নতুন বলে সফল রুবেল স্লগ ওভার নিয়ে ভাবছেন

167A0128আগুনে বোলিংয়ে বিসিবি প্রেসিডেন্ট’স কাপে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন রুবেল হোসেন। উইকেটশূন্য প্রথম ম্যাচের পর থেকে চলছে রুবেলের তাণ্ডব। পরপর দুই ম্যাচে ৩টি করে উইকেটের নেওয়ার পর সোমবার চতুর্থ ম্যাচে নিয়েছেন ৪টি। সব মিলিয়ে ১০ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সবেচেয়ে সফল বোলার তিনি। এই সাফল্যের পেছনে ভূমিকা রেখেছেন পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন। তার পরামর্শে নতুন বলে সুইং কন্ট্রোল করতে পারছেন দারুণভাবে। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে সাফল্যের রহস্য উন্মোচন করার সঙ্গে আরও অনেককিছু নিয়ে কথা বলেছেন রুবেল।

বাংলা ট্রিবিউন: তিন ম্যাচে দারুণ বোলিং করে ১০ উইকেট। নিজের পারফরম্যান্সে নিশ্চয় সন্তুষ্ট?

রুবেল হোসেন: হ্যাঁ, পারফরম্যান্স নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। খুব ভালো বোলিং হচ্ছে। চেষ্টা করছি, ভালো করার। দলকে জেতাতে পারছি, এটাই সবচেয়ে বড় তৃপ্তি। তবে এতটুকুতেই তৃপ্ত হতে চাই না। এটা ধরে রাখতে চাই। সামনে যেহেতু আমাদের অনেক খেলা আছে, সেখানে যেন এই পারফরম্যান্স অব্যাহত রাখতে পারি।

বাংলা ট্রিবিউন: দুই ম্যাচে টানা ম্যাচসেরা, একটিতে সেরা বোলিংয়ের পুরস্কার। ক্যারিয়ারের সেরা সময় কি এটাই?

রুবেল: ক্যারিয়ারে এর চেয়ে ভালো সময় গিয়েছে কিনা, সেটা বলা কঠিন। খেলাধুলায় তো ভালো সময়, খারাপ সময় আসবেই। এখন খুব ভালো টাচে আছি, এটা ঠিক। তবে এভাবে হিসাব করা কঠিন। ২০১৫ বিশ্বকাপেও খুব ভালো সময় গিয়েছিল। কিন্তু এটা তো (বিসিবি প্রেসিডেন্ট’স কাপ) নিজেদের ভেতরে খেলা। একটানা দুই ম্যাচে সেরার পুরস্কার, সেরা বোলিংয়ের পুরস্কার, সেই হিসেবে এটা অন্যরকম অনুভূতি দিচ্ছে। তবে জাতীয় দলের হয়ে খেলে ভালো পারফরম্যান্সের সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা করা সম্ভব নয়।

বাংলা ট্রিবিউন: এই টুর্নামেন্টে নতুন বলে বোলিং করতে দেখা যাচ্ছে আপনাকে। নতুন বলে বোলিং করার সুফল পাচ্ছেন?

রুবেল: সত্যিই নতুন বলে বোলিং করা উপভোগ করছি। বোলিংটাও ভালো হচ্ছে। করোনাকালীন সময় হয়তো আমি বাগেরহাটে অনুশীলন করিনি, ঢাকায় কিছুদিন অনুশীলন করেছি। তখন কিন্তু আমরা ওয়ানডের জন্য অনুশীলন করিনি। আমরা লাল বলে টেস্টের প্রস্তুতি নিয়েছি। ওই সময় লাইন-লেন্থ নিয়েই বেশি কাজ করেছি। নতুন বলেই আমি বেশি কাজ করেছি। লাল নতুন বলে সাধারণত সুইং অনেকক্ষণ ধরে থাকে। অনুশীলনটা ভালো হওয়ার ফল পাচ্ছি এই ম্যাচগুলোতে। এছাড়া নতুন বল নিয়ে গিবসনের সঙ্গে কিছুদিন কাজ করছি। সুইংটা কীভাবে কন্ট্রোল করা যায়, কীভাবে আরও ভালো করা যায়, সেই চেষ্টাই আমি করছি।

বাংলা ট্রিবিউন: গিবসনের সঙ্গে কী কাজ করলেন?

