ইউরোপসেরার লড়াই

জমজমাট ফাইনালে উত্তেজনার ঢেউ

২০১৮ সালের ফাইনাল সামনে আসতে বাধ্য! কিয়েভের শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুল। ‘ভঙ্গুর’ লিভারপুল সেবারই নতুন দিনের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু মাদ্রিদের ক্লাবের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় অল রেডদের। পরের বছর চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা ঠিকই ঘরে তুলেছিল ইংলিশ ক্লাবটি। কিন্তু কিয়েভের ওই হার কাঁটা হয়ে আছে এখনও। চার বছর পর সেই কাঁটা তুলে প্রতিশোধের সুযোগ লিভারপুলের সামনে। সেই চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে যে আবারও রিয়ালের মুখোমুখি ইয়ুর্গেন ক্লপের দল।

বাংলাদেশ সময় আজ (শনিবার) দিবাগত রাত ১টায় প্যারিসের স্তাদে ডু ফ্রান্সে জমজমাট ফাইনালে ‍নামতে যাচ্ছে রিয়াল ও লিভারপুল। সরাসরি দেখা যাবে সনি টেন-২ চ্যানেলে।  আক্রমণাত্মক ফুটবল দুই ক্লাবের মূল তত্ত্ব হওয়ায় উত্তেজনার ঢেউ তুলছে ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে। গোছানো আক্রমণে প্রতিপক্ষের রক্ষণ তছতছ করে দিতে জুড়ি নেই দল দুটির। তাছাড়া এবারের মৌসুমে লিভারপুল ও রিয়ালের যে পারফরম্যান্স, তাতে বারুদে এক ফাইনালই অপেক্ষা করছে প্যারিসে।

মাদ্রিদের অভিজাতরা চ্যাম্পিয়নস লিগের রেকর্ড শিরোপা জয়ী। ১৩বার তারা উৎসব করেছে। বিপরীতে লিভারপুলের ঘরে ইউরোপসেরার ট্রফি গেছে ছয়বার। তবে সংখ্যার বিচার দিয়ে বর্তমান অবস্থান বোঝানো যাবে না। বরং এবারের মৌসুমে লিভারপুলের পারফরম্যান্স আমলে নিলে তাদেরকেই ফেভারিট ধরতে হবে। ‍গ্রুপ পর্বে ছয় ম্যাচের সবক’টিতে জয়। ফাইনালের পথে মাত্র একটি ম্যাচেই তাদের হার আছে। ইন্টার মিলানের বিপক্ষে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে।

চ্যাম্পিয়নস লিগ বাদ দিয়ে অন্য প্রতিযোগিতাতেও যদি তাকানো যায়, সেখানেও সুখস্মৃতিতে ভরপুর। ইংলিশ লিগ কাপ ও এফএ কাপ জিতে এক মৌসুমে চার শিরোপা জেতার রেকর্ড গড়ার সুযোগ ছিল ক্লপের দলের। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা একটুর জন্য ফকসে যাওয়ায় সেটি হয়নি। ‍মৌসুমের শেষ দিনে এসে মাত্র ১ পয়েন্টের জন্য ম্যানচেস্টার সিটির কাছে লিগ শিরোপা হারিয়েছে অল রেডস। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে সেই দুঃখে প্রলেপ দিতে চায় লিভারপুল।

রিয়ালকে পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। লিভারপুলের মতো মসৃণ ছিল না তাদের পথ। তবে যেভাবে ফাইনালে পৌঁছেছে, তাতে শিরোপার দাবিদার তারাই! বিদায়ের বিষাদ সুর যখন ‍বাজতে শুরু করেছে সমর্থকদের মনে, ঠিক তখনই অবিশ্বাস্য জয়ে নিজেদের নতুন করে জানান দিয়েছে মাদ্রিদের অভিজাতরা। এক ম্যাচ নয়, নকআউট পর্বের তিন ম্যাচেই অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছে তারা।

শুরুটা শেষ ষোলোতে প্যারিস সেন্ত জার্মেই বিপক্ষে লড়াই দিয়ে। প্রথম লেগ ১-০ গোলে হারের পর বার্নাব্যুর ফিরতি লেগে তারা পিছিয়ে পড়লে ২-০ গোলের লিড পায় পিএসজি। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩-২ অগ্রগামিতায় কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে। শেষ আটের লড়াইয়েও চেলসির বিপক্ষে পায় রোমাঞ্চকর জয়। আর সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ফুটবল ইতিহাসেই আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। শেষ মুহূর্তে ২ গোল দিয়ে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যাওয়া এবং সেখানে জয় পেয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে মাদ্রিদের ক্লাবটি। তাছাড়া আছে লা লিগার শিরোপা জেতার আনন্দ।

হারের আগে হার না মেনে নেওয়ার অসম্ভব মানসিক শক্তি আছে এই রিয়াল মাদ্রিদের। তাছাড়া আছে ১৩ বার শিরোপা জেতার আত্মবিশ্বাস। যার শেষ সাতবার ফাইনালে উঠেই জিতেছে শিরোপা। তবে এটাও মানতে হবে, ক্লপের লিভারপুলের মতো মানসিক শক্তি বর্তমান ফুটবলে কম দলেরই আছে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার সামর্থ্য তাদের পারফরম্যান্সকে করে আরও শক্তিশালী।

অর্থাৎ, মানসিকভাবে প্রচণ্ড দৃঢ় দুই দলের উপভোগ্য ফাইনাল মঞ্চায়িত হতে যাচ্ছে প্যারিসে। ফুটবলপ্রেমীরা তৈরি তো?