প্রথম দিন শেষ, সংক্ষিপ্ত স্কোর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে ৮৪ ওভারে ২৫০/৫ (গ্রিভস ১১*, ডা সিলভা ১৪*; ব্র্যাথওয়েট ৪, কার্টি ০, লুইস ৯৭, হজ ২৫, আথানেজ ৯০)
প্রথম সেশনে বাংলাদেশ দ্রুত দুই উইকেট তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চাপে ফেলেছিল। অস্বস্তিকর এই পরিস্থিতি সামাল দেন মিকাইল লুইস। কাভেম হজ ও আলিক আথানেজের কাছ থেকে দারুণ সঙ্গ পান তিনি। ম্যাচ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দিন শেষ করতে যাচ্ছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু শেষ ঘণ্টায় বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট নিয়ে। শুক্রবার আলোর স্বল্পতায় আগেভাগে প্রথম দিনের খেলা শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছে ২৫০ রান, বাংলাদেশ নিয়েছে পাঁচ উইকেট।
প্রথম ঘণ্টায় বেশ সাবধানী ব্যাটিং করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তারপর তাসকিন আহমেদের টানা দুই ওভারে উইকেট হারিয়ে বেকায়দায় পড়েছিল তারা। সেখান থেকে হজকে নিয়ে দলকে টেনে তোলেন লুইসা্।
২ উইকেটে ৫০ রান করে লাঞ্চে যায় স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় সেশনে এই জুটি বড় হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছিল। তাইজুল ইসলামের দুর্দান্ত থ্রোতে ৫৯ রানের জুটি ভেঙে যায়। হজ রান আউট হন। দ্বিতীয় সেশনে ওই একটি উইকেটই পায় বাংলাদেশ, যদিও মাত্র ৬৬ রান দিয়েছিল।
তারপর আলিক আথানেজ ও লুইসের শক্ত জবাবে দিনটা পুরোপুরি নিজেদের করে নেওয়ার পথে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। চা বিরতির পর তারা রানের গতি বাড়ায়। দুজনই প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির খুব কাছে ছিলেন। কিন্তু দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামের শিকার হন তারা শেষ বিকালে।
৯৭ রানে শাহাদাত হোসেন দিপুকে ক্যাচ দেন লুইস। ৯০ রান করে লিটন দাসের গ্লাভসে ধরা পড়েন আথানেজ। দুজন চতুর্থ উইকেটে ১৪০ রান যোগ করেন। তাদের ক্রিজ ছাড়া করে শেষ সেশনে ম্যাচে ফেরার আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ। এই সেশনে তারা পেয়েছে দুটি উইকেট, দিয়েছে ১৩৪ রান। প্রথম দুই সেশনের চেয়েও বেশ রান করেছে তারা বিকালের সময়টাতে।
জাস্টিন গ্রিভস ও জশুয়া ডা সিলভা ২২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দিন শেষ করেছেন। গ্রিভস ১১ ও ডা সিলভা ১৪ রানে অপরাজিত আছেন।
লুইসের পর নার্ভাস নাইন্টিজে আথানেজকে ফেরালো বাংলাদেশ
প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে কয়েক রান দূরে থাকতে আউট হন মিকাইল লুইস। মেহেদী হাসান মিরাজের শিকার হন তিনি। মাত্র তিন রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি। একই দুর্ভাগ্য বরণ করতে হলো আলিক আথানেজকে। ৯০ রান করে তাইজুল ইসলামের বলে লিটন দাসের গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি। ১৩০ বলে ১০ চার ও ১ ছয়ে সাজানো ছিল তার ইনিংস। ২২৮ রানে পঞ্চম উইকেট হারালো উইন্ডিজ।
লুইসকে তিন রানের আক্ষেপে পোড়ালেন মিরাজ
৯০ রানে স্লিপে ক্যাচ মিস করে মিকাইল লুইসকে জীবন দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সেই নষ্ট সুযোগের প্রায়শ্চিত্ত করলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। নিজে বল হাতে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটারকে শাহাদাত হোসেন দিপুর ক্যাচ বানান তিনি।
তাতে চতুর্থ উইকেটে আলিক আথানেজের সঙ্গে তার ২২১ বলে ১৪০ রানের জুটি ভাঙলো। লুইস প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি বঞ্চিত হলেন মাত্র তিন রানের জন্য। ২১৮ বলে ৯ চার ও ১ ছয়ে ৯৭ রান করেন ক্যারিবিয়ান ওপেনার। ২২৪ রানে চতুর্থ উইকেট হারালো স্বাগতিকরা।
আথানেজের ফিফটির পর লুইসের ক্যাচ ফেললেন মিরাজ
বাংলাদেশের অধিনায়ক সবচেয়ে বড় উইকেট নেওয়ার সুযোগ নষ্ট করলেন। স্লিপে মিস করলেন মিকাইল লুইসের ক্যাচ। এর আগে তার সঙ্গী আলিক আথানেজ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন।