রুবেল: গিবসন সব পেসারকে নিয়েই নতুন বলে কাজ করেছেন। আমাকে গিবসন গ্রিপটা দেখিয়ে দিয়েছেন। আমি সাধারণত গ্রিপটা একটু টাইট করে ধরি। এখন গ্রিপটা ওতটা টাইট করে ধরছি না। আলতোভাবে ধরেই ডেলিভারি করি। এতে আমার সুইংটা ভালো হচ্ছে। নতুন বলে সুইং সবারই হয়। কিন্তু কন্ট্রোল করাই কঠিন। আমার মনে হচ্ছে, নতুন বলে আমার সুইংয়ের কন্ট্রোল ভালো হয়েছে। এটা এখন ধরে রাখতে চাই।

বাংলা ট্রিবিউন: উইকেট পাওয়ার পর ক্যারিবিয়ান স্টাইলে কোমর দুলিয়েছেন। বিশেষ কোনও কারণে কী এমন উদযাপন?

রুবেল: না (হাসি)। উদযাপন একটু ভিন্নভাবে করেছি। কোনও প্লান ছিল না, ক্যারিবিয়ান টাইপের উদযাপন করেছি। ভিন্ন কিছু করতে অনেক সময় মজা লাগে।

বাংলা ট্রিবিউন: প্রেসিডেন্ট’স কাপে সব পেসারই ভালো করছেন। পেসারদের এমন প্রতিযোগিতা কেমন উপভোগ করছেন?

রুবেল: সব পেস বোলারই ভালো লাইন-লেন্থে বোলিং করছে। সব দলের পেসাররাই দ্রুত নতুন বলে উইকেট তুলে নিয়েছে। আমার মনে হয়, পেস বোলারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকা খুব ভালো। এমন প্রতিযোগিতা বাংলাদেশ দলের জন্যও ভালো। সবাই ভালো করতে চায়। যখন প্রতিযোগিতা বেশি থাকবে, তখন ফোকাসও বেশি থাকবে। এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য খুব ভালো। বাংলাদেশে এখন অনেক পেসার আছে যারা ১৪০-এর ওপর কিংবা কাছাকাছি বোলিং করতে পারছে। এই জিনিসগুলো বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো।

বাংলা ট্রিবিউন: এই টুর্নামেন্টের উইকেট আপনার ক্যারিয়ারে যোগ হবে না, তবুও কীভাবে মোটিভেট থাকছেন?

রুবেল: এই টুর্নামেন্টের উইকেট ক্যারিয়ারে যোগ হবে কী হবে না, সেটি নিয়ে আমার কোনও চিন্তা নেই। আমার কথা হচ্ছে, যে লেভেলেই খেলা হোক না কেন আত্মবিশ্বাস হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দারুণ একটি টুর্নামেন্ট হচ্ছে, এখানে আমরা ভালো করতে পারলে নির্বাচকরা আছে, প্রধান কোচসহ কোচিং স্টাফরা আছে, তারা আমাদের মূল্যায়ন করার সুযোগ পাবেন। শুধু তা-ই নয়, নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও এই টুর্নামেন্ট দারুণ কাজে দেবে।

বাংলা ট্রিবিউন: চার ম্যাচে বেশ কয়েকটি ওভার খুব ভালো হয়েছে। কোন ওভারটি আপনি সবচেয়ে উপভোগ করেছেন?

রুবেল: আমি প্রতিটি বলই উপভোগ করেছি। নির্দিষ্ট কোনও ওভারের কথা বলতে পারবো না। আমার কাছে ভালো বোলিং হচ্ছে কিনা সেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি সবসময় চেষ্টা করি যেকোনও লেভেলেই খেলি না কেন, ভালো করা। আমি ভালো করছি এবং চেষ্টা করবো এটা কীভাবে আরও ভালো করা যায়। আমাকে পরবর্তীতে আরও বেশি ফোকাস থাকতে হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: নতুন বলে ভালো করলেও স্লগ ওভারে একটু খরুচে বোলিং হচ্ছে। স্লগ ওভারে ধার বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন কি?

রুবেল: স্লগ ওভারে সারাবিশ্বের সব পেস বোলারই মার খায়। এটা নিয়ে কোনও কিছু বলার নেই। আমরা আন্তর্জাতিক ম্যাচে সবেচেয়ে বেশি সাফার করি স্লগ ওভারে গিয়ে। স্লগ ওভারে আমরা যেন মার কম খাই,  এটা নিয়ে গিবসনের সঙ্গে আমাদের অনেক কাজ করার আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও ওর সঙ্গে স্লগ ওভার নিয়ে কাজ করবো। কীভাবে আমি স্লগ ওভারে উন্নতি করতে পারি, কীভাবে স্লগ ওভারে ভেরিয়েশন আনতে পারি, এগুলো নিয়ে কাজ করবো। ঘরোয়া ক্রিকেটে স্লগ ওভারে ভালো করলেও অনেক সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটি হয় না। আমরা অনেক বেশি মার খাই। কীভাবে এটি কমানো যায়, কীভাবে আরও উন্নতি করা যায়, সেটি নিয়ে অবশ্যই কাজ করবো।