পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে, ফুটবলাঙ্গনে আনন্দের দোলা

২০১২ সাল থেকে প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত শহর গোপালগঞ্জে নিজেদের ভেন্যু করে আসছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। তাদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে অন্য ক্লাবও গাঁটছড়া বাঁধে। এবার যেমন উত্তর বারিধারা আছে। সেই সূত্রে প্রিমিয়ার লিগে প্রতিটি ক্লাবকে অন্তত দুইবার করে সেখানে গিয়ে খেলতে হচ্ছে। কিন্তু ‍যাওয়ার পথে মাওয়া ফেরিঘাট কিংবা লঞ্চ পারাপারের যন্ত্রণা পোহাতে হয়। সুখবর হলো, আগামী ২৫ জুন থেকে আর ক্লাবগুলোকে সেই যন্ত্রণা পোহাতে হবে না। স্বপ্নের পদ্মা সেতু যে চালু হচ্ছে!

পদ্মা সেতু চালুর মাহেন্দ্রক্ষণের কাছাকাছি এসে দেশবাসী যেমন আনন্দিত, তেমনি ফুটবলাঙ্গনেরও সবাই উচ্ছ্বসিত। যেখানে মাওয়া ঘাটে ফেরি কিংবা লঞ্চে অনেক সময় লাগতো, ভোগান্তি পোহাতে হতো, সেখানে এখন সেতুর ওপর দিয়ে অনায়াসে ভেন্যুতে পৌঁছানো যাবে। এই আনন্দ এখন সবার মাঝে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম ১০ বছর ধরে নিয়মিত ফেরি বা লঞ্চে মাওয়া পাড়ি দিয়ে দল নিয়ে গোপালগঞ্জে খেলতে যান। অন্যদের চেয়ে তার দলেরই সেখানে বেশি খেলা থাকে, কারণ দলটির হোম ভেন্যু গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়াম। ফেরির কারণে অনেক সময় ক্লাবগুলো খেলতে আপত্তি করে বসে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেছেন, ‘দেড় ঘণ্টা লাগে ফেরি পার হতে। তবে ফেরিতে উঠতে কত সময় লাগে, তা বলা কঠিন। সকাল ৭টায় গিয়ে আমি ১১টা সিরিয়াল পেয়েছিলাম। তাও অনুরোধের পর। বাস্তবতা মেনে নিতে হয়। এখন তো লঞ্চে পার হই, তাও ভোগান্তি কম নয়। সকালে রওনা দিয়ে গিয়ে সেদিনই আবার অনুশীলন করা যায় না।’

পদ্মা সেতু চালু হওয়াতে সেই কষ্ট লাঘব হতে বেশি দিন নেই। আরিফুলের অবয়বে তাই খুশির ঝিলিক, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে আমরা অল্প সময়ে পার হবো। এটা তো অনেক বড় সুবিধা। সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগবে গোপালগঞ্জ যেতে। ইচ্ছা করলে দিনে গিয়ে দিনে আসা যাবে। ভেন্যু নিয়ে আর কোনও আপত্তি থাকবে না। এটা দেশ ও জাতির জন্য কত বড় উপকার হয়েছে, তা বলে বোঝানো যাবে না।’

আবাহনীর লিমিটেডের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাশ রুপু নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সুখকর কিছু শোনাতে পারেননি। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর পুরো দৃশ্যপটই পাল্টে যাওয়ার আশার তার, ‘যখন যাই ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হয়- কখন পাবো। লঞ্চে যেতে হয় অনেক সময়। না পৌঁছানো পর্যন্ত টেনশন কাজ করে। আবহাওয়া খারাপ থাকলে আরও টেনশন। খেলা শেষ হলে ফিরে আসার পরিকল্পনা থাকে। মালপত্রসহ ফেরি থেকে ওঠা-নামা করাটা বড় ভোগান্তি। শারীরিক ধকল তো বাদই দিলাম। এখন পদ্মা চালু হচ্ছে। আমাদের জন্য বড় আশীর্বাদ। এখন ১০ মিনিটে সেতু পার হবো।’

বসুন্ধরা কিংসের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর বি এ জোবায়ের নিপুর দল নিয়ে গোপালগঞ্জ খেলতে যাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা কম নয়। তার ভাষায়, ‘খুলনা বা গোপালগঞ্জে যেখানে যাই না কেন, এক দিন আগে যেতে হয়। গত বছর খুলনায় ছিলাম, থাকার সুবিধার জন্য। সেখান থেকে গোপালগঞ্জে খেলতে হয়েছে। সেখানে (খুলনাতে) যেতে লেগেছে ১০ ঘণ্টা। একটানা বাসে থাকা খুব ক্লান্তিকর। এখন সেতু হয়েছে, সোনায় সোহাগা। কেউ ইচ্ছা করলে দিনে গিয়ে খেলে ওই দিনই ফিরতে পারবে। এটা সবার জন্য ভালো হয়েছে।’

মাঠে যারা খেলেন তাদের ধকল আরও বেশি। পথে অনেক ঝক্কি-ঝামেলার পর খেলতে হয়। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আবাহনীর অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার ইমন মাহমুদের বক্তব্য, ‘ফেরিতে বা লঞ্চে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। শারীরিক ও মানসিক ধকল তো আছেই। এখন তা হতে হবে না। পদ্মা সেতু দিয়ে আমরা সরাসরি ভেন্যুতে চলে যাবো। এতে করে কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে। এছাড়া আমার বাড়ি শরীয়তপুরে। এই সেতু আমাদের কতটুকু উপকৃত করবে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।’