বিশ্বকাপের পুরনো ইতিহাস পাল্টাতে চান মাহমুদউল্লাহ

আগামী ১৭ অক্টোবর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের। এর আগে শ্রীলঙ্কা, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ওয়ার্মআপ ম্যাচ খেলে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল যদিও। কিন্তু দুটোতেই হেরে কিছুটা হলেও অস্বস্তি বিরাজ করছে দলটিতে।

তবে বাংলাদেশ দল হার সঙ্গী করে বিশ্বকাপের মঞ্চে যেতে চায়নি বলেই অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে স্লো ও টার্নিং উইকেট বানিয়ে সিরিজ জিতেছিল সম্প্রতি। মাহমুদউল্লাহর দাবি, ওই জয়ের আত্মবিশ্বাসই বিশ্বকাপে ভালো খেলতে সহায়তা করবে তাদের। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কুড়ি ওভারের টুর্নামেন্ট ঘিরে নিজের ভাবনার কথা জানিয়ে গেছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।

বাংলা ট্রিবিউন: ২০০৭ সালের পর মূল পর্বে কোনও ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ, এবার নিশ্চয়ই সেই আক্ষেপ দূর হবে?

মাহমুদউল্লাহ: অবশ্যই, এবার আমাদের সবার লক্ষ্যটা তেমনই। ২০০৭ সালে আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিলাম। গত ৫ বিশ্বকাপে যা পারিনি, এবার সেটিই করতে চাই। আশা করি, গ্রুপ পর্ব টপকানোর পর আমরা পরের রাউন্ডের ম্যাচ জিততে পারবো। দল হিসেবে খেলতে পারলে টুর্নামেন্টে ভালো করা সম্ভব। সেই আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনিসহ সাকিব, মুশফিক সব টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন। তিন জন মিলে এবার ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনা নিশ্চয়ই?

মাহমুদউল্লাহ: দলের হয়ে সব সময়ই আমাদের দারুণ কিছু করার চেষ্টা থাকে। এই বিশ্বকাপেও থাকবে। সাকিব, মুশফিক ও আমি হয়তো সবক’টি বিশ্বকাপ খেলেছি। আগের আসরগুলোতে সেভাবে সফল হতে পারিনি। তাই বলে আমাদের চেষ্টা ছিল না, তেমন নয়। আমরা দলের জয়ে সব সময় অবদান রাখার চেষ্টা করি। হয়তো কখনও হয়, কখনও হয় না। এবারও আগের বারের মতোই চেষ্টা থাকবে। পুরনো অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভালো ফল আনার চেষ্টা থাকবে। আমরা দলগতভাবে ভালো খেলতে পারলে যেকোনও দলকেই হারাতে পারি, সেটি আগেও প্রমাণ হয়েছে। আমরা তিন জনসহ তরুণ ক্রিকেটারদের সম্মিলিত পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপে ভালো কিছু অর্জন সম্ভব।

সাম্প্রতিক সিরিজগুলোতে ব্যাট হাতেও আগ্রাসী ছিলেন রিয়াদ।বাংলা ট্রিবিউন: বিশ্বকাপে দলের সাফল্যের মন্ত্র কী?

মাহমুদউল্লাহ: আমাদের সফল হতে হলে অবশ্যই ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে হবে। অবশ্যই ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামতে হয়। টি-টোয়েন্টিতে দ্রুত ম্যাচের মোমেন্টাম পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। ফলে প্রতিটি বলেই সতর্ক থাকতে হবে। সবকিছু ছাপিয়ে আমাদের নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। সবাই জানে, নিজেদের দিনে আমাদের হারানো কতটা কঠিন!

বাংলা ট্রিবিউন: বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহর লক্ষ্য কী থাকবে?

মাহমুদউল্লাহ: অধিনায়ক হিসেবে আমি চাই বিশ্বকাপে বিশেষ কিছু করতে। শুধু অধিনায়কত্ব নয়, ব্যাটিং-বোলিংয়ে আমার কিছু দায়িত্ব আছে। আগের ছয় বিশ্বকাপে যা পারিনি, আমি চেষ্টা করবো সেটি অর্জন করতে। বিগত বিশ্বকাপে আমার খুব একটা ভালো স্মৃতি নেই। আশা করি, বিশ্বকাপে ভালো কিছু অর্জন করে দেশে ফিরতে পারবো। ব্যক্তিগতভাবে যদি বলেন, চেষ্টা থাকবে দলের জয়ে অবদান রাখতে।

বাংলা ট্রিবিউন: অনেকটা তরুণ দল নিয়েই বিশ্বকাপ মিশনে নামবেন, তরুণদের নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

মাহমুদউল্লাহ: আমরা যে কয়জন সিনিয়র আছি, তাদের সঙ্গে তরুণদের মিলিয়ে দল অনেক ভারসাম্যপূর্ণ। তরুণরা সবাই বিশ্বমঞ্চে ভালো করতে মুখিয়ে আছে। আফিফ-মেহেদী-নুরুল-শামীম-শরিফুলরা ভালো কিছু উপহার দেবে বলেই বিশ্বাস আমার।

বাংলা ট্রিবিউন: সাম্প্রতিক সময় ঘরের মাঠে স্লো ও টার্নিং উইকেট বানিয়ে বাংলাদেশ সাফল্য পেয়েছে। বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের এমন সাফল্য কি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে?

