বিশ্বকাপ বাছাই

মেসি-ডি মারিয়ার জাদুতে উড়ে গেলো ভেনেজুয়েলা

ঘরের মাঠে বুয়েন্স এইরেসের লা বোম্বোনেরায় ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে নিজেদের শেষ ম্যাচে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ছন্দময় ফুটবল খেলেছে স্বাগতিকরা। বল দখল ও আক্রমণ; দুই বিভাগেই আধিপত্য দেখিয়েছে মেসি-ডি মারিয়ারা। দলগত নৈপুণ্যে ঘরের মাঠে রীতিমতো উৎসবই করেছে আলবিসেলেস্তেরা। ভেনেজুয়েলাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে আগের দুই ম্যাচে না খেলা লিওনেল মেসির ফেরাটা হলো রঙিন।

শনিবার (২৬ মার্চ) দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইয়ের ম্যাচে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে সাদা-আকাশীদের প্রধান স্ট্রাইকার লাওতারো মার্টিনেজ ছিলেন না। এছাড়া নিষিদ্ধ থাকায় খেলতে পারেননি এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়া ও জিওভানি লো চেলসোরাও। ফলে শুরুর একাদশে আসে বেশ কিছু পরিবর্তন। লাওতারো না থাকায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে দলের আক্রমণভাগে। লিওনেল মেসির সঙ্গে এদিন আক্রমণভাগে নামেন হোয়াকিন কোররেয়া ও নিকলাস গনজালেস। তবে মেসিকে শুরুর একাদশে সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে দেখালেও ম্যাচ গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি খানিকটা নিচে নেমে এসে গড়ে দিয়েছিলেন অনেক আক্রমণ।

আর্জেন্টিনা শুরু থেকেই খেলেছে আক্রমণাত্মক ফুটবল। শুরু থেকেই আলো ছড়িয়েছেন মেসি। তারই ফল পেয়েছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৩৫ মিনিটেই মেসির গড়ে দেওয়া এক আক্রমণে বক্সের বাইরে বল পেয়েছিলেন নিকলাস গনজালেস। ডান প্রান্তে ফাঁকায় বল পেয়ে যান অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ মিডফিল্ডার রদ্রিগো দে পল। স্লাইড করে তাতে পা ছুঁইয়ে ভেনেজুয়েলার প্রতিরোধ ভেঙে দেন নিকোলাস। সেই গোলে এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করে স্বাগতিকরা।

বিরতিতে যাওয়ার আগে অবশ্য বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছিল লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে প্রথমবার প্রতিপক্ষের গোলমুখে শট নেয় আর্জেন্টিনা। লেয়ান্দ্রো পারেদেসের কাছ থেকে বল পেয়ে প্রায় ২০ গজ দূর থেকে গোলের প্রচেষ্টা চালান মেসি। আগেই আঁচ করতে পারা ভেনেজুয়েলা গোলরক্ষক উইলকার ফারিনেজ সহজেই মেসির বাঁকানো শট লুফে নেন। দুই মিনিট পর মেসির ফ্রি-কিকে হোয়াকিন কোররেয়ার হেড করেন, কিন্তু লক্ষ্যভেদ হয়নি। এই আক্রমণের পর অনেকটা সময় বলার মতো কোনো আক্রমণ গড়তে পারেনি আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে, রক্ষণ জমাট রেখে খেলা ভেনেজুয়েলা বলের নাগালই পাচ্ছিলো না। ফলে তাদের পক্ষেও সম্ভব হয়নি গোলের সুযোগ তৈরি করা।

২৪তম মিনিটে মেসির আরেকটি শট সহজেই রক্ষা করেন ফারিনেজ। ছয় মিনিট পর ফের হতাশ হতে হয় মেসিকে। বাঁ পায়ে কারিকুরি দেখিয়ে ডি-বক্সের ঢুকে পড়েছিলেন তিনি। শটও নিয়েছিলেন দুই দফা। তবে ভেনেজুয়েলার ডিফেন্ডারদের তৎপরতায় সফল হননি মেসি।  

বিরতির পর ম্যাচের ৫৫তম মিনিটে গোল পরিশোধের সুযোগ পেয়েছিলে ভেনেজুয়েলা। কিন্তু সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন জোসেফ মার্তিনেজ। ক্রিস্তিয়ান কাসারেসের ক্রসে ফাঁকায় থেকে হেড করলেও বল লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

Arg-vs-ven

৭০তম মিনিটে বদলি নেমে খেলার চিত্র পাল্টে দেন পিএসজি উইঙ্গার ডি মারিয়া। তার উপস্থিতিতে দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠে দুই বারের চ্যাম্পিয়নরা। ৯ মিনিটের মধ্যে গোলও পেয়ে যান তিনি। দে পল লম্বা পাসে বল দেন ডি মারিয়ার উদ্দেশে। দারুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বল নিয়ে মারিয়া পৌঁছে যান ডি-বক্সের কাছে। এরপর ফারিনেজের মাথার ওপর দিয়ে দর্শনীয় চিপে গোলসংখ্যা দ্বিগুণ করেন।

ঠিক তিন মিনিট পর ক্লাব সতীর্থ মেসির ৮১তম আন্তর্জাতিক গোলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন ডি মারিয়া। গোলমুখে তার বুদ্ধিদীপ্ত ক্রস বুক দিয়ে নামিয়ে ডান পায়ে শট নেন মেসি। সংযোগ ঠিকঠাক না হলেও সফরকারী গোলরক্ষক আগেই উল্টো দিকে সরে গিয়েছিলেন। বল জালে পৌঁছাতেই যেন কেঁপে ওঠে গোটা স্টেডিয়াম!

এই জয়ে ১৬ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে আর্জেন্টিনার অবস্থান দুই নম্বরে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল সমান ম্যাচে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। দুই দলই ইতোমধ্যে কাতার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলা নিশ্চিত করেছে। আগেই ছিটকে যাওয়া ভেনেজুয়েলা আছে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের দশ দলের বাছাইপর্বে সবার নিচে। ১৭ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১০।