ইংল্যান্ড সুযোগ দিলেই জয়ের পথ তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের

বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের উড়িয়ে দিয়েই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে ইংল্যান্ড। সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বুধবার বিকাল চারটায় আবুধাবিতে মাঠে নামবে মাহমুদউল্লাহর বাংলাদেশ। টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে বহুবার দুই দল মুখোমুখি হলেও কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে এই প্রথমবার মাঠে নামতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১১৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা বাংলাদেশ এ ফরম্যাটে কখনো ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়নি! বিষয়টি বিস্ময়কর হলেও সত্য। ফলে কোন রকম অভিজ্ঞতা ছাড়াই ইংলিশদের বিপক্ষে নিজেদের রণকৌশল সাজাতে হবে বাংলাদেশকে।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভালো করার কথা বলা গেলেও বর্তমান বাস্তবতায় ইংলিশদের বিপক্ষে ফলাফল নিয়ে বলতে পারাটা বেশ কঠিন। তবে ইংল্যান্ড ভুল করলেই বাংলাদেশের জন্য ভালো করার সম্ভাবনাটা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া আরও বেশ কিছু বিষয়ের দিকেও নজর রাখতে হবে- 

সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে

কাগজে-কলমে ইংল্যান্ড শক্তিশালী দল। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স, খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করলে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়েই থাকবে। তারপরও ম্যাচে যারা ভালো খেলবে, তারাই শেষ হাসি হাসবে। তাই নিজেদের দিনে সেরাটা খেলতে পারলে বাংলাদেশকে হারনো বেশ কঠিনই। সেক্ষেত্রে অবশ্য ইংল্যান্ড কোন সুযোগ দিলে সেই সুযোগগুলো লুফে নিতে হবে। বাংলাদেশের বোলিং কোচ ওটিস গিবসন সেটিই জানিয়ে গেছেন ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে, ‘জানি ওরা আমাদের কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি দাঁড় করাবে, পাশাপাশি আমাদের সুযোগও দেবে। যেমন উইন্ডিজের সঙ্গে ৫৫ রান তাড়া করতেই ওদের চার উইকেট গিয়েছিল। তো এই জিনিসগুলোকে আমরা ইতিবাচকভাবে নিতে পারি। আমাদের সেরা খেলা খেলতে হবে এবং মনে রাখতে হবে যে ওরা আমাদের সুযোগ দেবে।’

ভুলের পরিমাণ কমাতে হবে

বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ এখন বাংলাদেশ নিজেই। এটা মানতেই হবে। নিজেদের ভুলে বারবার হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ ফসকে যাচ্ছে। প্রতিটি ম্যাচেই দেখা যাচ্ছে অদ্ভুত সব ভুল! স্কটল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে সেই ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে। ওমান ও পিএনজির বিপক্ষে জিতলেও মাঠের পারফরম্যান্স আপ টু দ্য মার্ক হয়নি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ক্রিকেটারদের ভুলের পরিমাণ কমাতে হবে। সেটি করতে না পারলে জয়তো দূরের পথ, লড়াই করা-ই সম্ভব হবে না।

পাওয়ার প্লের সঠিক ব্যবহার

ধীরে ধীরে পাওয়ার প্লেতে উন্নতি হচ্ছে বাংলাদেশের। কিন্তু আবুধাবির স্লো উইকেটে এখানে আরও উন্নতি প্রয়োজন। প্রথম ৬ ওভারে বিনা উইকেটে অন্তত ৫০ রান তুলতে হবে। সেই কাজটি করতে ওপেনারদের ভূমিকা রাখা জরুরি। কিন্তু কোন ম্যাচেই দুই ওপেনার একসঙ্গে ক্লিক করছেন না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্যাটিং-বোলিংয়ে প্রথম ছয় ওভার ভালো করতে পারলেই, ম্যাচে অনেকখানি এগিয়ে থাকতে পারবে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

মোস্তাফিজের ফর্মে ফেরা

আইপিএলের শুরুতে ভালো করলেও শেষ দিকের কিছু ম্যাচে এসে ফর্ম হারিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। পারফেক্ট মোস্তাফিজকে ঠিকমতো না পাওয়াতে ভুগতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। সহযোগী দেশগুলোর ব্যাটাররাও তাকে অবলীলায় খেলেছেন! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও সুসময় ফেরাতে পারেননি। আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের মূল অস্ত্র সেই মোস্তাফিজের ফর্ম নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তার মেঘ জন্মেছে। বিশেষ করে, পিএনজির বিপক্ষে ছন্নছাড়া বোলিং করেছেন কাটার মাস্টার। তবে আবুধাবির স্লো উইকেটে কাটার মাস্টার নিজের স্ব-মহিমায় ফিরবেন বলেই প্রত্যাশা।

স্পিনারদের আধিপত্য দেখানো

লঙ্কানদের বিপক্ষে মেহেদী-নাসুমদের সঙ্গে ছিলেন সাকিব। মাহমুদউল্লাহ- আফিফও হাত ঘুরিয়েছিলেন। যদিও তারা ব্যর্থ হয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্পিন আক্রমণে যারাই থাকুক না কেন, নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়েই লড়াই করতে হবে। ইংলিশরা এমনিতেই স্পিনের বিপক্ষে অতটা ভালো নয়। ইংলিশদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের স্পিনাররা তাদের চেপে ধরতে পারলে দারুণ সম্ভাবনা তৈরি হবে। 

ইংলিশ বোলাদের রুখে দেওয়া

সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ফর্মে আছেন ইলিংশ বোলাররা। ছন্দে আছেন আদিল রশিদ, টাইমাল মিলস, ক্রিস ওকস ও মঈল আলী। বাংলাদেশের ব্যাটারদের তাদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়তে হবে। নয়তো হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে পারে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। বিশেষ করে আদিল রশিদের ঘূর্ণি জাদু কীভাবে সামলাতে হবে, সেই পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। আদিল রশিদকে প্রথমেই রাখার কারণ তার বোলিংয়ের ধরন ও সাম্প্রতিক ফর্ম। এমনিতে লেগ স্পিনারদের বিপক্ষে বরাবরই দুর্বলতা বাংলাদেশের। যদিও সুপার টুয়েলভে প্রথম ম্যাচে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে বেশ ভালোই খেলে দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিমরা। সেই জায়গায় আদিল হতে পারেন আরও বড় হুমকি। এছাড়া বিশ্বের সেরা পাঁচ ডেথ ওভার স্পেশালিষ্টদের একজন বাঁহাতি পেসার টাইমাল মিলস। টি-টোয়েন্টিতে ডেথ ওভারে তার ইকোমনি রেট মাত্র ৭.৫২। বাঁহাতি এই পেসারকে সামলাতে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামতে হবে।

জেসন রয়,  জস বাটলার, মঈল আলীকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা

ইংলিশদের ব্যাটিং লাইনআপের মূল স্তম্ভই এ তিনজন। বাংলাদেশের বোলারদের বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে জেসন রয়-জস বাটলারদের বিপক্ষে বোলিং করতে হবে। নিয়ন্ত্রিত বোলিংই পারে তাদের আটকে রাখতে। পাশাপাশি অলরাউন্ডার মঈন আলীও যে কোন সময় প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারেন! ফলে তাকেও কোন সুযোগ দেওয়া যাবে না।