‘মেয়েদের নিয়ে কেউই ঝুঁকি নিতে চায় না’

প্রায় পাঁচ বছর আগে পেশাদার ফুটবলে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে সিটি এফসির হেড কোচ হয়ে চারদিকে আলোড়ন তুলেছিলেন মিরোনা। দেশের ফুটবল ইতিহাসে ছেলেদের দলের প্রথম নারী কোচ হয়ে ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে  ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেন জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার। এরপর তার পথ চলা যতটা মসৃণ হওয়ার কথা ছিল ঠিকমতো ততটা হয়নি। সিটি এফসির পর আর কোনও পুরুষ দল কিংবা ওপরের দিকে কোচিং করানোর সুযোগ আসেনি মিরোনার সামনে। এ নিয়ে কিছুটা হতাশা কাজ করে বাগেরহাট থেকে উঠে আসা কোচের। বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কোচ হয়ে বয়সভিত্তিক নারী দলের সহকারী কোচ হয়ে কাজ করছেন।

২০১৯ সালে মিরোনার ডাগ আউটে দাঁড়ানোর স্মৃতি  এখনও জ্বলজ্বলে। সেসময় ক্লাবে কোনও ছেলে কিংবা মেয়ে কোচের মধ্যে কোনও বৈষম্য দেখেননি। তাই পুরুষ দলের কোচ হয়ে কাজ করতে পেরেছিলেন। মিরোনা তাই নেপাল থেকে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘সিটি এফসির কোচ হয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। সার্ভিসেস দল হওয়ায় তারা ছেলে বা মেয়ে হিসেবে আলাদা করে দেখেনি। তারা সম্মান দেখিয়েছে। আমিও আমার মতো চেষ্টা করে গেছি। ছেলেদের কোচের মতোই সমান তালে কাজ করেছি। কতটুকু কী করতে পেরেছি তা তারাই ভালো বলতে পারবে।’

এরপরই এলো কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি মিরোনা। করোনা ভাইরাসের মতো কঠিন মহামারি এলো। স্থবির হলো অনেক কিছুই। খেলাও বন্ধ হলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই সেই ক্লাবটিও আর থাকলো না। মিরোনারও আর ডাগ আউটে দাঁড়ানো হয়নি। বাফুফেতে নারী দলের হয়ে সহকারী কোচের চাকরি পেতে তাই লুফে নিয়েছেন।

দেশের ফুটবল ইতিহাসে ছেলেদের দলের প্রথম নারী কোচ ছিলেন মিরোনা

তবে এ নিয়ে মিরোনার আফসোস কম নয়, ‘করোনার পর সেই ক্লাবটি আর থাকেনি। আমারও কোচিং করানো হয়নি। বাফুফেতে সুযোগ চলে আসে চাকরি করার। এখনও সেখানেই আছি। তবে এখানে মেয়েদের হয়ে কাজ করছি। ছেলেদের হয়ে কাজ করার সুযোগ আসেনি। আসলে আমাদের মেয়েদের নিয়ে কেউই ঝুঁকি নিতে চাইছে না। আমরা কতোটুকু কী করতে পারি তা নিয়ে সবাই শঙ্কায় থাকে। তাই কেউই আমাদেরকে নিয়ে বড় রকমের ঝুঁকি নিতে চায় না। তাই আমারও আর ছেলেদের দলকে কোচিং করানোর সুযোগ হয়নি।’

একজন ছেলে এই জায়গায় এসে মেয়েদের তুলনায় অগ্রাধিকার পায়। সেটা তুলে ধরে মিরোনার আক্ষেপ ঝড়ে পড়লো যেন, ‘আজ আমার জায়গায় একজন ছেলে থাকলে হয়তো সেই সুযোগটা পেতো। তারা পেয়েও থাকে। যা আমাদের মেয়েদের জন্য কঠিন। যারা আমাদের ওপর দায়িত্ব দেবে তাদের চিন্তাভাবনা থাকে— আমরা আদৌ ছেলেদের মতো কোচিং করাতে পারবো কিনা। আমরা যে ছেলেদের সঙ্গে সমান তালে অনেক কিছু পারি তা নীতিনির্ধারকরা বুঝতে চান না। মনে করে একজন মেয়ে কোচ সে কতদূর যাবে!’

এরপরই উদাহরণ দিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলেন মিরোনা, ‘ধরেন, যদি প্রিমিয়ার লিগে সহকারী কোচ হয়ে কাজ করার সুযোগ পেতাম তাহলে নিজেকে শানিত করার সুযোগ থাকতো। একসময় আরও বড় জায়গায় যাওয়ার সুযোগ হতো। তখন নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগও হতো। আপনি যদি দায়িত্ব না পান তাহলে কাজ দেখাবেন কী করে।’

তবে আবার কঠিন বাস্তবতা মেনে এএফসি লাইসেন্সের অপেক্ষায় থাকা ৩০ বছর বয়সী কোচের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘এছাড়া আমাদের নিজেদেরও সুযোগ খুঁজে সেভাবে প্রমাণ করে দেখাতে হবে যে আমরাও পারি। সেই পথটা তো কাউকে না কাউকে তো দেখাতে হবে। হয়তো একসময় সেই দিন আসবে। ছেলেদের কোচ হয়ে মেয়েরা দায়িত্ব পালন করছেন।’