বুঝতে পেরেছি আমার উইকেটের মূল্য আছে: লিটন

আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে খেই হারিয়েছিল বাংলাদেশের টপ অর্ডার। ২১৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে আফগান পেসার ফজল হক ফারুকীর তোপে ৪৫ রানেই ৬ উইকেট হারায় লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এরপর মিরাজ-আফিফের অবিশ্বাস্য ১৭৪ রানের স্মরণীয় জুটিতে দুর্দান্তভাবে জয় পায় স্বাগতিকরা। আগের অভিজ্ঞতায় শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দ্বিতীয় ম্যাচে ফারুকীর বল নিয়ে সাবধান ছিল টাইগাররা। মূলত তার প্রথম স্পেলে টেস্ট মেজাজে ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন তামিম-লিটন। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষে সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাস তেমনটাই জানালেন।

আগের ম্যাচে আগুনে বোলিং করা ফারুকী আজ খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ম্যাচ শেষে তাকে নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানালেন লিটন, ‘সত্যি কথা বলতে, আগের দিন তার (ফারুকী) বোলিং খুবই ভালো ছিল। আজও (শুক্রবার) কিন্তু সে খারাপ বল করেনি। বরং প্রথম ম্যাচের মতোই উইকেট থেকে বেশ সহায়তা পাচ্ছিল সে। আমার মূলত ভাবনায় ছিল, ওর স্পেল যতক্ষণ আছে ততক্ষণ টেস্ট মানসিকতায় খেলবো। কারণ আমি জানতাম– ১৫-১৬ ওভার যদি টিকে থাকা যায় তাহলে আবহাওয়া বদলাবে, তখন উইকেট ভালো হয়ে যাবে।’

আগের ম্যাচের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া লিটন মনে করেন তার উইকেটের মূল্য অনেক। ঠিক এজন্যই শুরুতে কিছুটা দেখে শুনে খেলেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি, ‘আমি প্রথমেই বলেছি, উইকেটে চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি চাইলে হয়তো শুরুর দিকে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে মেরে দিতে পারতাম। তাতে কী হতো? চার বা ছয়। কিন্তু খুব ঝুঁকিপূর্ণ হতো সেটা। বল ব্যাটে না লাগলে উইকেট চলে যেতো। আমার উইকেট যাওয়া মানে তো দলের ওপর চাপ পড়া। বুঝতে পেরেছি আমার উইকেটের একটা মূল্য আছে। তাই মূল্যটা দিচ্ছি। আশা করি, আগামীতেও সফল হবো।’

সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৮৩ রানে তিন উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে লিটন-মুশফিক মিলে রেকর্ড ২০২ রান যোগ করেন। লিটন দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চরি তুলে নেন। নিজের বর্তমান মাইন্ডসেট নিয়েও কথা বলেছেন এই ওপেনার, ‘মাইন্ডসেট হলো কীভাবে খেললে সফল হওয়ার রেট বেশি হয়। আপনারা সেঞ্চুরি দেখছেন, কিন্তু এর মাঝে কিন্তু অনেক ইনিংস আমি খারাপও খেলেছি। ওপেনার একদিন বড় ইনিংস খেলতে পারবেন, একদিন পারবেন না। ক্রিকেটটাই এমন, আমার যেটা মনে হয়।’

লিটন আরও বলেছেন, ‘আমার প্রথম লক্ষ্য থাকে ৩৫ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করা। আমার যে সামর্থ্য আছে তাতে বিশ্বের যেকোনও দলের বিপক্ষে ৩৫ ওভার খেলতে পারলে অন্তত ৮০ রান করতে পারবো। সেটাই আজ প্রয়োগ করতে পেরেছি। যখন আমি আর মুশি ভাই (মুশফিক) খেলছিলাম, জুটিটা ভালো হচ্ছিল। যখন ৪০ ওভার পেরোলাম, তখন আমরা ভেবেছি স্কোরটা যত এগিয়ে নেওয়া যায়।’

বাংলাদেশের জন্য বরাবরই হুমকি ছিলেন রশিদ খান, মুজিব উর রহমান ও মোহাম্মদ নবী। তবে দুই ম্যাচেই তারা তেমন পাত্তা পাননি। ভালো পরিকল্পনার সুবাদে আফগান স্পিন ত্রয়ীর বিপক্ষে বাংলাদেশ সফল হচ্ছে বলে মনে করেন লিটন, ‘তাদের দলে মানসম্পন্ন স্পিনার আছে। মুজিবকে আমরা পুরো বিপিএলেই খেলেছি। সেখান থেকে একটা ধারণা ছিল। রশিদকেও আগে খেলার একটা অভিজ্ঞতা আছে। সেগুলো কাজে লাগাতে আমাদের পরিকল্পনা সাজানো ছিল। আমার মনে হয়, মুশফিক ভাই এবং আমি ভালো পরিকল্পনা করে খেলতে পেরেছি।’

২০১৫ বিশ্বকাপের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন লিটন দাস। সাত বছর ক্রিকেট খেলে এখন অনেক পরিণত ও অভিজ্ঞ তিনি। মুজিব-রশিদদের সামলানোর ব্যাপারে অভিজ্ঞতা ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন লিটন, ‘আমরা সিনিয়র হচ্ছি না? (হাসি) আমরাও তো ম্যাচ খেলে খেলে উন্নতি করছি। নতুন ব্যাটারের এমন বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে খেলা কঠিন। আমি সাত বছর খেলে ফেলেছি, আফিফরা ২-৩ বছর খেলেছে। তাদের তো একটা অভিজ্ঞতা হচ্ছে। আমার মনে হয়, এটা নিয়ে আমরা কেউ আর ওইভাবে (প্রতিপক্ষের কঠির বোলিং আক্রমণ) চিন্তা করি না। আমরা শুধু ম্যাচে কাকে কীভাবে ব্যাটিং করবো সেই পরিকল্পনা সাজাই।’