টানা সাত ম্যাচ জয়হীন বাংলাদেশের জন্য প্রেমাদাসার মাঠ যেন হয়ে উঠেছিল ঘোর অনিশ্চয়তার নাম। তবে শেষমেশ এলো বহু কাঙ্ক্ষিত স্বস্তির জয়। এ জয় শুধু সংখ্যার হিসাবে একটি জয় নয়, এটি ছিল যেন হা্যঁফ ছেড়ে বাঁচার মুহূর্ত। ১৬ রানে ম্যাচ জেতার মধ্য দিয়ে হারের বৃত্ত ভাঙার পাশাপাশি সিরিজেও ফিরেছে মেহেদী হাসান মিরাজরা। শুধু কি তাই? মিরাজের নেতৃত্বে এসেছে প্রথম জয়ও।
ম্যাচটি যদিও হতে পারতো অনেক সহজ, কিন্তু ভাগ্য ও ফিল্ডিংয়ের ব্যর্থতা মিলিয়ে মুহূর্তেই তা হয়ে ওঠে দুশ্চিন্তার। ৪৩তম ওভারে রিশাদ হোসেনের হাত ফসকে পড়ে যায় জেনিথ লিয়ানাগের সহজ ক্যাচ। তখন তিনি ৪২ রানে, আর লঙ্কানদের দরকার ছিল ৪৮ বলে ৬৫ রান। ওই ক্যাচ মিসেই ম্যাচটা প্রায় ফসকে যাচ্ছিল বাংলাদেশের হাত থেকে। তবে সময়মতো জেগে ওঠেন মোস্তাফিজুর রহমান। লিয়ানাগেকে ৭৮ রানে ফিরিয়ে দলকে করেন বিপদমুক্ত।
তবু জয় তখনও নিশ্চিত ছিল না। শেষ ১৬ বলে দরকার ছিল ২১ রান। চাপটাও ছিল ভীষণ। কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা আর কোনও ভুল করেননি। ৪৯তম ওভারে দুশমন্থ চামিরাকে বোল্ড করে জয় নিশ্চিত করেন তানজিম হাসান সাকিব। যদিও তার আগের বলে নিজেই ক্যাচ মিস করে সুযোগ হারিয়েছিলেন। চামিরা ফিরতেই দীর্ঘ অপেক্ষার পর হাসি ফোটে বাংলাদেশ দলে। এক স্বস্তির জয়ে ভাঙে হারের বৃত্ত, মিরাজ-তাওহীদরা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচার আনন্দে মাতার সুযোগ পেলেন!
শনিবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। ২০ ওভারের আগেই একশ রানে পৌঁছে যায় তিন উইকেট হারিয়ে। যেভাবে রানের গতি বাড়ছিল, তাতে করে এক সময় মনে হচ্ছিল তিনশোর কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বাংলাদেশের সংগ্রহ। কিন্তু তাওহীদ হৃদয় ও তানজিম সাকিবের ভুল বোঝাবুঝি ইনিংসের চিত্রনাট্যটাকে পাল্টে ফেলে। দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হন তাওহীদ। বিশেষজ্ঞ শেষ ব্যাটার হিসেবে যখন আউট হন, দলের রান ২১২! তবে জুনিয়র সাকিবের ২১ বলের ৩৩ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ ২৪৮ রানের সংগ্রহ পেয়ে যায়। তার আগে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান পারভেজ হোসেন। ৬ চার ও ৩ ছক্কায় পারভেজ ৬৯ বলে খেলেন ৬৭ রানের ইনিংস। তাওহদী রান আউটে কাটা পড়ার আগে খেলেন ৬৯ বলে ৫১ রানের ইনিংস।
প্রেমাদাসার উইকেট বিবেচনায় ১৫ থেকে ২০ রান কম করেছে বাংলাদেশ। তবে এই স্কোর নিয়ে নিদেনপক্ষে লড়াই করা সম্ভব। সেই লড়াইটাই শুরু থেকে করার চেষ্টায় ছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। শুরুতেই পাথুম নিশাঙ্কাকে ফিরিয়ে দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু তিনে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালাতে থাকেন কুশল মেন্ডিস। চার-ছক্কার বৃষ্টিতে মাত্র ২০ বলেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লঙ্কান এই ব্যাটার। তানভীর ইসলামের এক ওভারে ১৭ রান নেওয়ার পর মোস্তাফিজের ওভারে টানা চারটি চারে আরও ১৭ রান নেন তিনি। আর তাতে ৯ ওভারে ৭৪ রান তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। তাকে থামান আগের ম্যাচে অভিষেক হওয়া বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। বাঁহাতি স্পিনারের বলে অন সাইডে খেলার চেষ্টায় লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন কুশল মেন্ডিস। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় বাংলাদেশ। ৯ চার ও এক ছক্কায় ৩১ বলে ৫৬ রানের ইনিংস খেলেছেন লঙ্কান ব্যাটার।
মূলত কুশলকে আউটের পরই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। তানভীরের ঘূর্ণি জাদুতে লঙ্কান ব্যাটাররা খেই হারিয়ে ফেলেন। লঙ্কান ব্যাটারকে ফেরানোর আগের ওভারে তানভীর ফেরান ওপেনার নিশান মাদুশকাকে (১৭)। দ্রুত দুই উইকেট পতনের পর উজ্জীবিত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। তানভীরের সেই জোড়া ধাক্কাতেই মূলত বাংলাদেশ ম্যাচে ফেরে। শ্লথ হয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কার রানের চাকা। পরে তানভীর আরও তিন উইকেট নিয়ে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন। প্রায় ৩১ মাস পর ওয়ানডেতে এটিই বাংলাদেশের কোনও বোলারের ৫ উইকেট শিকারের নজির। এর আগে ২০২২ সালে ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান।
তানভীরের দারুণ বোলিংয়ের পরও শেষ দিকে গলার কাঁটা হয়ে ছিলেন লিয়ানাগে। চাপের মুহূর্তে একা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি! শেষ অব্দি স্নায়ু-চাপ সামলে বাংলাদেশ জয় তুলে নিয়েছে। তাতে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৬ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরেছে মেহেদী হাসান মিরাজের দল।