তীরে এসে ডুবলো তরি

000_916SIমুশফিক-রিয়াদের একটুখানি ভুলে ভারতের বিপক্ষে এক রানের ব্যবধানে হেরেছে টাইগাররা। তাদের এমন ভুলে ম্যাচ শেষে হাসির বদলে কাঁদতে হয়েছে বাংলাদেশকে। অথচ তাদের দুজনের বীরত্বে ম্যাচটি প্রায় জিতেই গিয়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচটি জিতে গেলে অবধারিতভাবে নায়ক হতেন তারা। অথচ জয়ের জন্য যখন ৩ বলে প্রয়োজন ২ রান তখন মুশফিকুর রহিম-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যেভাবে আউট হলেন তাতে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে তাদের।

মুশফিক পরপর দুটি চার মেরে যখন মুশফিক আউট হলেন, তার দেখানো পথে হেঁটেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। হার্দিক পান্ডের বলে একই ফিল্ডারের হাতে তালুবন্দি হয়ে বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্নটা মাটিচাপা দিয়ে আসেন তারা। শেষ ওভারে ক্রিজে অলরাউন্ডার শুভাগত হোম! প্রয়োজন ১ বলে দুই রান। কিন্তু শুভাগত ব্যাটে বলই লাগাতে পারলেন না। শেষে এক রান নিতে গিয়ে মুস্তাফিজ রা্ন আউট হলে বাংলাদেশ ম্যাচ হারে ১ রানের ব্যবধানে। এই এক রানে হারের কষ্টটা অনেকদিন ভোগাবে বাংলাদেশকে। যখনই ভারতের মুখোমুখি হতে হবে লাল-সবুজদের, তখনই হয়তো এই ক্ষতটার কথা মনে পড়বে।

জয়ের উৎসবের প্রস্তুতি নেওয়া বাংলাদেশ উল্টো ধোনিদের উচ্ছ্বাস দেখেছে। ম্যাচ জিতে যেভাবে তারা উল্লাসে মেতে উঠলেন তাতে মনে হতেই পার বিশ্বকাপটাই জিতে ফেলেছেন বোধহয়! আজ মিথুনের উইকেট থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি উইকেটে পতনে ছিল গগনবিদারী চিৎকার। জয়ের পর শেখর ধাওয়ান-বিরাট কোহলি উল্লাস করতে করতে ভুলেই গেলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে করমর্দন করার কথা!

বুধবার ম্যাচের পুরো গ্যালারি ‘ভারত জিতেগা-ভারত জিতেগা’ ধ্বনিতে গর্জন তুলেছে। ৫০ হাজার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়ামে মাত্র হাজার খানেক বাংলাদেশি। সেই সঙ্গে ১৮ বছর পর ভারতের বিপক্ষে তাদেরই মাঠে খেলতে নামা বাংলাদেশের মধ্যে চাপতো ছিলই। এই চাপ জয় করার একটি চ্যালেঞ্জও ছিলো। শেষ অবধি একটুর জন্য সেই চ্যালেঞ্জ টপকাতে পারেননি মাশরাফিরা। তারপরও মাশরাফিরা প্রমাণ করেছেন ক্রিকেটে বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করতেই তাদের এভাবে পর্দাপণ।

ক্রিকেটের আঙ্গিনায় আসার পর ভারতের মাটিতে ভারতীয় দলের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত তিনটি ম্যাচ খেলেছে (আজকের ম্যাচ বাদে)। সেখানে নেই কোনও টেস্ট ম্যাচ। ১৯৯০ সালে প্রথম ওয়ানডেতে ৯ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। ১৯৯৮ সালে মোহালি ও মুম্বাইয়ে ভারতের বিপক্ষে দুটি ওয়ানডে খেলেছিল টাইগাররা। সেবারও ললাটে জুটেছিল হার।

১৯৯৮ সালের পর বাংলাদেশকে আর আতিথ্য দেয়নি ভারত। ১৮ বছর পর ভারতের জমিনে ভারতীয় দলের বিপক্ষে খেলে মাত্র এক রানে হেরেছে বাংলাদেশ। এটাই বা কম প্রাপ্তি কিসে! আগামী দিনগুলোতে ক্রিকেটের মানচিত্রে বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথটা যে আরও রোমাঞ্চকর হয়ে উঠবে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্রিকেট বাণিজ্যের কথা মাথায় রেখে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশকে ১৮ বছর ধরে আমন্ত্রণ জানায় না। সেই ধারা হয়তো শিগগিরই ভাঙবে। ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথকে ছাপিয়ে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ যে আগামী দিনের মূল আকর্ষণ হতে চলেছে সে বার্তা তো দিয়েই দিলেন মাশরাফিরা।

/এমআর/