৬৫তম ওভারের প্রথম বলে তাইজুল ইসলামকে অনসাইডে মেরে সিঙ্গেল নেন আলিক আথানেজ। ৮৫ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি হাঁকান তিনি।
পরের বলে ৯০ রানে জীবন পান লুইস। তার আলগা শটে বল স্লিপের দিকে ছোটে। একটু উঁচুতে থাকা বল ডানদিকে দুই হাত বাড়িয়েও ধরতে পারেননি মিরাজ। এরই মধ্যে দুজনের জুটি একশ ছাড়িয়ে গেছে। ৮৪ রানে তিন উইকেট পড়ার পর তারা জুটি বাঁধেন।
লুইস-আথানেজ জুটিও পঞ্চাশ ছাড়ালো
২৫ রানে ২ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ম্যাচে ফেরালেন মিকাইল লুইস। তাতে দারুণ সঙ্গ পেয়েছেন কাভেম হজের (২৫) কাছ থেকে। দ্বিতীয় সেশনে এই জুটি ৫৯ রান করে ভেঙে যায়। হজ রান আউট হন। তারপর চতুর্থ উইকেটে ১২৪ বলে লুইসের সঙ্গে আলিক আথানেজের জুটিও পঞ্চাশ পার করলো।
লুইসের ব্যাটে দ্বিতীয় সেশন ওয়েস্ট ইন্ডিজের
দ্বিতীয় সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ লাঞ্চের আগের ধাক্কা ভালোভাবে কাটিয়ে উঠেছে। মিকাইল লুইসের হাফ সেঞ্চুরিতে ৩ উইকেটে ১১৬ রানে চা বিরতিতে গেছে তারা। ৭১ রানে লুইজ ও আলিক আথানেজ ১৩ রানে অপরাজিত আছেন। ৯৯ বলে ৩২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে শেষ সেশনে ব্যাটিং শুরু করবেন তারা।
এই সেশনে বাংলাদেশ একমাত্র উইকেটটি নেয় রান আউট করে। কাভেম হজকে ফিরিয়ে ৫৯ রানের জুটি ভাঙে সফরকারীরা।
দ্বিতীয় সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৬৬ রান তুলেছে, বাংলাদেশ পেয়েছে একটি উইকেট।
আথানেজের চারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের একশ
আলিক আথানেজ একটু মেরেই খেলার চেষ্টা করছেন। মেহেদী হাসান মিরাজের একটি বল স্লগসুইপ করতে গিয়ে ভুল করেন। ভাগ্য ভালো যে মিড অনে থাকা তাসকিন আহমেদ নাগালে বল পাননি। বাংলাদেশি ফিল্ডার বাঁ দিকে দৌড়ে গিয়ে বল ধরার চেষ্টা করেন। বাতাসের কারণে বলটি তার হাতছাড়া হয়ে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ব্যাটার পরে একটি চার মেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর একশতে নেন। ৪৬ ওভারে ৩ উইকেটে ১০০ রান স্বাগতিকদের।
৫৯ রানের জুটি ভাঙলো বাংলাদেশ
মিকাইল লুইসের সঙ্গে টপ অর্ডারের দুই ব্যাটার উপযুক্ত সঙ্গ দিতে পারেননি। চার নম্বরে নেমে কাভেম হজ তার সঙ্গে শক্ত হাতে হাল ধরেছিলেন। ২৫ রানে ২ উইকেট হারানোর পর তারা দ্বিতীয় সেশনে জুটিটা লম্বা করার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আত্মাহুতি দিলেন হজ। ৫৯ রানের জুটি ভেঙে দিলো বাংলাদেশ। ৩ উইকেটে ৮৪ রান ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
৩৮তম ওভারের তৃতীয় বলে ফাইন লেগ অঞ্চলে পুল করে দুটি রান নিতে চেয়েছিলেন হজ। কিন্তু তাইজুল ইসলামের দুর্দান্ত থ্রোয়ে তাকে রান আউট করেন লিটন দাস। ৬৩ বলে ২ চারে ২৫ রান করেন হজ।
লুইসের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি
তাসকিন আহমেদের পরপর দুই ওভারে দুই সতীর্থ ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নে ফিরে যেতে দেখেছেন মিকাইল লুইস। লাঞ্চের পর তার ওভারেই হাফ সেঞ্চুরি মারলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার। ৩২তম ওভারে ১০৪ বলে ৬ চারে দ্বিতীয় ফিফটির দেখা পান তিনি। কাভেম হজের সঙ্গে এরই মধ্যে পঞ্চাশ রানের জুটি গড়ে ফেলেছেন লুইস। ২৫ রানে দুই উইকেট পড়ার পর দুজনে জুটি গড়েন।
৫০ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে প্রথম সেশন বাংলাদেশের
অ্যান্টিগায় সিরিজের প্রথম টেস্টে টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়ে বাংলাদেশ হতাশ করেনি। হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদের সুনিপুণ বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করতে দেয়নি তারা। শুরু থেকে বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে স্বাগতিকদের রানের লাগাম টেনে ধরে। মাঝে তাসকিন ঝলক দেখান। ১৪তম ওভারে ২৫ রানে ভাঙেন উদ্বোধনী জুটি। টানা দুই ওভারে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ও কেসি কার্টিকে ফেরান এই পেসার।
