মদরিচে এগিয়ে চলা ক্রোয়েশিয়া

2018-07-07T210334Z_223828484_RC1EFC837600_RTRMADP_3_SOCCER-WORLDCUP-RUS-CROপ্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া। লুকা মদরিচের জন্য এ এক অন্যরকম অনুভূতির ব্যাপার। কত রথী-মহারথী যে সুযোগ পাননি, সেটা পূরণ হয়েছে তার রাশিয়া বিশ্বকাপে। যদিও শুধু ফাইনাল খেলার স্বপ্নে তৃপ্ত নন ক্রোয়েট অধিনায়ক, মস্কোর ফাইনালে উঁচিয়ে ধরতে চান বিশ্বকাপ ট্রফি।

বিশ্বকাপ ফাইনাল অন্যরকম অনুভূতির জায়গা। প্রত্যাশার চাপ থাকে, ভালো করার তাড়ণা থাকে, জয়ের স্বপ্ন থাকে- এমন পরিস্থিতিতে মানসিক শক্তিতে এগিয়ে থাকা দলই জেতে শিরোপা। দলীয় জায়গায় অবস্থা যাই হোক, ব্যক্তিগত জায়গায় মদরিচ এককথায় ফাইনাল ‘বিশেষজ্ঞ’। ফাইনালের হারের যন্ত্রণা কেমন, সেটা হয়তো ভুলেই গেছেন তিনি!

২০১২ সালে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়ে শিরোপা উদযাপন করেছেন অনেকবার। মস্কোর ফাইনালের আগপর্যন্ত রিয়ালের হয়ে টানা ১০ ফাইনাল জয়ের সুখস্মৃতি সঙ্গী তার। যেখানে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হবে চ্যাম্পিয়নস লিগের চার শিরোপা। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার ও উত্তেজনার লড়াইয়ের ‘স্নায়ুর যুদ্ধ’ জিতেছেন তিনি বারবার। বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চ অপরিচিত হলেও আবহ অচেনা নয় মোটেও।

রাশিয়ার প্রতিযোগিতায় নামার আগে ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলপ্রেমীরা তাকিয়ে ছিল এই মিডফিল্ডারের দিকে। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন বলে নয়, অধিনায়কের গুরু দায়িত্বই তার কাঁধে। তাছাড়া নিজের কার্যকারিতা দিয়ে দলে প্রয়োজনীয়তা তিনি বহুবার বুঝিয়েছেন ‘দ্য ব্লেজারদের’।

প্রত্যাশার চাপে তিনি ভেঙে পড়েননি কখনও। বিশ্বকাপের মঞ্চেও পাওয়া গেছে লড়াকু মদরিচকে। স্বভাবতই ফাইনালে তার প্রতি প্রত্যাশা আরও বেশি। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ হলেই যেন আরও জ্বলে উঠেন তিনি। রিয়াল মাদ্রিদের চ্যাম্পিয়নস লিগের উদাহরণ সামনে আনলে দেখা যাবে ফাইনালেই আরও বেশি ধারালো ও কার্যকরী মদরিচকে দেখা গেছে মাঠে। ক্রোয়েশিয়া দলেও প্রয়োজনের সময় জ্বলে উঠেছেন তিনি।

আর্জেন্টিনার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তার চমৎকার ওই গোলটি কিংবা ফরোয়ার্ডে একের পর এক বলের জোগান দেওয়া- বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া তো বটেই, মদরিচ জয় করে নিয়েছেন বিশ্বের কোটি ভক্তের হৃদয়। তাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগেই জোর দাবি ওঠে তাকে ব্যালন ডি’অর দেওয়ার!

এই মদরিচই আবার প্রয়োজনের সুযোগ নষ্ট করার উদাহরণ তৈরি করেন। ডেনমার্কের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মিস করে বসেন পেনাল্টি। সহজ সুযোগ নষ্ট করে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলেও ভেঙে পড়েননি, লড়াই চালিয়ে যান। পেনাল্টি মিস করার পরও তাই টাইব্রেকারে স্পক কিক নেওয়া সাহস দেখান ৩২ বছর বয়সী মিডফিল্ডার।

ক্রোয়েশিয়া দলে অনেক তারকা খেলোয়াড়ই আছেন- ইভান রাকিতিচ, মারিও মানজুকিচ কিংবা মাতেও কোভচিচ, তবে ভক্তদের আস্থার জায়গাটা মদরিচকে ঘিরেই। ক্রোয়েশিয়ার শক্তিশালী মাঝমাঠের নেতৃত্বে দিয়ে যাচ্ছেন তিনি, সেই সঙ্গে অধিনায়ক হিসেবে দলকে উজ্জীবিত রাখছেন মাঠে। প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল কাড়া, সুযোগ সন্ধানী দৌড়, ডিফেন্সচেড়া পাস ও অসাধারণ শুটিং ক্ষমতার মদরিচের ওপর আস্থা না রাখার কোনও কারণই নেই।

মস্কোয় ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালেও তার ওপর আস্থা রাখছে ক্রোয়েশিয়া। প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালেই সাফল্যের স্বপ্ন আঁকছে মনে। আর মদরিচ নিজে নিশ্চয় উঁচিয়ে ধরতে চাইছেন বিশ্বকাপ ট্রফি।