‘মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে অন্যদের তুলনা চলে না’

এশিয়া কাপ থেকে ফিরে হুট করে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন মুশফিকুর রহিম। তার এই সিদ্ধান্তের পর থেকে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। তিনি অবসরের ঘোষণা না দিলেও বিশ্বকাপের দল থেকে ঠিকই বাদ পড়েছেন। অর্থাৎ, ‘পঞ্চপাণ্ডব’-এর চারজনকে ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া বিশ্বকাপে খেলবে বাংলাদেশ। অবশ্য তাদের ছাড়া বিশ্বকাপ দল গঠন করলেও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু মনে করেন, এই দুই ক্রিকেটারের সঙ্গে অন্যদের তুলনা চলে না।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে সেরার তালিকায় মুশফিকের নাম সবার ওপরেই থাকবে। কিন্তু টেস্ট ও ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তার পারফরম্যান্স খুব একটা উজ্জ্বল নয়। ব্যাটিং গড় ১৯.৪৮, স্ট্রাইকরেট ১১৪.৯৪- যা মুশফিকের মতো ব্যাটারের জন্য মোটেও সন্তোষজনক নয়। হতশ্রী পারফরম্যান্সে চক্ষুশূলে পরিণত হন মুশফিক।

বিশেষ করে, এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার ক্যাচ মিস ও ক্যাচ নিয়েও রিভিউ না নিতে পারায় ব্যর্থতা প্রবলভাবে সমালোচিত হয়। তোপের মুখে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলে সব সমালোচনা থামিয়ে দেন মুশফিক। ক্রিকেটের এই খুদে সংস্করণে ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে উইকেটকিপার ব্যাটার খেলেছেন ১০২ ম্যাচ। বাংলাদেশের হয়ে ১০০’র বেশি টি-টোয়েন্টি খেলা তৃতীয় ক্রিকেটার তিনি। মূলত তার ব্যাটিং গড় ও স্ট্রাইক রেট নিয়েই সমালোচনা হয়েছে বেশি। ১ হাজার ৫০০ রান করা ব্যাটারের মধ্যে মুশফিকই একমাত্র, যার ব্যাটিং গড় ২০-এর নিচে।

এই উইকেটকিপার অবসর নিয়ে সমালোচনা থামিয়ে দিলেও মাহমুদউল্লাহ সেই পথে হাঁটেননি। গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই সমালোচনার তীরে বিদ্ধ মাহমুদউল্লাহ। একে তো নিজের ব্যাটে রান নেই, তার ওপর দলও হারের বৃত্তে আটকে।

২০১৯ সালে সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ হলে নেতৃত্ব পান মাহমুদউল্লাহ। ভারতের বিপক্ষে দিল্লিতে জয় দিয়ে নেতৃত্বের পথচলা শুরু হলেও পরের সময়টা সুখকর ছিল না। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ৪৩ টি-টোয়েন্টিতে জয় পেয়েছে ১৬টি, হেরেছে ২৬টি আর একটি ম্যাচে ফল হয়নি।

শুধু নেতৃত্বে নয়, পারফরম্যান্সেও পিছিয়ে পড়েন মাহমুদউল্লাহ। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে সর্বশেষ হাফসেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। এরপর ১৬ ম্যাচের সর্বোচ্চ ছিল অপরাজিত ৩১। বিশের ঘর পেরোতে পেরেছেন মাত্র পাঁচবার! পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ে মাহমুদউল্লাহর কাছ থেকে শতভাগ পাওয়া যায়নি। সবকিছু বিবেচনা করেই ভবিষ্যতের স্বার্থে এই অলরাউন্ডারকে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন নির্বাচকরা।

তবে কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে দলকে খুব বেশি সাফল্যে ভাসাতে না পারলেও ওয়ানডে ক্রিকেটে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর অবদান অনেক। বহু ম্যাচে দলকে জিতিয়ে দেশকে আনন্দে ভাসিয়েছেন তারা। ফলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল থেকে মাহমুদউল্লাহর বাদ পড়া এবং বিশ্বকাপের আগে মুশফিকের সরে দাঁড়ানো- কোনও কিছুই তাদের অবদানকে খাটো করতে পারবে না বলে জানালেন প্রধান নির্বাচক নান্নু।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এই দুজনের (মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ) অবদান কিন্তু অনস্বীকার্য। অন্য কারও সঙ্গে তাদের তুলনা চলে না। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দীর্ঘ সময় সার্ভিস দিয়ে গেছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একটা ভালো অবস্থানে নিয়ে গেছে। ওদের সঙ্গে অন্য খেলোয়াড়দের তুলনা করতে পারবেন না।’

তবে তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ করে দিতে এবং বিকল্প খেলোয়াড়ের সন্ধান পেতে কঠিন এই বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচক, ‘ভালো খেলোয়াড় তৈরির জন্য সময়ের প্রয়োজন। সাথে সাথে বিকল্প তৈরি করতে পারবেন না, সময় দিতে হয়। আমাদের বসয়ভিত্তিকে যথেষ্ট ভালো খেলোয়াড় আছে, ওদের নার্সিং চলছে। আশা করছি, ওরা দেশের জন্য ভালো কিছু করবে।’