হৃদয় জিতে নেওয়া প্রেসিডেন্ট

ক্রোয়েশিয়া প্রেসিডেন্ট কলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচরাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর আগের তাদের রাখা হয়েছিল গণনার বাইরে, এমনকি নিজ দেশের মানুষের প্রত্যাশাও ছিল ‘সামান্য’। অথচ সেই ক্রোয়েশিয়াই এখন ফাইনালে! চারদিকে তাই একটাই রব- ‘হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রোয়েশিয়া’।

সেখানে লুকা মদরিচ-ইভান রাকিতিচদের পারফরম্যান্স তো আছেই, বিশ্বকে মুগ্ধ করেছে দেশটির প্রেসিডেন্ট কলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচের ফুটবল-প্রীতিও। গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে বছর কুড়ির তরুণীর মতো উন্মাদ উদযাপনে কিংবা জয়ের পর ড্রেসিং রুমে গিয়ে খেলোয়াড়ের সঙ্গে নাচের তালে আড়ালে পড়ে যান ‘প্রেসিডেন্ট কিতারোভিচ’, বিপরীতে ফুটে ওঠে দেশের প্রতি, দেশের ফুটবল প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসায় মেতে থাকা এক চনমনে সমর্থকের ছবি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবিগুলো ভাইরাল হয়ে বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের ক্রোয়েশিয়ার প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয় আরও। যদিও রাশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর পাশে বসা গ্রাবার-কিতারোভিচকে দেখে বোঝার উপায় নেই ৫০ পেরিয়ে গেছে তার বয়স। গোলের পর আনন্দে লাফিয়ে ওঠা দৃশ্যে বিশ্বাসই হবে না তিনি কোনও দেশের প্রেসিডেন্ট। ড্রেসিং রুমে খেলোয়াড়দের সঙ্গে নেচে-গেয়ে ওঠা সোনালি চুলের মহিলাকে দেখে কে বলবে ক্রোয়েশিয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী তিনি!

বিশ্বকাপ জেতা হয়নি, রাশিয়ার বিপক্ষে জিতে কেবল সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়েছিল ক্রোয়েশিয়ার, অথচ গ্রাবার-কিতারোভিচের উচ্ছ্বাস বিশ্ব জয়ের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। ড্রেসিং রুমে কোচ জাৎকো দালিচকে আলিঙ্গন করার মুহূর্ত দেখলে মনে হবে তিনি যেন এই দলই সদস্য। অধিনায়ক লুকা মদরিচকে জড়িয়ে ধরে হয়তো বললেন, ‘এত খুশি আমি কখনোই হয়নি।’ সত্যিই তাই। ২০১৫ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ক্রোয়েশিয়ায় এমন আনন্দের ক্ষণ যে আর আসেনি।

শুধু ড্রেসিং রুমে গিয়েই খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিয়ে আসেননি তিনি, সেমিফাইনালের আগে মদরিচ-রাকিতিচদের সাহস জুগিয়েছেন ফেসবুক বার্তায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ চারের লড়াই জিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনাল নিশ্চিতের পরও খেলোয়াড়দের প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ক্রোয়েট প্রেসিডেন্ট। নিজের ফেসবুকে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন তিনি এই লিখে, ‘আমার জনগণ, তোমরা পেরেছো!! ব্রাভো, ভাতরেনি (ক্রোয়েশিয়া ফুটবল দলের ডাকনাম)!! ব্রাভো, সব ভক্ত!!’

১৯৬৮ সালের ২৯ এপ্রিল রিয়েকায় জন্ম নেওয়া গ্রাবার-কিতারোভিচ ক্রোয়েশিয়ার চতুর্থ ও প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট। রাজনৈতিক পথচলাটা তার শুরু হয়েছিল ১৯৯৩ সালে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ক্রোয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব সামলে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত হন ক্রোয়েট প্রেসিডেন্ট।

রাশিয়া বিশ্বকাপে দুই সন্তানের জননী গ্রাবার-কিতারোভিচের পাওয়া গেছে ‘নতুন’ পরিচয়- ফুটবলের পাগল ভক্ত। দেশের প্রধান হয়েও তিনি সাধারণ সমর্থকের মতো যেমন লাফিয়ে উঠতে পারেন, তেমনি একেবারে ক্রোয়েট খেলোয়াড়দের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন দলের সাধারণ সদস্য হিসেবে।

সামনের উপলক্ষ আরও বড়। বিশ্বকাপ ফাইনাল বলে কথা! দেশের এই অভূতপূর্ব মুহূর্ত নিশ্চয় মিস করবেন না তিনি। মস্কোর গ্যালারিতে আরেকবার দেখা যাবে তাকে, যেখানে প্রেসিডেন্ট গ্রাবার-কিতারোভিচের চেয়ে বেশি ফুটে উঠবে ফুটবল পাগল এক ভক্ত!