ফিরে দেখা বিশ্বকাপ

১৯৭০: মেক্সিকোতেও উড়লো ব্রাজিলের পতাকা

দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। রাশিয়ায় বসতে যাচ্ছে ফুটবল মহাযজ্ঞের ২১তম আসর। তার আগের প্রতিযোগিতাটিগুলো কেমন ছিল, কারাই বা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল- ফুটবল উৎসবের বানে ভেসে যাওয়ার আগে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সেখানে-

পেলেকে কাঁধে নিয়ে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয় উদযাপনউত্তর আমেরিকায় সেবারই হয় প্রথম বিশ্বকাপ। ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার বাইরে হওয়া মেক্সিকোর ওই বিশ্বকাপে ওড়ে ব্রাজিলের পতাকা। তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জেতে সেলেসাওরা। ফুটবল মহাযজ্ঞে নবম আসরে অংশ নেওয়া ১৬ দল মূল প্রতিযোগিতায় লড়াইয়ে নামে বাছাই পর্বের বাধা পেরিয়ে। ছয় মহাদেশের ৭৫ দেশ অংশ নেয় বাছাই পর্বে। স্বাগতিক মেক্সিকো ও চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের সঙ্গে যোগ দেয় বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসা ১৪ দল।

মেক্সিকো সিটির ফাইনালে ব্রাজিল ও ইতালি- দুই দলের সামনেই ছিল তৃতীয় শিরোপার জেতার সুযোগ। সেটা কাজে লাগায় ব্রাজিল ফাইনালে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে। তিন বিশ্বকাপ জেতায় জুলে রিমে ট্রফি স্থায়ীভাবে হয়ে যায় লাতিন আমেরিকার দেশটির। মেক্সিকোর আসরে খেলা ব্রাজিলের দলকে বিবেচনা করা হয় সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ দল হিসেবে। যে দলে ছিলেন পেলে, গেরসন, জাইরজিনহো, রিভেলিনো ও তোস্তাওয়ের মতো খেলোয়াড়রা।

১৯৭০ সালের বিশ্বকাপের সব ম্যাচ জিতেছে ব্রাজিল। এমনকি বাছাই পর্বেও শতভাগ জয়ের রেকর্ড ছিল তাদের। ব্রাজিলের শ্রেষ্ঠত্বের ওই আসরে প্রথমবার ফুটবলপ্রেমীরা খেলা উপভোগ করে রঙিন পর্দায়।

অন্য চোখে:

প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ বাছাইয়ের চৌকাঠ পেরোতে ব্যর্থ হয় আর্জেন্টিনা। ২০১৮ সাল পর্যন্ত কেবল মেক্সিকোর ওই আসরেই বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসতে পারেনি আলবিসেলেস্তেরা। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে সুযোগ পায় এল সালভাদোর, ইসরায়েল ও মরক্কো।

একনজরে:

আয়োজক: মেক্সিকো

মোট দল: ১৬

ভেন্যু:

চ্যাম্পিয়ন: ব্রাজিল

রানার্স-আপ: ইতালি

মোট ম্যাচ: ৩২

মোট গোল: ৯৫

সর্বোচ্চ গোলদাতা: গার্ড ম্যুলার (পশ্চিম জার্মানি), ১০ গোল।

সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়: তেয়োফিলো কুবিয়াস (পেরু)।

ফরম্যাট:

১৯৬৬ সালের ফরম্যাটেই হয়েছে মেক্সিকোর বিশ্বকাপ। ১৬ দল চার গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলেছে একে অন্যের সঙ্গে। জয়ের জন্য ছিল ২ পয়েন্ট, আর ড্রতে ১ পয়েন্ট। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দুই দল জায়গা পায় কোয়ার্টার ফাইনালে। গ্রুপে দুই বা তার বেশি দলের পয়েন্ট সমান হলে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকা দল সুবিধা পেয়েছে। নকআউট পর্বে নির্ধারিত সময় ড্রতে শেষ হলে ছিল অতিরিক্ত সময়ের ব্যবস্থা।

গ্রুপ পর্ব:

দাপুটে জয়ে গ্রুপ পর্ব পার করে ব্রাজিল ও পশ্চিম জার্মানি। দুই দলই জেতে টানা তিন ম্যাচ। তাদের সঙ্গে গ্রুপ পর্ব থেকে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, মেক্সিকো, ইতালি, উরুগুয়ে, ইংল্যান্ড ও পেরু।

কোয়ার্টার ফাইনাল:

কোয়ার্টার ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে উরুগুয়ে ১-০ গোলে হারায় সোভিয়েত ইউনিয়নকে। ইতালি অবশ্য স্বাগতিক মেক্সিকোকে বিদায় করে দেয় ৪-১ গোলের দাপুটে জয়ে। ব্রাজিল ৪-২ গোলে হারায় পেরুকে। পশ্চিম জার্মানিকে দিতে হয়েছিল কঠিন পরীক্ষা। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে পায় ৩-২ গোলের জয়।

সেমিফাইনাল:

শেষ আটে উরুগুয়েকে সহজেই হারায় ব্রাজিল। ৩-১ গোলের এই জয়ের শুরুটা অবশ্য ছিল অন্যরকম। লুই কুবিলার লক্ষ্যভেদে ১৯ মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল উরুগুয়ে। যদিও বিরতিতে যাওয়ার আগমুহূর্তে ব্রাজিল সমতায় ফেরে ক্লোদোয়াল্দোর লক্ষ্যভেদে। এরপর জাইরজিনহো ও রিভেলিনোর গোলে ফাইনাল নিশ্চিত করে সেলেসাওরা।

কোয়ার্টার ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচ জিতলেও সেমিফাইনালে আর পারেনি পশ্চিম জার্মানি। ইতালির বিপক্ষে ৭ গোলের থ্রিলারের ম্যাচটি হারে ৪-৩ ব্যবধানে। যাতে ইতালির সামনে তৈরি হয় তৃতীয় শিরোপা জেতার সুযোগ।

ফাইনাল:

ফাইনালে ইতালি দাঁড়াতেই পারেনি পেলের ব্রাজিলের সামনে। আজ্জুরিদের ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে তৃতীয় বিশ্বকাপ জয় উদযাপন করে সাম্বার দেশ। ১৮ মিনিটে পেলের গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল, তবে ৩৭ মিনিটে রবের্তো বোনিনসেগনা জাল খুঁজে পেলে সমতায় ফেরে ইতালি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিল ঝড়ে তছতছ হয়ে যায় তারা। ৬৬ মিনিটে গেরসন, ৭১ মিনিটে জাইরজিনহো ও ৮৬ মিনিটে কার্লোস আলবার্তোর লক্ষ্যভেদে ৪-১ গোলের জয়ে মেক্সিকোতে ওড়ে ব্রাজিলের পতাকা।