মিরাজের বোকামিতে বেঁচে গেলেন রাজা!

১৫ ওভারে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে জিম্বাবুয়েকে চাপে রেখেছিল বাংলাদেশ। উল্টো নিজেদের বাজে ফিল্ডিংয়ে সফরকারীরাই এখন চাপে! দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২৯১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা স্বাগতিক দলকে পথ দেখাচ্ছেন সিকান্দার রাজা-রেজিস চাকাভা জুটি। গত ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও রাজাকে আগে সাজঘরে ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। রানআউটের সুযোগ মিস করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

২৫.২ ওভারে বল করছিলেন মিরাজ। অযথা রান নিতে গেলে রানআউটের দ্বারপ্রান্তেই ছিলেন রাজা। কিন্তু ননস্ট্রাইকে মিরাজ এমন বোকামি করলেন। যাতে জীবন পেয়ে যান জিম্বাবুয়ের এই ম্যাচ জেতানো তারকা। রিপ্লেতে দেখা গেলো মিরাজ যে হাতটিতে বল নিলেন, সেই হাতে স্টাম্প ভাঙলেন না। ভাঙলেন অন্য হাতে! তাতে এক রান পূরণও হয়ে যায় স্বাগতিকদের। রাজা তখন ৪২ রানে ব্যাট করছিলেন। গত ম্যাচে ঠিক এমন স্কোরেই তাকে আউটের সুযোগ মিস করেছে বাংলাদেশ। বাকিটা সবারই জানা। জীবন পেয়ে ছক্কা মেরে পূরণ করে ফেলেছেন ক্যারিয়ারের ২১তম ফিফটিও। 

সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে শুরুতেই চেপে ধরেছিল সফরকারীরা। ১৫ ওভারে তুলে নিয়েছে ৪ উইকেট। সিকান্দার রাজা একপ্রান্ত আগলে এখন অধিনায়ক রেজিস চাকাভাকে সঙ্গী করে ম্যাচ বাঁচানোর মিশনে রয়েছেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪০ ওভার শেষে ৪ উইকেটে তাদের সংগ্রহ ২২০ রান। ক্রিজে আছেন রাজা (৯৩) ও রেজিস চাকাভা (৮৫)।

হাসান মাহমুদের তৃতীয় বলেই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে কিপারের গ্লাভসবন্দি হয়েছেন তাকুদজোয়ানাশে কাইতানো (০)। প্রায় একই ডেলিভারিতে তৃতীয় ওভারে গ্লাভসবন্দি করিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে জয়ের মঞ্চ গড়ে দেওয়া সেঞ্চুরিয়ান ইনোসেন্ট কাইয়াকেও (৭)। তাতে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় স্বাগতিক দল। ওয়েসলি মাধেভেরে কিছুক্ষণ মারুমানিকে সঙ্গ দিলেও তাকে থিতু হতে দেননি মিরাজ। লেগবিফোরের ফাঁদে ফেলে ২ রানেই তাকে সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন। 

তার পর অবশ্য ২২ রানের জুটি গড়ে ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন রাজা-মারুমানি। শুরু থেকে প্রান্ত আগলে খেলা মারুমানি ধীরে ধীরে দলকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখছিলেন। কিন্তু দলীয় ১৪.৬ ওভারে তাইজুলের ঘূর্ণিতে বিদায় নিশ্চিত হয় তার। বামহাতি স্পিনারের বল বুঝতে না পারায় বল লিডিং এজ হয়ে উঠে যায় ওপরে। বদলি ফিল্ডার মোহাম্মদ নাঈম ক্যাচ নিতে ভুল করেননি। মারুমানি ৪২ বলে সাজঘরে ফিরেছেন ২৫ রানে।

আবারও টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে করেছে ২৯০ রান। মাহমুদউল্লাহর হার না মানা ৮০ রানের সঙ্গে তামিমের ৫০ ও আফিফের ৪১ রানে ভালো সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে সফরকারীরা। যদিও প্রথম ইনিংসে ৩০৩ রান করেও হারতে হয়েছে তামিমদের।

সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচেও জ্বলে ওঠে তামিমের ব্যাট। এবার জিম্বাবুয়ে বোলারদের শাসন করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ব্যক্তিগত অর্জনে হাফসেঞ্চুরিও যোগ হয়েছে। কিন্তু ফিফটিতে আটকা পড়েন আবার। আগের ম্যাচে ৬২ রানের ইনিংস খেলা তামিম এবার আউট ৫০ রানেই। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার ৫৫তম হাফসেঞ্চুরি।

তামিমের সঙ্গে ৭১ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন এনামুল। লিটন না থাকায় প্রমোশন পেয়ে ওপেনিংয়ে নামার সুযোগ হয় তার। শুরুটা মন্দ ছিল না। তামিমকে সঙ্গ দিয়ে নিজেও স্কোর বাড়াতে সাহায্য করছিলেন। যদিও তার সেই পথচলা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ২৫ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২০ রান করে রান আউটের শিকার এই ডানহাতি ব্যাটার।

তার পর বড় জুটির আভাস ছিল মুশফিকুর রহিম-নাজমুল হোসেন শান্তর খেলাতে। সাবলীল ব্যাটিংয়ে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু তাদের পথচলায় ছেদ পড়ে ‍মুশফিকের আউটে। খানিক পর শান্তও ধরেন প্যাভিলিয়নের পথ।

আগের ওয়ানডেতে হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন ‍মুশফিক। ছিলেন অপরাজিত। আজ ওয়েসলি মাধেভেরের বলে ২৫ রানে ফিরে যান। মুশফিকের বিদায়ের পর অবিচল ছিলেন শান্ত। লিটন দাসের চোটে একাদশে জায়গা পেয়ে সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছিলেন এই ব্যাটার। কিন্তু ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস খুব বেশি বড় করতে পারেননি। ৩৮ রানে ফিরতে হয়েছে মাধেভেরের শিকার হয়েই। উইকেটকিপার রেজিস চাকাভার গ্লাভসে ধরার পড়ার আগে শান্ত ৫৫ বলের ইনিংস সাজান ৫ বাউন্ডারিতে।

১৪৮ রানে চতুর্থ উইকেট পড়ে গেলে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হাসে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট। প্রথম ম্যাচে তিনি ছাড়া হাফসেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ব্যাট করা সবাই। সেই অপূর্ণতা ঘুচলো বাঁচা-মরার ম্যাচে। অন্য প্রান্তে উইকেট হারালেও দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত খেলেছেন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ৮৪ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় ৮০ রানের ইনিংস। মাহমুদউল্লাকে যোগ্য সঙ্গে দিয়েছেন আফিফ হোসেন। পঞ্চম উইকেটে তারা গড়েন ৮১ রানের জুটি। আফিফ খেলেন ৪১ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৪১ রানের ইনিংস। এরপর লেজের দিকে শুধু মেহেদী হাসান মিরাজ ১৫ রানের ইনিংস খেলতে পেরেছেন।

জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে সফল বোলার সিকান্দার রাজা। এই স্পিনার ১০ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ওয়েসলি মাধেভেরে ৯ ওভারে ৪০ রান খরচায় পেয়েছেন ২ উইকেট।