভাবে। ধারাবাহিকভাবে একটা সেশন করলে, আউট কিংবা বিট না হলে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। নেটে এক ঘণ্টা ব্যাটিং করে আউট না হলে ম্যাচে আত্মবিশ্বাস চলে আসে। অনেক সময় নেটে আউট হয়ে গেলে পরদিন সেই বোলারকে চ্যালেঞ্জ করে বলি, আউট করতে পারলে এটা দেবো, ওটা দেবো।

প্রশ্ন: আজ মুমিনুলের সেঞ্চুরিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মুশফিক: আমি মনে করি টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মুমিনুল। হয়তো দেশে ও দেশের বাইরে তার পারফরম্যান্সে কিছুটা ব্যবধান আছে। তবু টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মুমিনুল। তাকে সময় দিতে হবে। বাংলাদেশের টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দিতে মুমিনুলই সঠিক ব্যক্তি। ওর সঙ্গে ব্যাটিং সব সময় উপভোগ করি। সে চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়। আর চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়রা তখনই কামব্যাক করে যখন তারা চাপে থাকে। আমি মনে করি ভবিষ্যতে ও আরও ভালো করবে।