জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও স্পেনের মতো হট ফেভারিটদের কাতারে ছিল না ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। অথচ তারাই রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে। আগামী ১৫ জুলাই শিরোপার এ লড়াইয়ে আসতে অনেক বাধা পেরিয়ে আসতে হয়েছে দুই দলকে।
‘সি’ গ্রুপে প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ২০০৬ সালে শেষ ষোলো খেলা অস্ট্রেলিয়া। আন্তোয়ান গ্রিয়েজমান ও কিলিয়ান এমবাপের আক্রমণভাগকে দারুণভাবে ঠেকিয়ে দিয়েছিল সকারুরা। প্রথমার্ধ তারা অক্ষত রাখে গোলপোস্ট। কিন্তু বিরতির পর ‘বিতর্কিত’ গোলে তাদের পেছনে ফেলে ফরাসিরা। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির দেওয়া পেনাল্টিতে লক্ষ্যভেদ করেন গ্রিয়েজমান। কয়েক মিনিট পর মাইল জেডিনাকের পেনাল্টি গোলে অস্ট্রেলিয়াকে সমতায় ফিরেছিল। কিন্তু শেষ দিকে পল পগবার দারুণ নৈপুণ্যে আজিজ বেহিচের আত্মঘাতী গোলে জেতে ফ্রান্স। ২-১ গোলের জয়ে শুভ সূচনা হয় তাদের।
দ্বিতীয় ম্যাচে পেরুর বিপক্ষে ১-০ গোলে জেতে ফ্রান্স। দেশের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে গোল করেন ১৯ বছর ১৮৩ দিন বয়সী এমবাপে।
টানা দুটি জয় পাওয়া ফ্রান্স শেষ ম্যাচে ড্র করে। ডেনমার্কের বিপক্ষে তাদের গোলশূন্য ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নকআউটে ওঠে তারা।
ফ্রান্সের নকআউট পর্ব
শেষ ষোলো: গ্রুপের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়াকে হারিয়ে খাদের কিনারা থেকে উঠে আসা আর্জেন্টিনাকে শেষ ষোলোতে পায় ফ্রান্স। এমবাপের আদায় করা পেনাল্টি থেকে গোলে দারুণ শুরু করে তারা। গ্রিয়েজমানের গোলে এগিয়ে যায় সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। যদিও বিরতির আগে আনহেল দি মারিয়ার অসাধারণ গোলে সমতা ফেরায় আর্জেন্টিনা। বিরতির পরপরই গ্যাব্রিয়েল মেরকাদোর গোলে তো পিছিয়েই পড়ে ফ্রান্স। কিন্তু থমকে যায়নি তারা।
কোয়ার্টার ফাইনাল: শেষ আটে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে। শত্রু শিবিরের তারকা ফরোয়ার্ড এদিনসন কাভানির না থাকা ছিল ফরাসিদের জন্য দারুণ খবর। আগের চার ম্যাচে মাত্র এক গোল খাওয়া উরুগুয়ে এদিন ধরে রাখতে পারেনি ফ্রান্সের আক্রমণভাগকে। ৪০ মিনিটে রাফায়েল ভারানের গোলে এগিয়ে যায় ফরাসিরা। তারপর দ্বিতীয়ার্ধে বক্সের বাইরে থেকে গ্রিয়েজমানের বাঁ পায়ের শট উরুগুয়ের গোলরক্ষক ফের্নান্দো মুসলেরার হাত ফসকে জড়ায় জালে। ২-০ গোলে জিতে সেমিফাইনালে ওঠে ফ্রান্স।
ক্রোয়েশিয়ার গ্রুপ পর্ব
‘ডি’ গ্রুপে কালিনিনগ্রাদে নাইজেরিয়ার মুখোমুখি হয় ক্রোয়েশিয়া। ওঘেনেকারো এতেবোর আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় তারা। তারপর দ্বিতীয়ার্ধে লুকা মদরিচের পেনাল্টিতে ২-০ গোলের সহজ জয় নিশ্চিত করে ক্রোয়েটরা। ১৯৯৮ সালে অভিষেকের পর প্রথমবার জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু হয় ক্রোয়েশিয়ার।
নকআউট নিশ্চিত করায় গ্রুপের শেষ ম্যাচে আমূলে বদলে ফেলা দল নিয়ে মাঠে নামে ক্রোয়েশিয়া। আগের ম্যাচ খেলা কেবল ইভান পেরিশিচ ও মদরিচ ছিলেন আইসল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশে। মিলান বাদেলের গোলে এগিয়ে যায় ক্রোয়েটরা। কিন্তু জিলফি সিগুর্দসন পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরালে ৯০ মিনিটের গোলে পেরিশিচ দলের শতভাগ সাফল্য ধরে রাখেন। ২-১ গোলে জিতে ক্রোয়েশিয়া হয় গ্রুপসেরা।
ক্রোয়েশিয়ার নকআউট পর্ব
শেষ ষোলো: ডেনমার্কের বিপক্ষে নিঝনি নোভগোরদে নকআউটের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ক্রোয়েশিয়া। প্রথম মিনিটে মাথিয়াস জর্গেনসেনের গোলে এগিয়ে যায় ডেনিসরা। যদিও মারিও মানজুকিচের ৪ মিনিটের গোলে সমতায় ফেরে ক্রোয়েটরা।
কোয়ার্টার ফাইনাল: এই পর্বে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল ক্রোয়েশিয়াকে। স্বাগতিক রাশিয়া নির্ভার থেকে খেলতে নেমে দেনিস চেরিশিভের দুর্দান্ত গোল পিছিয়ে দেয় তাদের। ৩১ মিনিটের এই গোলের জবাব দেয় ক্রোয়েশিয়া বিরতির ৬ মিনিট আগে। আন্দ্রে ক্রামারিচ ফেরান সমতা। নির্ধারিত সময় ১-১ থাকায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
১০১ মিনিটে দোমাগোজ ভিদা দ্বিতীয় গোল করলে জয়ের সুবাস পাচ্ছিল ক্রোয়েটরা। কিন্তু সময় শেষ হওয়ার ৫ মিনিট আগে ফের্নান্দেসের গোল আবার তাদের ফেলে টাইব্রেকার পরীক্ষায়। ২-২ গোলে অতিরিক্ত সময় শেষ হলে পেনাল্টি শুট আউটে ৪-৩ গোলের জয়ে ২০ বছর পর প্রথম সেমিফাইনালে ওঠে ক্রোয়েশিয়া।
কিন্তু এই ধাক্কায় পড়ে যায়নি ক্রোয়েশিয়া। মুহুর্মুহু আক্রমণে ইংলিশ রক্ষণভাগ তটস্থ রাখার পর পেরিশিচের গোলে সমতা ফেরায় তারা। ১-১ গোলে নির্ধারিত সময় থাকার পর ম্যাচ যায় অতিরিক্ত সময়ে। মানজুকিচের ১০৯ মিনিটের গোলে ২-১ এ জিতে প্রথমবার ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়ে ক্রোয়েশিয়া।