২১ বছর পরও সেই গোলের কথা ভেবে রোমাঞ্চিত আলফাজ! (ভিডিও)

কিছু দিন আগের কথা। হঠাৎ সামাজিক মাধ্যমে ঘুরতে থাকে একটি ভিডিও ক্লিপ। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের সেই ফুটেজটি ছিল মূলত মঙ্গোলিয়া-বাংলাদেশ ম্যাচের। তাতে জোড়া গোল করেন আলফাজ আহমেদ। তার অসাধারণ নৈপুণ্যে লাল-সবুজরা ম্যাচটাও জিতেছিল তিন গোলে!

ভিডিও ক্লিপে আলফাজের দৃষ্টিনন্দন গোল দুটি দেখে প্রশংসামূলক মন্তব্য ছিল চারদিকে। পুরনো ক্লিপ নিয়ে আলোচনা এ জন্যই যে ২১ বছর পর আবারও মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে সাফল্য বুভুক্ষু বাংলাদেশ। যাদের জন্য আলফাজদের সেই পারফরম্যান্স অবশ্যই প্রেরণার। সাবেক স্ট্রাইকার আলফাজ আহমেদও রোমাঞ্চ অনুভব করেন সেই গোলগুলোর কথা ভাবলে।

দুদিন পর ২৯ মার্চ সিলেটে আরও একটি ফিফা প্রীতি ম্যাচে প্রতিপক্ষ এই মঙ্গোলিয়া। আলফাজ চাইছেন আবারও এই দলটির বিপক্ষে কেউ দৃষ্টিনন্দন গোল করুক। ম্যাচ জিতে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাক।

২০০১ সালে সৌদি আরবের দাম্মামে অনুষ্ঠিত ওই বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের স্মৃতি আলফাজের মনে এখনও রয়ে গেছে। দারুণ পারফরম্যান্সে জোড়া গোল করে শুধু দলকেই তিনি জেতাননি, হয়েছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচও।

১২ ফেব্রুয়ারির সেই ম্যাচে প্রথম গোলটি এসেছিল ৪১ মিনিটে। তিন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে জাল কাঁপান আলফাজ।

৭৭ মিনিটে বাড়ে ব্যবধান। ডান প্রান্ত থেকে বল নিয়ে একজনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে দুরূহ কোণ দিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তিনি। ৭ মিনিট পর আরেক স্ট্রাইকার রোকনুজ্জামান কাঞ্চন তৃতীয় লক্ষ্যভেদ করে দলকে বড় ব্যবধানে জয় এনে দেন।

২১ বছর আগের মঙ্গোলিয়া ম্যাচ মনে করিয়ে দিতেই আলফাজের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে আনন্দের ঝিলিক, ‘আমার কাছে সেই ম্যাচটি এখনও স্মরণীয় হয়ে আছে। দুটি গোল করে দলকে জেতাতে সাহায্য করেছিলাম। এছাড়া ম্যাচ সেরা হয়ে পুরস্কার পেয়েছিলাম সিমেন্সের মোবাইল সেট। সেই সময় মোবাইল সেটটি পেয়ে অনেক ভালো লেগেছিল।’

মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে দুটি গোল নিয়ে বর্তমানে মোহামেডানের স্পোর্টিংয়ের সহকারী কোচের ভূমিকায় থাকা আলফাজ ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে, ‘তখন তো আমাদের সময় ব্যক্তিগত খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ছিল অন্যরকম। একজন খেলোয়াড় ম্যাচ বের করে নিয়ে আসতে পারতেন। মঙ্গোলিয়া তখন খারাপ দল ছিল না। আমরা ভালো খেলে জিতেছিলাম। ওদের বাধা পেরিয়েই গোল দুটি করেছিলাম।’

জাতীয় ফুটবল দলে স্ট্রাইকার হিসেবে ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে খেলেছেন আলফাজ। ২০০০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। ১৯৯৬-তে চার জাতি, ১৯৯৯ সাফ গেমস ও ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের শিরোপা জয়ী অন্যতম সদস্যও ছিলেন তিনি। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ঘরোয়া ফুটবলে মোহামেডান, আবাহনী ও মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য দলে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে তার।

২১ বছর পর আবারও একই প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হওয়ায় এই ম্যাচ ঘিরে আলফাজের প্রত্যাশা কম নয়, ‘আমাদের সময় কোয়ালিটি ফুটবলার ছিল। এখন অনেকাংশে তা কমে গেছে। স্কিলফুল খেলোয়াড় নেই বললেই চলে, সংকট চলছে। তারপরেও আমি আশাবাদী। দলের শক্তির দিকে তাকালে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে আরও একটি জয়ের রেকর্ড হওয়া উচিত। জামাল-সুমন-জীবনদের ম্যাচ জেতার মতো সামর্থ্য আছে।’

নিজেদের পরিচিত পরিবেশে বাংলাদেশ যে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে এগিয়ে থাকবে, তা নিয়ে সংশয় নেই জাতীয় দলের সাবেক এই তারকা স্ট্রাইকারের। তবে ম্যাচ জিততে হলে যে গোল করতে হবে, সেটি মনে করিয়ে দিলেন আবার, ‘মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে জিততে হলে আমাদের গোল পেতে হবে। আমি চাইবো ২১ বছর আগে তিন গোলে জিতেছিলাম, এবারও তাই হোক। এর জন্য সবাইকে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করতে হবে।’

আলফাজের মতো ক্রীড়াপ্রেমীদেরও প্রত্যাশা, অনেক দিন পর দেশের মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচ জিতে স্মরণীয় মুহূর্ত তৈরি করুক জামাল ভূঁইয়ারা।