রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু চেপুকে ১৭ বছরে প্রথম জয় দেখেছিল চলতি আইপিএলের শুরুতে। চেন্নাই সুপার কিংস ওই হারের শোধ একটুর জন্য তুলতে পারলো না চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে। তবে রোমাঞ্চকর এক ম্যাচ উপহার দিলো এই আসরে সবার আগে বিদায় নেওয়া দলটি। আয়ুশ মাত্রে ও রবীন্দ্র জাদেজার ব্যাটে বেঙ্গালুরুকে চোখ রাঙালেও হারের আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে চেন্নাইকে।
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বেঙ্গালুরু ৫ উইকেটে ২১৩ রান করে। জ্যাকব বেথেল ও বিরাট কোহলির সমান ৩৩ বলের ঝড়ো ইনিংসে বড় সংগ্রহের ভিত গড়েছিল বেঙ্গালুরু। এই জুটি ভাঙার পর তাদেরকে চেপে ধরেছিল চেন্নাই। তবে রোমারিও শেফার্ড যৌথভাবে দ্বিতীয় দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরিতে দলীয় ইনিংস ঘুরিয়ে দেন। চেন্নাইয়ের সামনে ২১৪ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুড়ে দেয় বেঙ্গালুরু। তারপর তাদেরকে পরাজয়ের শঙ্কায় ফেলেছিল চেন্নাই। কিন্তু ২ রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পায় বেঙ্গালুরু। ৫ উইকেটে ২১১ রানে থামে চেন্নাই।
বেথেল ও কোহলি ওপেনিংয়ে ৯৭ রানের জুটি গড়েন। দশম ওভার শেষ হওয়ার এক বল বাকি থাকতে বেথেলকে ৫৫ রানে ফেরান মাথিশা পাথিরানা। বেঙ্গালুরু ওপেনার ৮ চার ও ২ ছয়ে তার ইনিংস সাজান। এক ওভার বিরতি দিয়ে কোহলিও ফিরে যান। পাঁচটি করে চার ও ছয়ে ৬২ রান করে স্যাম কারানের শিকার তিনি।
পাথিরানার বোলিংয়ে ২ উইকেটে ১২১ রান করা বেঙ্গালুরু ১৭.৪ ওভারে ১৫৭ রানে পঞ্চম ব্যাটারকে হারায়।
ক্রিজে নেমে ঝড় তোলেন শেফার্ড। ইনিংসের শেষ ১৪ বলের সবকটি একাই খেলেন তিনি। ১৯তম ওভারে খলিল আহমেদকে ৪ ছয় ও দুটি চার মেরে ৩৩ রান তোলেন উইন্ডিজ ব্যাটার। তিন উইকেট নিয়ে চেন্নাইয়ের সফল বোলার পাথিরানা শেষ ওভারে ছাড় পাননি। দুটি চার ও দুটি ছয়ে ২১ রান তোলেন শেফার্ড। শেষ বলে ছক্কা মেরে ১৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। এক বলের জন্য ২০২৩ সালে গড়া রাজস্থান রয়্যালসের যশস্বী জয়সাওয়ালের (১৫ বল) দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড ছুঁতে পারেননি তিনি। শেফার্ড চারটি চার ও ছয়টি ছয় মেরে ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।
লক্ষ্যে নেমে ৫৮ রানে দুটি উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছিল চেন্নাই। আয়ুশ মাত্রে ও রবীন্দ্র জাদেজা দারুণ জুটিতে একটা সময় জয়ের আশা জাগান। ১৬ ওভার শেষে ২ উইকেটে তাদের স্কোর ছিল ১৭১ রান।
লুঙ্গি এনগিডি নিজের শেষ ওভার করতে বল হাতে নেন। ১৭তম ওভারে দারুণ ব্রেকথ্রু আনেন তিনি টানা দুই বলে উইকেট নিয়ে। আগের ওভারে রজত পতিদারের হাতে জীবন পাওয়া আয়ুশ আক্ষেপে পুড়ে ক্রুনাল পান্ডিয়ার ক্যাচ হন। ৪৮ বলে ৯ চার ও ৫ ছয়ে ৯৪ রানে আউট হন তিনি। ভেঙে যায় ১১৪ রানের জুটি।
প্রোটিয়া পেসারের পরের বলে এলবিডব্লিউ তার স্বদেশী ডেভাল্ড ব্রেভিস। রিভিউ নিতে চেয়েও সময় ক্ষেপণ করে গোল্ডেন ডাক মেরে বিদায় নেন তিনি।
মহেন্দ্র সিং ধোনি সিঙ্গেল নিয়ে এনগিডিকে হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেতে দেননি। পরের বলে জাদেজা ছক্কা মেরে ব্যবধান কমান।
১৮তম ওভারে সুয়াশ শর্মা আঁটসাট বোলিংয়ে ৬ রান দিয়ে চেন্নাইয়ের লাগাম টেনে ধরেন। শেষের আগের ওভারে বাউন্ডারিতে কোহলি অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ ছেড়ে জাদেজাকে দ্বিতীয়বার জীবন দেন। তার হাত ফসকে সীমানা ছাড়ায় বল। একই ওভারে ধোনি ছক্কা মারেন। ওই ওভারে আসে ১৪ রান।
শেষ ওভারে লাগতো ১৫ রান। যশ দয়াল প্রথম দুই বলে সিঙ্গেল দেওয়ার পর ধোনিকে (১২) ফেরান। ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার শিবম দুবে নেমেই ছক্কা মারেন, বলটি নো ছিল। ৭ রান যোগ হয় চেন্নাইয়ের স্কোরবোর্ডে। শেষ ৩ বলে ৬ রান প্রয়োজন ছিল, কিন্তু দুবে ও জাদেজা তিন বলেই সিঙ্গেল নেন। যশের দারুণ বোলিংয়ে জয় পায় বেঙ্গালুরু। ৪৫ বলে ৮ চার ও ৩ ছয়ে ৭৭ রানে অপরাজিত ছিলেন জাদেজা।
১১ ম্যাচে ৮ জয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে ফের শীর্ষে ফিরলো বেঙ্গালুরু। সমান ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। ১০ ম্যাচ খেলে সমান পয়েন্ট নিয়ে তিনে গুজরাট টাইটান্স (১৪)। চেন্নাই ১১ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে সবার শেষে।