কেভিন ট্রিপিয়ারের গোলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও লড়াই করে ক্রোয়েশিয়া সমতায় ফেরে ইভান পেরিশিচের লক্ষ্যভেদে। তাতে নির্ধারিত সময় ১-১ গোলে ড্র হওয়ায় মস্কোর সেমিফাইনাল যায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে ব্যবাধান গড়ে দেন মানজুকিচ। খেলার ১০৯ মিনিটে তার বাঁ পায়ের জালে জড়ানো শটটাই প্রথমবার ফাইনালে ওঠার আনন্দে মাতায় গোটা ক্রোয়েশিয়াকে। ১৫ জুন রাশিয়া বিশ্বকাপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করা ফ্রান্স।
স্বাধীন দেশ হিসেবে ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে নেমে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। যদিও ফাইনালে ওঠার সুযোগ হয়নি তাদের, সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল ডেভর সুকারদের। ২০ বছর পর সেই আক্ষেপ দূর করলেন লুকা মদরিচ-ইভান রাকিতিচ-মারিও মানজুকিচদের নিয়ে গড়া এবারের দলটি।
অতিরিক্ত সময়ে এসে মস্কোর সেমিফাইনালটি নিজের করে নিলেন মানজুকিচ। এই ফরোয়ার্ডের গোলটিই ক্রোয়েটদের প্রথমবার তুলে দেয় বিশ্বকাপের ফাইনালে। গোটা ম্যাচে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ইভান পেরিশিচের হেড বক্সের ভেতর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাঁ পায়ের শটে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি। ১০৯ মিনিটের ওই গোলে ইংলিশদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়, আর ক্রোয়েটরা ভেসে যান আনন্দের বানে।
এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে ফ্রি কিক গোল দেখা গেলেও নকআউট পর্বে পাওয়া যায়নি। সেই ‘আক্ষেপ’ই দূর করলেন ট্রিপিয়ার। রাশিয়া বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে এটাই প্রথম ফ্রিকিক গোলের প্রথম উদাহরণ।
ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল ইংল্যান্ড। এবারের বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুটের দৌড়ে সবার আগে থাকা হ্যারি কেইন পারলেন না নিজের গোল সংখ্যা বাড়িয়ে নিতে। একেবারে ফাঁকা জায়গা থেকে সামনে শুধু গোলরক্ষক দানিয়েল সুবাসিচকে একা পেয়েও লক্ষ্যভদ করতে ব্যর্থ ইংলিশ অধিনায়ক! ৩০তম মিনিটে জেসি লিনগার্ডের ডিফেন্সচেরা পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোলমুখে শট করলেও প্রতিহত করেন সুবাসিচ। ফিরতি বলে আবারও শট করেছিলেন টটেনহাম স্ট্রাইকার, তবে ততক্ষণে সহকারী রেফারি জানান তিনি অফসাইড।
পরের মিনিটেই সমতায় ফেরার সুযোগ তৈরি করে ক্রোয়েশিয়ার। তবে ভাগ্য সহায় হয়নি তাদের। ডানপ্রান্ত থেকে আন্তে রেবিচ দারুণ এক ক্রস করেছিলেন, ইংলিশ ডিফেন্ডার জন স্টোনস ‘ক্লিয়ার’ না করলে বিপদ হতেই পারতো। এরপরও শঙ্কা তৈরি হয় ফিরতি বলে রেবিচ শট করলে, যদিও ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ড সহজেই প্রতিহত করেন তার শট।
মিনিট তিনেক পর আর হতাশ হতে হয়নি পেরিশিচকে। ৬৮ মিনিটে তার চমৎকার গোলেই সমতায় ফেরে ক্রোয়েটরা। ম্যাচে ফিরতে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে লড়ছিল, ফুটবল দেবতা হতাশ করেননি তাদের। পেরিশিচের লক্ষ্যভেদে ১-১ সমতায় ফেরে মস্কোর সেমিফাইনাল।
বিরতি থেকে ঘুরে এসে সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে ক্রোয়েশিয়া। যদিও সুবিধা করতে পারছিল না ইংল্যান্ডের কড়া রক্ষণের সামনে। অবশেষে ৬৮ মিনিটে আসে সেই মধুর সময়, যখন পেরিশিচের চমৎকার গোলে খেলায় ফেরে ক্রোয়েটরা।
ডানপ্রান্ত থেকে শিমে ভ্রাসাইকোর ক্রস বক্সের ভেতর থেকে অনেকটা পা উঁচিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন পেরিশিচ। ইংলিশ ডিফেন্ডার ওয়াকার নিচু হয়ে হেড করার চেষ্টা করলেও পেরিশিচের পা খুঁজে নেয় বল, আর সেই পায়ের ছোঁয়ায় বল জড়িয়ে যায় জালে। বক্সের ভেতর থেকে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।
সেই সময়ের ১০৯ মিনিটে মানজুকিচের থাবায় ঘায়েল ‘থ্রি লায়ন্স’। সমান্তরালে প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠার আনন্দে মাতোয়ারা গোটা ক্রোয়েশিয়া।