আউটসাইড এজ হয়ে কয়েকবার ভুগেছেন আরেক ব্যাটার মিকাইল লুইস, কিন্তু কোনও ফিল্ডার তার দুর্বলতার সুযোগ নিতে পারেননি। লাঞ্চে খেলা হয়েছে ২৩ ওভার, এই সময়ে বাংলাদেশ ২ উইকেট নিয়েছে, উইন্ডিজের স্কোরবোর্ডে জমা পড়েছে ৫০ রান।
তাসকিনের দ্বিতীয় আঘাত
৯ বলের মধ্যে দুটি উইকেট পেয়ে গেলেন তাসকিন আহমেদ। ৪ রানে অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে এলবিডব্লিউ করার পর বাংলাদেশের পেসার তার পরের ওভারে কেসি কার্টিকে মিড অনে তাইজুল ইসলামের ক্যাচ বানালেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটার ৮ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি। ২৫ রান থাকতেই দুই ব্যাটারকে হারালো স্বাগতিকরা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ককে ফেরালেন তাসকিন
দারুণ বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অস্বস্তিতে রেখেছিল বাংলাদেশ। স্বাগতিকরা রান করতে হিমশিম খাচ্ছিল। অবশেষে তাদের উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ তাদের দারুণ শুরুটা আরও জাঁকালো করলো। তাসকিন আহমেদ তার চতুর্থ ওভারে এলবিডব্লিউ করে ফিরিয়েছেন উইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেগই ব্র্যাথওয়েটকে।
১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে ২৫ রানে বাংলাদেশ ভেঙেছে স্বাগতিকদের ওপেনিং জুটি। তাসকিনের ফুল লেংথের বল পেছনে পায়ে লাগলে এলবিডব্লিউর আবেদনে আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা আউট দেন। ৩৮ বলে মাত্র চার রানের ইনিংস ব্র্যাথওয়েট বাঁচাতে পারেননি রিভিউ নিয়েও।
বাংলাদেশের দারুণ বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সতর্ক ব্যাটিং
প্রথম দুটি ওভারে মেডেন দিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেছে। হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলামের এই ওভার দুটিতে কোনও রান নিতে পারেনি স্বাগতিকরা। তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে রানের খাতা খোলে তারা। অ্যান্টিগা টেস্টে বল হাতে বাংলাদেশের দারুণ শুরু হলো। ১০ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর বিনা উইকেটে ২২ রান।
টসে জিতেছে বাংলাদেশ
অ্যান্টিগায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে টস জিতেছে বাংলাদেশ। টস জিতে শুরুতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।
টস জিতে মিরাজ বলেছেন, প্রথম ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই উইকেট ভালো মনে হলেও প্রথম ঘণ্টার সুবিধাটা কাজে লাগাতে চান তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটও জানিয়েছেন, টস জিতলে তিনিও বোলিং নিতেন।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামের মাঠ বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য বধ্যভূমি! এই মাঠে সর্বশেষ দুই টেস্টেই ব্যাটাররা ব্যর্থ ছিলেন। ২০১৮ সালে প্রথমবার খেলতে গিয়ে তারা প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় মাত্র ৪৩ রানে। যা টেস্টে বাংলাদেশের দলীয় সর্বনিম্ন। চার বছর পরও ছিল একই পরিণতি! প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা।
একাদশে কারা
ওয়েস্ট ইন্ডিজ গতকালকেই একাদশ ঘোষণা করেছিল। একাদশে রয়েছে চার পেসার। তারা হলেন- আলজারি জোসেফ, কেমার রোচ, শামার জোসেফ ও জেইডেন সিলস। এর বাইরে মিডিয়াম পেস বল করতে পারেন জাস্টিন গ্রিভসও। বাংলাদেশ অবশ্য তিন পেসার ও দুই স্পিনার নিয়ে মাঠে নেমেছে।
বাংলাদেশ একাদশ: মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, মুমিনুল হক, শাহাদাত হোসেন, লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), জাকের আলী, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ: ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট (অধিনায়ক), মিকাইল লুইস, আলিক আথানেজ, কেসি কার্টি, জশুয়া ডা সিলভা (উইকেটরক্ষক), জাস্টিন গ্রিভস, কাভেম হজ, আলজারি জোসেফ, শামার জোসেফ, কেমার রোচ ও জেইডেন সিলস।