মাহমুদউল্লাহ: ম্যাচ জয়ের যে আত্মবিশ্বাস, সেটি অন্য কিছুতেই পাওয়া সম্ভব নয়। টানা তিনটি সিরিজ জয় আমাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। হয়তো স্লো উইকেটে ব্যাটসম্যানদের প্রস্তুতিটা যথেষ্ট হয়নি। তবে আমাদের ব্যাটসম্যানরা ওই (ওমান ও আরব আমিরাত) কন্ডিশনেও মানিয়ে নিতে পারবে।

বাংলা ট্রিবিউন: তারপরও প্রস্তুতি নিয়ে বাইরের আলোচনা দলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে কিনা?

মাহমুদউল্লাহ: ব্যাপারটা তো এমন নয় যে আমরা এমনি এমনি ম্যাচ জিতে গেছি। আমরা প্রতিপক্ষের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলে জিতেছি। যারা এই জয়গুলোকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন, তাদের ইতিবাচক বিষয়গুলোও দেখা উচিত। আমরা যে কন্ডিশনে খেলেছি, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড একই কন্ডিশনে খেলেছে। উইকেট আমাদের জন্য কঠিন হলে সেটা প্রতিপক্ষের জন্যও কঠিন ছিল। ওদের জন্য কঠিন আমাদের জন্য সহজ ছিল, বিষয়টা তো এমন না। এই জয়ে আমাদের বোলারদের কৃতিত্বটা বেশি। অবশ্যই ব্যাটসম্যানদের প্রশংসা করতে হবে, কঠিন কন্ডিশনে আমরা যেভাবে ব্যাটিং করে ম্যাচ জিতেছি। তবে বাইরের বিষয় নিয়ে খুব একটা আলোচনা করি না। নিজেদের খেলা নিয়েই আমাদের চিন্তা। বাইরের বিষয়গুলোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজেদের প্রসেসগুলো ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, সেটি নিশ্চিত করা।  

বাংলা ট্রিবিউন: ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো সাকিবের কাছ থেকে একই পারফরম্যান্স নিশ্চয়ই আশা করছেন?

মাহদুউল্লাহ: অবশ্যই, তেমন কিছু হলে দলের জন্যই ভালো। আমি বিশ্বাস করি সাকিবের দ্বারা এমন কিছু সম্ভব। প্রত্যাশা তো কেবল সাকিব কিংবা মোস্তাফিজকে ঘিরেই নয়। সবাই মিলে পারফরম্যান্স না করলে দলের রেজাল্ট আশা করা কঠিন। ফলে সবাইকে কিছু না কিছু অবদান রাখতেই হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিশ্বকাপে আমাদের ভালো কিছু সম্ভব।

বাংলা ট্রিবিউন: মোস্তাফিজের আইপিএলের পারফরম্যান্স নিয়ে উচ্ছ্বসিত কিনা?

মাহমুদউল্লাহ: মোস্তাফিজ বিশ্বমানের বোলার। সে কয়েক বছর ধরেই দারুণ ছন্দে আছে। আইপিএলের প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বে গিয়েও সে ফর্ম ধরে রেখেছে। আইপিএলে তার অভিজ্ঞতা আমাদের দারুণ কাজে দেবে। মোস্তাফিজ আমাদের বড় অস্ত্র। সে আমাদের দলের এক্স-ফ্যাক্টর। আশা করি, বর্তমান পারফরম্যান্স বিশ্বকাপেও থাকবে।

বাংলা ট্রিবিউন: এই মুহূর্তে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক আপনি। এই অর্জনকে কীভাবে দেখেন?

মাহমুদউল্লাহ: অধিনায়ক হিসেবে যত ম্যাচ জিতেছি, পুরো কৃতিত্ব দলের। দল ভালো করেছে, আমরা ম্যাচ জিতেছি। আলহামদুলিল্লাহ, তবে এখানে নির্ভার হওয়ার সুযোগ নেই। আমি মনে করি, এই ফরম্যাটে আরও ভালো করার সুযোগ আছে। আশা করি, সামনেই আমরা আরও ভালো কিছু অর্জন করতে পারবো।