‘মনে মুন্না’

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৫ সালের এই দিনে দেশের ফুটবল মহাকাশের এক নক্ষত্রকে হারানোর দিন। এই দিনে না ফেরার দেশে চলে যান কিংবদন্তি ফুটবলার মোনেম মুন্না। আজ সোমবার তার ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। কিডনি জটিলতার কারণে পরপারে পাড়ি জমান তিনি। এই দিনে তাকে বিশেষভাবে স্মরণ করেছে ভারতীয় ক্লাব ইস্ট বেঙ্গল এফসি।

ফেসবুকের ভেরিফায়েড পেজে ইস্ট বেঙ্গল মুন্নার হাস্যোজ্জ্বল গ্র্যাফিকাল ছবি দিয়ে লিখেছে, ‘মনে মুন্না’। ক্যাপশনে তারা লিখেছে, ‘আমাদের সাবেক ডিফেন্ডার মোনেম মুন্নাকে তার ১৯তম মৃত্যু বার্ষিকীতে স্মরণ করছি। প্রায় সময় ডাকা হতো ‘কিং-ব্যাক’, সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক তিন মৌসুমে (১৯৯১-৯২, ১৯৯৩-৯৪, ১৯৯৫-৯৬) আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। ভক্তদের খুবই প্রিয়ভাজন ছিলেন।’

মুন্না ১৯৬৮ সালের ৯ জুন  নারায়ণগঞ্জের বন্দরে জন্মেছিলেন। ১৯৮২ সালে দ্বিতীয় বিভাগের দল শান্তিনগর দিয়ে তার ফুটবলে যাত্রা শুরু। মুক্তিযোদ্ধার হয়ে ১৯৮৬ সালে ব্রাদার্সে এক মৌসুম  খেলেই আবাহনীতে যোগ দেন। এর পর আকাশি-নীল জার্সিতেই ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছিলেন। এর মধ্যে আবাহনীকে পাঁচবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও তিনটি ফেডারেশন কাপ জেতানোর রেকর্ড আছে তার।

১৯৯১ সালে মুন্না আকাশচুম্বী পারিশ্রমিক পেয়েও আবাহনী ছাড়েননি। ২০ লাখ টাকায় থেকে যান প্রিয় ক্লাবেই। আবাহনীর প্রতি ছিল তার অসীম ভালোবাসা। আবাহনী ছাড়াও জাতীয় দলে ছিল তার সমান পদচারণা। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ প্রথম ট্রফি জেতে মুন্নার হাত ধরেই। ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে চার জাতি ফুটবলে জার্মান কোচ অটো ফিস্টারের অধীনে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ফিস্টার মুন্নার পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে তখন তো বলেই দিয়েছিলেন, ‘মুন্না ভুলবশত বাংলাদেশ জন্মগ্রহণ করেছে।’

শুধু দেশেই জনপ্রিয় ছিলেন না মুন্না। দেশের বাইরেও সুনাম অর্জন করেছিলেন। তখন ভারতের কলকাতায় ফুটবল ভীষণ জনপ্রিয় ছিল। সেখানকার জনপ্রিয় ক্লাব ইস্ট বেঙ্গলে আমন্ত্রণ পেয়ে মুন্না সুনামের সঙ্গে খেলেছেন। তখনকার সেই ক্লাবের কোচ নাইমুদ্দিন তো বাংলাদেশে কাজ করতে এসে মুন্নার উদহারণই টেনেছেন বারবার। সেই ক্লাবের বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম সেরা ছিলেন মুন্নাই।

একই ক্লাবের নারী দলের হয়ে খেলছেন জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড সানজিদা আক্তার। তিন ম্যাচে এক গোলও করেছেন। মুন্নার ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন তিনিও, ‘মুন্না ভুলবশত বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে’- কথাটি বলেছিলেন জার্মান কোচ অটো ফিস্টার। যাকে ঘিরে এই ভারি কথাটি বলেছিলেন তিনি মোনেম মুন্না। বাংলাদেশের মানুষ যাকে "কিং ব্যাক" নামে চেনে। আজ উনার মৃত্যুবার্ষিকী। মাত্র ২০ বছর বয়সে জাতীয় দলে অভিষেক হয়ে সাফ রানার্স আপ সহ দেশের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা অর্জন করেছিলেন। রেকর্ড ব্রেকিং ট্রান্সফার, ফুটবল মাঠ থেকে বিজ্ঞাপন, দেশের বাইরের ক্লাবে এসে সুখ্যাতি অর্জন সবই করেছেন তিনি। অল্পদিনের মধ্যেই এতকিছু অর্জন করে অসুস্থতাজনিত কারনে মাত্র ৩১ বছর বয়সে ফুটবলকে বিদায় জানান এবং ৩৮ বছর বয়সে দুনিয়াকে বিদায় জানান। খুব দ্রুত চলে যাবেন বলেই হয়তো সুখ্যাতি, জনপ্রিয়তা, ট্রফি সহ সবকিছু অর্জন করতে বড্ড তাড়াহুড়ো ছিলো উনার।’

মুন্নার স্মৃতি ধরে রাখার তাগাদা দিলেন সানজিদা, ‘ইষ্ট বেঙ্গল ক্লাবে এসে যখন উনার ছবি দেখেছিলাম, তখন খুব গর্বিত হয়েছি। আমার অগ্রজ, আমাদের হিরো, তিনি একান্তই আমাদের। দেশের এরকম সূর্যসন্তানদের স্মৃতি যথাযথভাবে ধরে রাখা এবং অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যবস্থা থাকা উচিত বলে মনে করি। পাইওনিয়ারে শান্তিনগর ক্লাবের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা এই কিংবদন্তি হয়তো কিছুটা হলেও এতে শান্তি পাবেন। অগ্রজদেরকে সম্মানিত করা এবং স্মরণ করার রীতি থেকে আমরা সরে গেলে, অদূর ভবিষ্যতে আমরাও পরবর্তী প্রজন্মের নিকট কিছু আশা করতে পারি না। আল্লাহ তায়ালা, উনাকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন।’