অতঃপর বুঝলেন মুমিনুল!

একসময় ডন ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে তুলনা করা হতো তাকে! সেই তুলনায় বাড়াবাড়ি ছিল না মোটেও। ক্যারিয়ারের শুরুতে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন মুমিনুল হক। রান বন্যায় ভেসেছিলেন রীতিমতো। কিন্তু অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে বাঁহাতি ব্যাটারের কী যেন হলো। হতে পারে বাড়তি চাপে নিজের সেরাটা দিতে পারছেন না তিনি। নেতৃত্বের চাপ অনেক ভালো ব্যাটারই ঠিকমতো সামলাতে পারেননি। অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর মুমিনুলও হয়তো বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। আজ (মঙ্গলবার) বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে নেতৃত্ব ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন এই ব্যাটার।

অধিনায়ক মুমিনুল কিংবা ব্যাটার মুমিনুলের ব্যর্থতার শুরুটা অনেক আগে থেকেই। যদিও তিনি বারবারই বলে এসেছেন, নিজের ব্যাটিং নিয়ে মোটেও চিন্তিত নই। তবে সেই কথাটা যে ‘সঠিক’ ছিল না, সেটি স্পষ্ট হয়ে গেছে আজ যখন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। কারণ, নেতৃত্ব ছাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি নিজের ব্যাটিংয়ে পূর্ণ মনোযোগ দেবেন বলেই।

বিসিবি সভাপতির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন মুমিনুল। সেখানেই তিনি জানিয়েছেন, বোর্ড সভাপতির কাছে তিনি জানিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের টেস্টের নেতৃত্বে আর থাকতে চান না তিনি। কারণ ব্যাখ্যায় এই ব্যাটার বলেছেন, ‘আমি অনুভব করি, আমার ব্যাটিংয়ে যদি মনোযোগ দিতে পারি তাহলে ভালো হয়। আমি বলে এসেছি আমার একটা ব্রেক দরকার। ব্যাটিংয়ে আমার মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’

নেতৃত্ব ছাড়ার মতো সিদ্ধান্ত সহজে আসার কথা নয়। যদিও মুমিনুল বলছেন, ‘আসলে কঠিনের কিছু নেই। পৃথিবীতে সবই এমন হবে। শুধু আমি না, অনেক অধিনায়কের ক্ষেত্রে হবে। অবদান রাখতে হবে। শুধু আমি না, কেউ যদি অবদান রাখতে না পারে তাহলে চাপ আসবে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।’

৬, ০, ১, ৭, ৮৮, ১৩*, ০, ৩৭, ০, ২, ৬, ৫, ২, ৯, ০- মুমিনুলের সর্বশেষ ১৫ ইনিংসের স্কোর। গত বছর নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজ দিয়ে মূলত ব্যর্থতার মিছিল শুরু তার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের ম্যাচেই কেবল ৮৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। বাকি ১৪ ইনিংসের মধ্যে মাত্র দুবার দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পেরেছেন। এই সময়ে মাত্র একবার হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে খেলেছিলেন ৮৮ রানের ইনিংস। বাকি ইনিংসগুলোর মধ্যে তার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭ রান। তারপরও আশা ছিল, লঙ্কানদের বিপক্ষে ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে আসবেন তিনি। কিন্তু সেই একই পরিণতি!

অধিনায়ক হওয়ার পর বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ভালো পারফরম্যান্স এলেও নিজের ছায়া হয়ে আছেন তিনি। বাঁহাতি ব্যাটার বারবার বলার চেষ্টা করেছেন, ফর্ম নিয়ে তার দুশ্চিন্তা নেই। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়কের ম্যাচের পর ম্যাচ ব্যর্থতা দুশ্চিন্তা বাড়িয়েই গেছে। অধিনায়ক হিসেবে ১৬ টেস্ট খেলেছেন তিনি। ৩১ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি ও ২ হাফসেঞ্চুরিতে তার রান ৯১২। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর প্রথম ৭ টেস্টে তিনটি সেঞ্চুরি পেলেও পরের ৯ টেস্টে সেঞ্চুরিবিহীন মুমিনুল।