স্কিল-অভিজ্ঞতায় এগিয়ে মালদ্বীপ আর বাংলাদেশ?

আর মাত্র এক দিন। কাল মঙ্গলবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনাতে হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-মালদ্বীপ মহারণ। মহারণ বলার কারণ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্লে অফ পর্বের লড়াইটি দুই দলের জন্য ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ। যে দল জিতবে বাছাইপর্বের পরের ধাপে ছয়টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। কালকের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি কেউই হারতে চাইবে না। কিন্তু শক্তিমত্তার বিচারে কেউ না কেউ এগিয়ে থাকবে। 

দুই দলের অতীত রেকর্ড ও খেলোয়াড়দের সক্ষমতা দেখলে মালদ্বীপকে কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখতে হবে। লাল-সবুজ দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স আবার বলছে অন্য কথা। এই সময়ে হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যদের সাফ অঞ্চল কিংবা কাছাকাছি যে কোনও দলকে হারানোর, রুখে দেওয়ার সামর্থ্য প্রতিপক্ষের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা দিয়েছে।

দুই দলের ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়েও পার্থক্য অনেক। মালদ্বীপ রয়েছে ১৫৫তম স্থানে। আর বাংলাদেশ ১৮৯। তবে ৩৪ ধাপের পার্থক্য থাকলেও আগের দুটি ম্যাচে সেই ছাপ ছিল না। ভারতের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ কিংবা সবশেষ ১২ অক্টোবরের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচের ফলই সব বলে দিচ্ছে। দ্বীপদেশটির সঙ্গে চোখে চোখ রেখে খেলেছে লাল-সবুজ দল। বেঙ্গালুরুতে তো ৩-১ গোলেও উড়িয়ে দিয়েছে। আর মালেতে গোল খেয়ে তা শোধ দিতেও সময় লাগেনি। সাধারণত গোল খেয়ে ম্যাচে ফেরার রেকর্ড বাংলাদেশের কমই। তাও আবার শেষ মুহূর্তে। সাফ ও বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সেই বাধা অতিক্রম করে এসেছে জামাল ভূঁইয়ারা। এবার নিজেদের মাঠে দেখানোর পালা।

দুই দলের দক্ষতার কথা উঠলেও মালদ্বীপ এগিয়ে থাকবে। ব্যক্তিগত স্কিল দেখার মতো, পাসিং ফুটবলটা তারা ভালোই জানে। অধিনায়ক আলী ফাসির কিংবা হামজা মোহাম্মদের মতো খেলোয়াড়রা যে কোনও সময় ম্যাচ বের করে নিতে পারেন। অভিজ্ঞতায় এগিয়ে তারা। অ্যাটাকিং থার্ডেও তাদের অনেক বেশি খেলোয়াড়। তাতে গোলের ‍অপশন তৈরি হয় বেশি।

স্কিল-অভিজ্ঞতায় এগিয়ে মালদ্বীপ।আর একটু তথ্য ঘাটলে দেখা যাচ্ছে মালদ্বীপের অধিনায়ক আলী ফাসির দলটির সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। ৩৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের গোল সংখ্যা ১৩টি। যা এই দলটির মধ্যে সর্বোচ্চ। এরপরই রয়েছেন আরেক ফরোয়ার্ড নাইজ হাসান। তার গোল সংখ্যা ৪০ ম্যাচে ১০টি। এছাড়া মিডফিল্ডার হামজা মোহাম্মদ ৪০ ম্যাচে ৬ ও মিডফিল্ডার ইব্রাহিম মাহুদে ৩৪ ম্যাচে ৫ গোল করে নিজেদের সরব উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন।

অন্য দিকে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিকটি হলো তারা এখন বেশ ফুরফুরে মেজাজে। মালের মাঠ থেকে এক পয়েন্ট নিয়ে আসতে পারাই এর কারণ। সবচেয়ে বড় কথা একটি দল হয়ে খেলতে পারছে। শেষ কয়েক মাসের পারফরম্যান্স দেখলে বোঝা যাবে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে প্রতিপক্ষ যে কোনও দলকে রুখে দিতে পারে, জিততেও পারে। গোল খেয়েও যে ফিরিয়ে আসা যায় সেটা ভারতের সাফের পর আবার দেখা গেছে।

ভাবনার বিষয়টি হলো বাংলাদেশ দলে স্কিলডফুল খেলোয়াড় কম। রাকিব-ফাহিম একটু আলাদা। এছাড়া দুই অঙ্কের গোলসংখ্যার তালিকায় কারও নাম নেই! তপু বর্মণ ছিলেন গোল সংখ্যা ও অভিজ্ঞতায় এগিয়ে। তিনিও মদকাণ্ডে এবার দলে নেই। তার সঙ্গে হালের সেনসেশন শেখ মোরসালিনেরও একই অবস্থা। অথচ ১৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড মাত্র সাত ম্যাচে তিন গোলে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন। দলে শুধু উইঙ্গার মোহাম্মদ ইব্রাহিমের গোলসংখ্যা চারটি। যদিও তার একাদশে নামা হয়ে ওঠে না অনেক দিন। এছাড়া রাকিব হোসেন ও রবিউল হাসানের গোলসংখ্যা তিনটি। এরপরেই দুই গোল নিয়ে আছেন মতিন মিয়া।

তার পরেও মানসিকতাই বাংলাদেশের পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে। গোলসংখ্যা কিংবা স্কিলের দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকলেও প্রতি আক্রমণ ও আগ্রাসী ফুটবল খেলে বাংলাদেশ প্রায় সমান তালে মালদ্বীপের বিপক্ষে লড়াই করেছে। শেষ দুই ম্যাচের ফলও দারুণ।

তাই নিজেদের মাঠে কাবরেরার ট্যাকটিক্যাল ছকে খেলতে পারলে বাংলাদেশের জয় মালদ্বীপ রুখবে কী করে?