গোল উৎসব করে শেষ ষোলোতে ইংল্যান্ড

হ্যারি কেইনের হ্যাটট্রিকের উচ্ছ্বাসএই বিশ্বকাপে এরই মধ্যে গোল উৎসব করেছে রাশিয়া ও বেলজিয়াম। দুই দলই তাদের সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছে ৫ গোল করে। এবার তাদের পেছনে ফেলল গত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে বিদায় নেওয়া ইংল্যান্ড। নবাগত পানামাকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে তারা হ্যারি কেইনের হ্যাটট্রিকে। এটাই বিশ্বকাপে তাদের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়।

রবিবার নিঝনি নোভগোরদে একাই তিন গোল করে ইতিহাস গড়েছেন কেইন। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের জার্সিতে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাটট্রিকের কৃতিত্ব গড়েছেন তিনি। যদিও তৃতীয় গোলটি এসেছে ভাগ্য সহায় থাকায়।

‘জি’ গ্রুপে প্রথম ম্যাচে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে কেইনের জোড়া গোলে জিতেছিল গ্যারেথ সাউথগেটের দল। ইনজুরি সময়ে লক্ষ্যভেদ করেছিলেন অধিনায়ক। কিন্তু বিশ্বকাপের নতুন দল পানামাকে নিয়ে ছেলেখেলা করেছে ইংল্যান্ড, যাতেও দারুণ অবদান কেইনের।

স্টোনসের দ্বিতীয় গোলবিরতির আগে জোড়া গোল করেছেন কেইন ও জন স্টোনস। তাতে প্রথমার্ধ তারা শেষ করে ৫-০ গেলে। অন্য গোলটি ছিল জেসে লিনগার্দের। দ্বিতীয়ার্ধে দলের ষষ্ঠ গোল করেন কেইন। দুই ম্যাচে ৫ গোল তার। এতে পর্তুগালের ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ও বেলজিয়ামের রোমেলু লুকাকুকে পেছনে ফেললেন তিনি গোল্ডেন বুটের দৌড়ে। পানামার প্রথম গোল করে ইতিহাস গড়েন বদলি খেলতে নামা ফিলিপ ব্যালয়।

এই দারুণ জয়ে বেলজিয়ামকে নিয়ে শেষ ষোলোতে উঠল ইংল্যান্ড। দুই দলই প্রথম দুটি ম্যাচ জিতে ৬ পয়েন্ট পেয়েছে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে আগামী বৃহস্পতিবার কালিনিনগ্রাদে মুখোমুখি হবে দুই দল।

গোলের ভালো সুযোগ প্রথমে তৈরি করেছিল কিন্তু পানামা। আনিবাল গোদোয়ের বাঁ পায়ের শট গোলবারের পাশ দিয়ে চলে যায়। তারা পিছিয়ে পড়ে ৮ মিনিটে। কর্নার কিক থেকে বল পান স্টোনস। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের নজরের বাইরে থাকায় লক্ষ্যভেদ করতে একটুও ভুগতে হয়নি তাকে। পানামার রক্ষণভাগে ফাঁকা জায়গার সুযোগ নিয়ে জোরালো হেডে ১-০ করেন ম্যানসিটি ডিফেন্ডার।

পানামার গোলরক্ষককে অসহায় বানান কেইনতারপর গোল বন্যায় ভেসে যায় পানামা। লিনগার্দ বক্সের ভেতরে ডানপ্রান্তে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি থেকে গোলপোস্টের ডানদিক দিয়ে জালে বল জড়ান কেইন।

৩৬ মিনিটে রহিম স্টারলিংয়ের অ্যাসিস্টে বক্সের বাইরে থেকে বাঁকানো শটে ৩-০ করেন লিনগার্দ। ৪ মিনিট পর আবারও গোল উদযাপন করে ইংল্যান্ড। ৪০ মিনিটে ডিবক্সের মধ্যে স্টারলিংয়ের শট খুব কাছ থেকে ঠেকিয়ে দেন পেনেদো। কিন্তু পানামা গোলরক্ষকের গায়ে লেগে ফিরে আসে বল, সুযোগ লুফে নিয়ে নিজের জোড়া গোল করেন স্টোনস।

প্রথমার্ধের এই গোল উৎসবে শেষবার লক্ষ্যভেদ করেন কেইন। ৪৩ মিনিটে ফিদেল এসকোবার বক্সের মধ্যে ফাউল করেন তাকে। ১২ গজ দূর থেকে ইনজুরি সময়ের প্রথম মিনিটে গোল করেন টটেনহ্যাম স্ট্রাইকার।

বিরতির পর হ্যাটট্রিক করেন কেইন। এই বিশ্বকাপের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক করলেন তিনি, তার আগে স্পেনের বিপক্ষে এই অর্জন করেন পর্তুগালের রোনালদো। অবশ্য কেইনের তৃতীয় গোলটি হয়েছে সৌভাগ্যের জোরে। ৬২ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে লোফটাস চিকের জোরালো শট তার গোড়ালিতে লেগে পানামার জালে জড়ায়। এতে জিওফ হার্স্ট ও গ্যারি লিনেকারের পর তৃতীয় ইংলিশ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকের কৃতিত্ব কেইনের।

বিশ্বকাপে পানামার প্রথম গোল করলেন ব্যালয়সতীর্থদের একের পর এক গোল উদযাপন করতে দেখা জর্ডান পিকফোর্ড শেষ দিকে মুরিলোকে থামিয়ে ক্লিন শিট ধরে রাখার ইঙ্গিত দেন। কিন্তু রিকার্দো আভিলার ফ্রি কিকে ব্যালয়ের প্রথম চেষ্টা ঠেকাতে পারেননি ইংলিশ গোলরক্ষক। অনেক গোল খেয়েও বিশ্বকাপে দেশটির প্রথম গোল করায় উচ্ছ্বাসে ভাসেন ব্যালয়। তবে প্রথমবার ৫ বা তার বেশি গোল করে জেতায় শিরোনামে কিন্তু ইংল্যান্ডই, যার স্রষ্টা কেইন। ১৯৬৬ সালের সাফল্যের পুনরাবৃত্তির আশা জেগে উঠেছে তাদের মনে।