ফিরে দেখা বিশ্বকাপ

১৯৩৮: আবারও ইতালি

১৯৩৮ সালে আবারও চ্যাম্পিয়ন ইতালিদরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। রাশিয়ায় বসতে যাচ্ছে ফুটবল মহাযজ্ঞের ২১তম আসর। তার আগের প্রতিযোগিতাটিগুলো কেমন ছিল, কারাই বা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল- ফুটবল উৎসবের বানে ভেসে যাওয়ার আগে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সেখানে-

আগের বিশ্বকাপ, মানে ১৯৩৪ সালের আসর নিয়ে খুব সমালোচনা হয়েছিল। ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে বেনিতো মুসোলিনির ‘ইশারা’য় ইতালি শিরোপা জিতেছিল- এই অপবাদ ঘুচানোর মিশনে নেমেছিল আজ্জুরিরা। দুর্দান্ত ফুটবলে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতে ইতালি প্রমাণ দেয় মাঠের ফুটবলে তারা কতটা শক্তিশালী। ইতালির মতো টানা দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজকের দায়িত্ব পায় ইউরোপ। ১৯৩৮ সালের ফুটবল মহাযজ্ঞ বসে ফ্রান্সে।

৪ থেকে ১৯ জুনের এই প্রতিযোগিতায় হাঙ্গেরিকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ নিজেদের কাছেই রেখে দেয় ইতালি। চার বছর আগে যে কোচের অধীনে ট্রফি জিতেছিল, সেই ভিত্তোরি পোজ্জো ছায়াতেই ফ্রান্সে শিরোপা উদযাপন করে আজ্জুরিা।

বাছাই পর্ব পেরিয়ে ফ্রান্সের প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নেয় ১৬ দেশ। কিন্তু পরে অস্ট্রিয়া সরে দাঁড়ালে ১৫ দল নিয়ে শুরু হয় বিশ্বকাপ।

বয়কট: ইতালির বিশ্বকাপের মতো ফ্রান্সের আসরেও খেলেনি উরুগুয়ে। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপে বিশ্বকাপ হওয়ায় ১৯৩৮ সালের প্রতিযোগিতা বয়কট করে আর্জেন্টিনাও।

একনজরে:

আয়োজক: ফ্রান্স

মোট দল: ১৫

ভেন্যু: ১০

চ্যাম্পিয়ন: ইতালি

রানার্স-আপ: হাঙ্গেরি

মোট ম্যাচ: ১৮

মোট গোল: ৮৪

সর্বোচ্চ গোলদাতা: লিয়োনিদাস (ব্রাজিল), ৭ গোল।

ফরম্যাট: ১৯৩৪ সালের বিশ্বকাপের ফরম্যাটেই খেলা হয়েছে এই আসর। নকআউট ফরম্যাটে জয়ী দল সরাসরি নিশ্চিত করে কোয়ার্টার ফাইনাল, এরপর সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। নির্ধারিত ৯০ মিনিট খেলা সমতা থাকলে ম্যাচ গড়াতো অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও ফল নিষ্পত্তি না হলে পরে খেলা শুরু হতো নতুন করে।

প্রথম রাউন্ড/শেষ ষোলো: অস্ট্রিয়া নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় মাঠে না নেমেই কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যায় সুইডেন। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে নরওয়েকে ২-১ গোলে হারায় ইতালি। ব্রাজিলও অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে ৬-৫ গোলে জয় পায় পোল্যান্ডের বিপক্ষে। তাদের সঙ্গে শেষ আট নিশ্চিত করে স্বাগতিক ফ্রান্স, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, সুইজারল্যান্ড ও কিউবা।

কোয়ার্টার ফাইনাল: স্বাগতিক ফ্রান্সকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে নাম লেখায় ইতালি। সুইডেন আবার ৮-০ গোলে কিউবাকে বিধ্বস্ত করে। হাঙ্গেরি ২-০ গোলের জয় পায় সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে। তবে ব্রাজিলকে দিতে হয় কঠিন পরীক্ষা। আগের বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ‘দুই দিন’ খেলে তবে যেতে হয় শেষ চারে। নির্ধারিত সময় শেষ হয় ১-১ গোলে, এরপর অতিরিক্ত সময়েও স্কোরলাইন থাকে একই। তাই একদিন পর (১৬ জুন ১৯৩৮) আবার নতুন করে শুরু হওয়া ম্যাচে চেকোস্লোভাকিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট পায় ব্রাজিল।

সেমিফাইনাল: ব্রাজিলকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে ইতালি। অন্য সেমিফাইনালে হাঙ্গেরি করে গোলোৎসব, সুইডেনকে তারা উড়িয়ে দেয় ৫-১ গোলে।

ফাইনাল: সেমিফাইনালে গোলোৎসব করা হাঙ্গেরি ফাইনালে ধারাটা সচল রাখতে পারেনি। প্যারিসের উত্তেজনাকর ফাইনাল ইতালি জিতে নেয় ৪-২ গোলে। লুইজি কোলাসিগ ও সিলভিও পিওলার জোড়া লক্ষ্যভেদে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জেতার উল্লাসে মাতে আজ্জুরিরা।