প্রাইম ব্যাংক স্কুল ক্রিকেটে সরকারি কেজি ইউনিয়ন হাইস্কুলকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে কদমতলা পূর্ব বাসাবো স্কুল অ্যান্ড কলেজ। বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের টুর্নামেন্টের ফাইনালে বাসাবোর স্কুলের জয়ের নায়ক মো. সিফাত শাহরিয়ার সামি। তার অনবদ্য সেঞ্চুরিতে স্কুল ক্রিকেটের শিরোপা জেতে বাসাবোর এই স্কুলটি। ব্যাটিংয়ে ১৪৮ রানের ইনিংসের পর বোলিংও শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু লম্বা সময় মাঠে থাকার কারণে হিটস্ট্রোক করে বসেন কিশোর এই ক্রিকেটার। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দলকে জেতানোর পর মাঠে না থাকতে পারলেও ম্যাচসেরার পুরস্কারটি পেয়েছেন তিনিই।
স্কুল ক্রিকেটের ফাইনালটি মাঠে গড়ানোর কথা ছিল সোমবার। কিন্তু বেরসিক বৃষ্টিতে হোম অব ক্রিকেটে লড়াইয়ের অপেক্ষায় থাকা ক্রিকেটারদের ভীষণ মন খারাপ হয়। কিশোর এই ক্রিকেটারদের কথা বিবেচনা করে ম্যাচটি নতুন সূচিতে বুধবারে নিয়ে আসা হয়। দারুণ রোমাঞ্চ সঙ্গী করে শিরোপার লড়াইয়ে বুধবার মাঠে নেমেছিলেন পিরোজপুর ও ঢাকার দুই স্কুলের ক্রিকেটাররা।
টস জিতে বাসাবোর স্কুলকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল সরকারি কেজি ইউনিয়ন স্কুলের অধিনায়ক। কিন্তু সকালের উইকেটে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে যায় কদমতলা। ৪১ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর বাসাবোর হাল ধরেন আগের সব ম্যাচ মিলিয়ে মাত্র ৪৪ রান করা সিফাত। এই ক্রিকেটারই হয়ে গেলেন মহানায়ক। আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। শেষ ব্যাটার হিসেবে যখন আউট হন দলের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ২৮৬ রানে। আগের ম্যাচগুলোতে দুইশর আশপাশে রান করলেও ফাইনালে বাসাবো তিনশর কাছাকাছি রান তুলে জয়ের পথটা আগেই তৈরি করে রেখেছে।
১১৫ বলে ৯ চার ও ৬ ছক্কায় ১৪৮ রানের ইনিংস খেলেন সিফাত। তার এমন বিধ্বংসী ইনিংস দেখে হতবাক কোচ নিজেই। দলের প্রকৃত বোলার কীভাবে এই রান করেন, কোচের যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। তবে মাঠে নামার আগে সিফাতকে কোচ অনুপ্রাণিত করেছিলেন। এই অনুপ্রেরণা নিয়েই মিরপুরের ২২ গজে রাজত্ব করেছেন সিফাত। বাসাবোর স্কুলের কোচ মোস্তাফিজ রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘ওর ব্যাটিংটা শতভাগ বিস্ময়কর। বোলিংয়ের কারিশমা অনেক ভালো। আমাদের মোস্তাফিজের কাটিংয়ের মতোই বোলিং। সব ধরনের বল ও করতে পারে। ও ব্যাটিং পারে, একদমই পারে না এমন না। সোজা সোজা ব্যাট করতে পারে।’
এই কোচ আরও বলেছেন, ‘ওকে শুধু বললাম, মাঠ মিরপুরের। জীবনে আর কখনও সুযোগ আসবে কি না আমি জানি না। তোমার জন্য হতে পারে এটাই শেষ মঞ্চ অথবা জাতীয় দলের চেইনে ঢুকতে পারো। হয়তো ও কথাটা মাথায় নিয়েছে। শুরুতে পিচে থেকেছে। পরে সময় যত গেছে মনে হয়েছে অনেক ভালো ব্যাটিয়ে করেছে। আমার দৃষ্টিতে সে এত বড় ব্যাটার না।’
দলের সেরা ব্যাটার না হয়ে ফাইনালে তার ব্যাটে চড়েই পিরোজপুরের কেজি স্কুলকে ২৮৭ রানের লক্ষ্য দেয় বাসাবোর স্কুল। এছাড়া নাশিত মোস্তাকিম ৩০ ও আলিফ মাহমুদ খেলেন ৪২ রানের অপরাজিত ইনিংস।
জবাবে খেলতে নেমে পিরোজপুরের বোলারদের মতো ব্যাটাররাও খেই হারান। মাত্র ৯৯ রানে অলআউট হয় স্কুলটি। টুর্নামেন্টে প্রথমবার বোলিং করতে নেমে হ্যাটট্রিক করে ফেলেন বাসাবোর স্কুলের অফস্পিনিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হোসেন। ৪.৪ ওভার বোলিং করে ৪ রান খরচায় তার শিকার চার জন। তার বোলিংয়ে ৯৯ রানে অলআউট হয়ে পিরোপুরের স্কুলটি ১৮৭ রানের বড় ব্যবধানে হেরে যায়।
প্রাইম বাংক স্কুল ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কদমতলা পূর্ব বাসাবো স্কুল ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার প্রাইজমানি পেয়েছে। পাশাপাশি চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফিও পেয়েছে দলটি। অন্যদিকে রানার্সআপ সরকারি কেজি ইউনিয়ন হাই স্কুল প্রাইজমানি হিসেবে পেয়েছে ৭৫ হাজার টাকা।