জার্সিতে বসনিয়ান বাবার আবাহনী-প্রেম, ছেলে করলেন স্বপ্নপূরণ

বসনিয়া-হার্জেগোভিনা থেকে এসে নবাগত স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের হয়ে খেলছেন নেদো তুর্কোভিচ। ছেলের খেলার সূত্রে বাবা মুরিজ তুর্কোভিচও রাজধানী সারায়েভো থেকে টেলিভিশনে চোখ রাখছেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে। বিশেষ করে, প্রিমিয়ার লিগের শুরুতে আবাহনী আলাদা নজর কেড়েছে। কারণটা একটু অদ্ভুত। আবাহনীর জার্সি আকাশি-নীল। এ রঙা জার্সির প্রতি টান থাকায় ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের খেলার প্রেমে পড়ে যান মুরিজ। ছেলেকে বলতেন আবাহনীতে খেলার কথা। মৌসুমের মাঝপথে নেদো সেই সুযোগটা পেয়ে যাওয়ায় পূরণ হয়েছে তার বাবার স্বপ্ন!

বাবার মতো ছেলে নেদোরও নীল জার্সি বেশ পছন্দের। ক্যারিয়ারের একটা সময় জেলিয়েজনিকার দলে খেলার কারণে এই রঙের প্রতি আলাদা টান অনুভব করেন ৩২ বছর বয়সী স্ট্রাইকার। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটির আগে থেকে বড় ভক্ত নেদোর বাবা। তাই আবাহনীর সঙ্গে জার্সির মিল খুঁজে পেয়ে মারিও লেমসের দল বেশ মনে ধরে তার।

৬৫ বছর বয়সী মুরিজ টিভিতে আবাহনীর খেলা দেখে ছেলেকে প্রায়ই বলতেন, ‘নীল জার্সিধারীদের হয়ে সুযোগ পেলে খেলতে পারো।’ কিন্তু নেদো বাবাকে বলতেন, ‘কাজটা সহজ নয়।’ ছোট দল (স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ) থেকে আবাহনীর মতো বড় দলে খেলা কতটা কঠিন, বোঝাতেন বাবাকে।

কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের মাঝপথে যে কাঙ্ক্ষিত সুযোগ চলে আসবে, তা ভাবেননি দীর্ঘদেহী স্ট্রাইকার। আকাশি-নীল জার্সিধারীদের কোচ লেমসের ফোন পেয়ে তো অবাকই হয়েছিলেন এই বসনিয়ান, ‘যখন লেমস বললো আবাহনীতে খেলবো কিনা এএফসি কাপের জন্য। প্রস্তাব শুনে আমি তো অবাক। এভাবে ডাক পাবো ভাবিনি। রাজিও হয়ে যাই। পরবর্তীতে বাবাকে বলতেই তিনিও বিস্মিত হয়েছেন। খুশিও হয়েছেন।’

ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার দোরিয়েল্তনের চোটের কারণে এএফসি কাপে একজন বেশি বিদেশি নিবন্ধন করেছে আবাহনী। যে কারণে নেদোর ভাগ্য খুলে গেছে। ১২ এপ্রিল মালদ্বীপের ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেলে নিজেকে নিংড়ে দিতে চান ৩২ বছর বয়সী ফুটবলার, ‘আবাহনী বাংলাদেশের অন্যতম বড় ক্লাব। এই দলের হয়ে খেলতে পেরে আমি অনেক খুশি। দোরিয়েল্তনের চোট হয়তো আমার ভাগ্য খুলে দিয়েছে। এখন ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেলে দলকে জেতানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আর গোল করতে পারলে তো অন্যরকম ভালো লাগবে।’

প্রিমিয়ার লিগে স্বাধীনতার হয়ে ৪ গোল করা নেদো মনে করছেন, ১২ এপ্রিল আবাহনীর জয় হবে। দানিয়েল কলিনদ্রেস-রাফায়েলদের মতো উঁচুমানের বিদেশিদের সঙ্গে স্থানীয়দের সমন্বয়ে আবাহনী শক্তিশালী দল। তাই নিজেদের মাঠে জয়ের বিকল্প দেখছেন না এই স্ট্রাইকার।

আকাশি-নীলের সঙ্গী হয়ে এখন এএফসি কাপে মাঠেই নিজের সেরাটা দেওয়ার অপেক্ষায় নেদো। অবদান রাখতে রাখতে চান গোল করে। তাতে তার ৬৫ বছর বয়সী বাবার ঠোঁটের হাসি আরও চওড়া হবে নিশ্চিত!