শক্তি কমিয়েও ভারতের বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস জয়

‘বাংলাদেশ দল তখনই খুব ভালো খেলে, যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। ওই সব ম্যাচে বাংলাদেশ দল হিসেবে খুব ফোকাসড থাকে। ফলে সামান্যতম ভুলের বিষয়েও সতর্ক থাকার প্রভাব ম্যাচে পড়ে।’ কথাগুলো কোচ ও বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদিন ফাহিমের।

শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে পুরো দলকেই ক্রিকেট বিশ্লেষক নাজমুল আবেদিন ফাহিমের কথাগুলোর মতোই লেগেছে! বিশেষ করে স্কোরবোর্ডে আড়াইশোর মতো রান হওয়ার পর বোলিং-ফিল্ডিংয়ে সেরাটা দিয়ে ভারতকে ৬ রানে হারিয়ে শেষটা রাঙানোয়।

প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে নিয়মিত একাদশের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে বিশ্রাম দিয়েছিল বাংলাদেশ। ভারতও পুরো শক্তির দল নিয়ে খেলেনি। একাদশে পাঁচটি বদল এনেছে ভারত। বাংলাদেশের বিপক্ষে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে বিরাট কোহলি, হার্দিক পান্ডিয়া, কুলদীপ যাদব, জাসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজকে। ভারতের হয়ে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয় ব্যাটার তিলক বর্মার।

বাংলাদেশতো নিয়মিত তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদকে বিশ্রাম দিয়েছে। পাশাপাশি মিডল অর্ডারে মুশফিককে ছুটি দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সবমিলিয়ে ব্যাটিং যেমনই হোক আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশের বোলিংয়ে ছিল সাদামাটা।

মোস্তাফিজের সঙ্গে অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে সাজানো হয় পেস আক্রমণ। পাশাপাশি দুই বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ও সাকিব আল হাসানের সঙ্গে অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও শেখ মেহেদী হাসানতো ছিলেনই। এমন বোলিং আক্রমণ নিয়েই ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপকে থামিয়ে রেখে দারুণ এক জয় নিয়ে এশিয়া কাপের শেষটা রাঙালো বাংলাদেশ!

দ্রুত টপ অর্ডারকে ফিরিয়ে দিয়ে সহজেই ম্যাচ জিততে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। শেষের দিকে অক্ষর প্যাটেল হয়ে উঠছিলেন বড় বাধা। মোস্তাফিজের বলে প্যাটেলের ক্যাচটা নিয়েই তরুণ তানজীদ হাসান তামিম আকাশে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুড়লেন। অক্ষরের আউটে যে স্বস্তি নেমে এসেছিল, সেটা শেষ হয়েছে সান্ত্বনার এক জয়ে। শেষ ওভারে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১২ রানের। অভিষিক্ত জুনিয়র সাকিবের দারুণ বোলিংয়ে শেষ দুই ব্যাটার প্রসিধ কৃষ্ণা ও মোহাম্মদ শামি এই হিসেব মেলাতে পারেননি। ওই ওভারের পঞ্চম বলে শামি রান আউট হলে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়।

৪৯তম ওভারে অক্ষরের আগে বাংলাদেশের জয়ের মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শুবমান গিল। নিয়মিত বিরতিতে ভারতের একের পর এক উইকেট গেলেও এক প্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রাখেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১২১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে আউট হন এই ব্যাটার। এই ব্যাটার অতিমানবীয় ব্যাটিং না করলে আরও বড় ব্যবধানে হারতে হতো রোহিত শর্মার দলকে।

ম্যাচের শুরুতে ১৭ রানের মধ্যে দুই উইকেট তুলে নেন অভিষিক্ত পেসার তানজিম হাসান সাকিব। শূন্য রানে রোহিত শর্মা ও তিলক ভার্মাকে ব্যক্তিগত ৫ রানে ফেরান তিনি। এরপর লোকেশ রাহুল ও গিলের ৫৭ রানের জুটি। লোকেশ আউট হওয়ার পর দলের হাল ধরেন শুভমান। সবমিলিয়ে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে বিরাট কোহলি, হার্দিক পান্ডিয়ার ওভার শুক্রবার স্পষ্ট ছিল!

বোলিংয়ে শক্তি হারালেও সাকিবের কাছে অপশন ছিল অনেক। ফলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবাইকে ব্যবহার করতে পেরেছেন তিনি। তিন ম্যাচ পর একাদশে ফেরা মোস্তাফিজ দারুণ বোলিং করেছেন। ৮ ওভারে ৫০ রান খরচায় তার শিকার তিনটি উইকেট। অভিষিক্ত জুনিয়র সাকিব ৩২ রান খরচায় শিকার করেছেন দুটি উইকেট। এ ছাড়া শেখ মেহেদী দুটি এবং মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান একটি করে উইকেট নেন।

বোলিং আক্রমণে ভারতের বোলাররা ছিলেন ছন্নছাড়া। প্রথম কয়েক ওভার ভালো করলে শেষ পর্যন্ত সেটি টেনে নিতে পারেননি। যদিও টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েই চেপে ধরেন ভারতীয় বোলাররা। অন্য সব ম্যাচের মতো শুক্রবারও বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যর্থ। ৫৯ রানে চার উইকেট হারানোর পর সাকিব ও তাওহীদ হ্রদয় দলের হাল ধরেন। চার বছর পর সেঞ্চুরি খরা কাটানো সম্ভাবনা জাগিয়ে সাকিব ৮০ রানে আউট হলে ১০১ রানের জুটি ভাঙে। হৃদয় ৫৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন। এরপর নাসুম ৪৪, শেখ মেহেদী ২৯ ও জুনিয়র সাকিব ১৪ রানে ভর করে বাংলাদেশ ২৬৬ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয়। বাংলাদেশ হারায় ৮ উইকেট।

ব্যাটিং খুব ভালো না হলেও বোলিংয়ে বাংলাদেশ দারুণ করেছে। চার স্পিনারের সঙ্গে দুই পেসাররা মিলে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপকে চেপে রাখতে পেরেছেন। পাশাপাশি ফিল্ডিংও ছিল অসাধারণ। সবকিছুর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই জয়। বিশ্বকাপের আগে ভারতের বিপক্ষে এই জয় আত্মবিশ্বাসের রসদ দিলেও ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটানোর সুযোগ নেই। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। তারপর দুটি ওয়ার্মআপ ম্যাচ। এই ম্যাচগুলোতে ভালো ব্যাটিং করে সেরা ছন্দ নিয়ে বিশ্বকাপে না যেতে পারলে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যাবে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের।